--- বিজ্ঞাপন ---

পাকিস্তানে একদিকে হাহাকার, অন্য দিকে বিদেশি ব্রান্ডের কফি খাওয়ার লাইন

0

পাকিস্তানে একদিকে চলছে হাহাকার, অন্য দিকে চলছে উচ্চবিত্তের বিলাসিতা। যেখানে প্রতি কেজি মুরগির দাম ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, হাড় ছাড়া মাংসের দাম ১১০০ থেকে ১২০০ টাকা, প্রতি লিটার দুধ ২২০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা সেখানে এক শ্রেনীর বিত্তবানি এক কাপ কফি খাচ্ছে ৪৫০ থেকে ৮০০ টাকা। বিদেশী ব্রান্ডের কফির জন্য লম্বা লাইন নিয়ে এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বয়ে যাচ্ছে সমালোচনার ঝড়। কানাডার নামি কফি প্রস্তুতকারী সংস্থা টিম হর্টন এর কপির দোকানে লম্বা লাইন নিয়ে পাকিস্তানের সাধারন মানুষের মাঝে দেখা দিয়েছে ব্যাপক ক্ষোভ।

আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, দুধ কিনতে হাহাকার পড়েছে পাকিস্তানে। প্যাকেটজাত নয়, এমন দুধের প্রতি লিটারের দাম এখন ২১০ টাকা। অর্থাৎ ভারতে দুধের এখন যা দাম, তার প্রায় পাঁচ গুণ। অর্থসঙ্কটে ঝুঁকে পড়া পাকিস্তানে অন্যান্য জিনিসপত্রের দাম যেখানে আকাশছোঁয়া, সেখানে শিশুদের খাওয়ার জন্য এই মহার্ঘ দুধ কিনতেও নাকাল হচ্ছেন আম নাগরিকেরা। সেই পাকিস্তানেই এক ঝকঝকে বিদেশি কফির ক্যাফেটেরিয়ায় বাইরে দামি কফি খেতে লাইন দিতে দেখা গেল দেশের উচ্চবিত্তদের।

দিন কয়েক আগেই সরকারি ভর্তুকি দেওয়া আটা-ময়দা কিনতে লাইনে দাঁড়িয়ে ধাক্কাধাক্কিতে জখম হয়েছিলেন পাকিস্তানের মানুষ। সেই দেশে বিদেশি কফি খাওয়ার এই লাইন দেখে তাই প্রশ্ন উঠেছে— এটা ওই একই পাকিস্তান তো? না কি এই পাকিস্তানে আর্থিক সঙ্কট বলে কিছু নেই। মূল্যবৃদ্ধিতে এই পাকিস্তানের কিছু যায়-আসে না! জিনিসপত্রের দাম বাড়ুক বা কমুক এই পাকিস্তান তা নিয়ে চিন্তিত নয়, কারণ দেশ সঙ্কটাপন্ন হলেও এই পাকিস্তানের ভাঁড়ারে অঢেল অর্থ মজুত আছে!

