--- বিজ্ঞাপন ---

পাকিস্তান কি দেউলিয়া?

0

সিয়ালকোটে একটি সম্মেলনে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী তথা পাকিস্তান মুসলিম লিগ (এন) নেতা খাজা আসিফ জানিয়েছেন, লোকজন নিশ্চয়ই শুনেছেন যে, দেশ দেনার দায়ে ডুবেছে। আর্থিক সঙ্কট চরম হয়েছে। যা শুনেছেন, তা একেবারে ঠিক।

পাকিস্তানে এখন খাবার জল, আটা, ময়দার দামও লাগামছাড়া। সাধারণ মানুষের মাথায় হাত। এই পরিস্থিতিতে আসিফ জানালেন, পাকিস্তান ‘দেউলিয়া’ হওয়ার পথে হাঁটছে এমন নয়, ‘দেউলিয়া’ হয়ে গিয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা এক দেউলিয়া দেশের বাসিন্দা। লোকজন বলছে পাকিস্তান দেউলিয়া হওয়ার পথে হাঁটছে এবং সেখানে আর্থিক সঙ্কট চরমে। আসলে দেশ দেউলিয়া হয়ে গিয়েছে। এ বার আমাদের নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে।’’

স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তান (এসপিবি) এর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংক্রান্ত বিষয়ে সদ্য প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায় যে, চলতি ২০২৩ সালের ২০শে জানুয়ারিতে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে থাকা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল মাত্র ৩.৬৮ বিলিয়ন ডলার। যা কিনা বিগত কয়েক দশকের মধ্যে পাকিস্তানের সর্বনিম্ন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল এটি। মূলত চলতি জানুয়ারি মাসে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুটি ব্যাংকের ১ বিলিয়ন ডলারের ঋণ পরিশোধ করেছে। তার পাশাপাশি সর্বশেষ চীনের কমার্শিয়াল ব্যাংকের ঋনের ৫০০ মিলিয়ন ডলারের দায় মেটানোর পর পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করে।

এরই মধ্যে মার্কিন ডলারের বিপরীতে পাকিস্তানের রুপির রেকর্ড দরপতন হয়েছে। এতে করে ডলারের বিপরীতে পাকিস্তানি এই মুদ্রার দর দাঁড়িয়েছে ২৮৫ রুপিতে। পাকিস্তানি মুদ্রার দামে পতন থেমে নেই। আর্থিক সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ পেতে কার্যত মরিয়া হয়ে উঠেছে পাকিস্তান। তাই শর্ত মেনে মুদ্রা বিনিময় হার বা এক্সচেঞ্জ রেট শিথিল করেছে দেশটি। এরপরই পাকিস্তানি মুদ্রামানে ব্যাপক পতন চলছে। এর আগে পাকিস্তান সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী দেশটির মানি এক্সচেঞ্জ কোম্পানিগুলো ডলার থেকে রুপিতে বিনিময় হারের ওপরে সীমা তুলে নেয়। খোলা বাজারে পাকিস্তানি মুদ্রার দাম কমাতেই পরিকল্পনামাফিক এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।

জানা গেছে, পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের তথ্যমতে, দেশটির রিজার্ভ শেষবার গত ২০১৯ সালের ১৮ই জানুয়ারি রেকর্ড পরিমাণ ৬.৬৪ বিলিয়ন ডলারে নেমে গিয়েছিল। তবে গত ২০শে জানুয়ারির হিসেব অনুযায়ী দেশটির বানিজ্যিক ব্যাংকগুলোর হাতে মজুত থাকা নেট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রয়েছে ৫.৭৮ বিলিয়ন ডলার। সে হিসেবে পাকিস্তানের হাতে থাকা বৈদেশিক মুদ্রার মোট রিজার্ভের পরিমাণ প্রায় ৯.৪৬ বিলিয়ন ডলার।

এদিকে, আর্থিক সংকট থেকে মুক্তি পেতে সম্প্রতি আইএমএফের কাছে ঋণ চেয়েছিল পাকিস্তান। তবে আইএমএফের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, পাকিস্তান সরকার যেন মুদ্রার দামের ওপর নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দেয়। এতে করে খোলা বাজারেই ধার্য হবে পাকিস্তানি মুদ্রার মূল্য বা রেট। পাকিস্তানি মুদ্রার দামের ব্যাপক পতনের কারণে শুধু আর্থিক সংকট নয়, খাদ্যদ্রব্যেরও ব্যাপক মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে। পাকিস্তানের বেশ কিছু অংশে এক প্যাকেট আটা ৩ হাজার রুপিতে পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে বলে গণমাধ্যমে খবর বের হয়েছে।  গত ২০১৯ সালে আইএমএফ থেকে ৬০০ কোটি ডলার অনুদান (বেলআউট) নিয়েছিল পাকিস্তান। ২০২২ সালে ভয়াবহ বন্যার পর ১১০ কোটি ডলার অনুদান পেয়েছিল। কিন্তু নভেম্বরে সেই অনুদান দেওয়া বন্ধ করে দেয় আইএমএফ। রাজস্বের ঘাটতি নিয়েও ক্ষোভপ্রকাশ করেছে আইএমএফ। এখন সে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় তলানিতে। এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের মন্ত্রীই সে দেশকে ‘দেউলিয়া’ ঘোষণা করলেন।

এছাড়া সম্প্রতি ঘন ঘন ব্ল্যাকআউটও শুরু হয়েছে পাকিস্তানে। আর তাই খরচ কমাতে মন্ত্রী ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন কমানোর পদক্ষেপ নিয়েছে দেশটি। দেশটিতে নতুন যে প্রস্তাব আনা হয়েছে তাতে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের বেতন ১৫ শতাংশ এবং সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ১০ শতাংশ কমানোর কথা বলা হয়েছে। এমনকি মন্ত্রিপরিষদের সদস্য সংখ্যা ৩০ জনে নামিয়ে আনার সুপারিশও করা হয়েছে। বর্তমানে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিপরিষদের সদস্য সংখ্যা ৭৮ জন।#

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.