গত কয়েক মাস ধরেই আর্থিক সঙ্কটে ন্যুব্জপ্রায় পাকিস্তান। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। তার সঙ্গে প্রতিদিনই অন্তত ৩০-৪০টাকা করে লাফ দিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে খাবারের দাম। মঙ্গলবার যেমন মুরগির মাংসের দাম প্রায় ১৩০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজিতে হয়েছে ৭০০-৭৮০ টাকা। হাড় ছাড়া মাংসের দাম আরও চড়া। মঙ্গলবার ১০০০-১১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। দুধের দামও দু’দিনে লিটারে বেড়েছে ৩০ টাকা তবে পাকিস্তানের ডেয়ারি ব্যবসায়ীদের সংগঠন জানিয়েছে, দুধ বিক্রেতা হোলসেলাররা যদি দাম না কমান তবে দুধের দাম বুধবার বেড়ে প্রতি লিটারে ২২০ টাকা হতে পারে। এমন যখন পরিস্থিতি তখনই প্রকাশ্যে এসেছে সেই ছবি। সেখানে দেখা যাচ্ছে লাহোরে সদ্য খোলা একটি বিদেশ ব্র্যান্ডের ক্যাফেটেরিয়ার আউটলেটে কফি খেতে রাস্তা ছাড়িয়ে লাইন পৌঁছে গিয়েছে পাশের তিন-চারটি বহুতল পেরিয়ে। ক্যাফেটেরিয়ার ভিতরে চূড়ান্ত ব্যস্ততা সুগন্ধী কফি তৈরির। যার ছোট এক এক কাপের দাম ৩৫০টাকা থেকে শুরু হয়ে ৬৫০ টাকা পর্যন্ত। বড় কাপের কফির দাম ৪৫০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত। কফির সুরভী অনুযায়ীই বদলে যায় দাম। তবে লাহোরবাসীরা সেই দামের পরোয়া করছেন না মোটেই।

গত ১০ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের লাহোরে প্রথম দোকান খুলেছে কানাডার নামি কফি প্রস্তুতকারী সংস্থা টিম হর্টন। সেই বিদেশি ক্যাফেটেরিয়ার লাহোরে তাদের দরজা খোলার পর থেকেই নাকি সেখানে পা ফেলার জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না। সর্বক্ষণই ক্যাফের বাইরে দেখা যাচ্ছে কফির জন্য অপেক্ষমান জনতার দীর্ঘ লাইন। যার ছবি ছড়িয়ে পড়েছে ইন্টারনেটে। এমনকি, একটি পরিসংখ্যানে এমনও জানা গিয়েছে যে, টিম হর্টন দুনিয়ার অন্যান্য শহরে নতুন দোকান খোলার পর প্রথম দিন যা ব্যবসা করেছিল, লাহোরের ওই ক্যাফের প্রথম দিনের ব্যবসা তাদের টেক্কা দিয়েছে। ওই ছবি আর এই পরিসংখ্যান প্রকাশ্যে আসতেই ক্ষোভ আর রাগের বহিঃপ্রকাশ দেখা গিয়েছে সমাজমাধ্যমে। বক্তব্য একটাই, দেশের অর্থনীতির এই হাল এই আকাশপাতাল বিভাজনের জন্যই। দেশের সম্পদ একটি অংশের কুক্ষিগত। তারা ধনী হয়েই চলেছে। অন্য অংশটি পরিস্থিতির পাকে দুর্ভোগ সহ্য করে চলেছে।

বিনা বেতনে কাজ করবেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ও তার দল

পাকিস্তানে মূল্যবৃদ্ধি আকাশ ছুঁয়েছে। বিদেশি মুদ্রার ভান্ডার প্রায় শেষ। নতুন করে ঋণ দিতে চাইছে না আইএমএফ-সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা। এই পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনৈতিক সঙ্কটের মোকবিলায় বিনা বেতনে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এবং তাঁর দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন)-এর মন্ত্রীরা। প্রবল অর্থসঙ্কটের মোকাবিলায় ইতিমধ্যেই সরকারি কর্মীদের বেতন কমানোর সিদ্ধান্ত নিলেছে পিএমএল-এন এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) জোট সরকার। এই পরিস্থিতিতে কেন মন্ত্রী এবং পার্লামেন্ট সদস্যদের বেতন ও ভাতায় কোপ পড়বে না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল সে দেশের প্রধান বিরোধী দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) এবং কয়েকটি সংবাদমাধ্যম। এই পরিস্থিতিতে বুধবার প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ-সহ পিএমএল(এন)-এক ১২ জন পূর্ণমন্ত্রী এবং ৩ জন প্রতিমন্ত্রী বিনা বেতনে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন। যদিও জোট সরকারের আর এক গুরুত্বপূর্ণ দল, আসিফ আলি জারদারি, বিলাবল ভুট্টোর পিপিপি এ বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি।#

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.