মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম,
বিশেষ সংবাদদাতা ##
নিজ দেশে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকট চললেও পাকিস্তান ভারতের সাথে সামরিক ভারসাম্য বজায় রেখে চলেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবিতে সদ্য অনুষ্ঠিত দ্বিবার্ষিক আন্তর্জাতিক সমরাস্ত্র প্রদর্শণী IDEX 2023-তে এই অত্যাধুনিক ট্যাংক প্রদর্শন করে পাকিস্তান। এ যেন একসময়ের সেদেশের প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত জুলফিকার আলী ভুট্টোর ভারতের উদ্দেশ্যে উক্তি ‘ঘাস খেয়ে থাকতে হলেও পরমাণু বোমা বানাব ’ অঙ্গীকারেরই পুনরাবৃত্তি । ১৯৭৪ সালের ১৮ মে রাজস্থানের পোখরানে প্রথম পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটায় ভারত। পাকিস্তানের সে সময়ের প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো তৎক্ষণাত ঐ ঘোষণা দেন বলে ঐতিহাসিক সূত্রে জানা গেছে।
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা শিল্প কারখানায় স্থানীয়ভাবে তৈরি প্রধান ব্যাটল ট্যাংক ‘হায়দার’ একটি নতুন প্রজম্মের ট্যাংক। এর আগে এই ট্যাংকটি পাকিস্তানে গত নভেম্বরে পাকিস্তানের নিজ দেশে প্রদর্শণী আইডিয়াস-এ প্রথমবারের মতো প্রদর্শন করা হয়। বেশ কয়েক বছর ধরে, পাকিস্তান চীনা তৈরি MBT-2000-এর নকশা ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে চীনা তৈরি টাইপ ৫৯ এবং আল-খালিদ-এর উপর ভিত্তি করে আল-জারার সহ স্থানীয় তৈরি প্রধান যুদ্ধ ট্যাঙ্ক তৈরি করেছে। আল-জারার এবং আল-খালিদ ট্যাঙ্কগুলির জন্য, হায়দার এমবিটি (মেইন ব্যাটল ট্যাঙ্ক) চীনা VT4 এর উপর ভিত্তি করে তৈরি।
VT4 MBT-3000 নামেও পরিচিত, এটি তৃতীয় প্রজন্মের প্রধান যুদ্ধ ট্যাঙ্ক যা চীনা কোম্পানি NORINCO দ্বারা তৈরি এবং উত্পাদিত। এটি চীনের টাইপ 99G ট্যাংক যা রপ্তানি করা হয়। বর্তমানে চীনা পিপলস লিবারেশন আর্মিও এটি ব্যবহার করছে।হায়দার ট্যাংকের ডিজাইন অনুযায়ী এর সামনের কেন্দ্রে চালক, মাঝখানে বুরুজ এবং পিছনে ইঞ্জিন। ট্যাঙ্কটিতে একজন ড্রাইভার, কমান্ডার এবং গানার সহ তিনজনের ক্রু রয়েছে।
হায়দারের প্রধান অস্ত্রশস্ত্রে একটি ১২৫ মিমি স্মুথবোর গান রয়েছে যা এপিএফএসডিএস (আরমার-পিয়ার্সিং ফিন-স্ট্যাবিলাইজড ডিসকার্ডিং স্যাবট), HE (হাই এক্সপ্লোসিভ), হিট (হাই এক্সপ্লোসিভ অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক) সহ বিভিন্ন গোলা ছুড়তে সক্ষম। অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক গাইডেড মিসাইল। ট্যাঙ্কটি মোট ৩৮ রাউন্ড বহন করে। দ্বিতীয় অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে একটি ৭.৬২ মিমি কোএক্সিয়াল মেশিনগান এবং কমান্ডার হ্যাচের পিছনে একটি রিমোট কন্ট্রোল একটি ১২.৭ মিমি ভারী মেশিনগান দিয়ে সজ্জিত। হায়দার ট্যাংকের টারিট বা বুরুজ এবং হায়দার ট্যাঙ্কের টুরো বডি কম্পোজিট ধাতুর সংমিশ্রণে তৈরী। এই ট্যাংকের বডির আবরণ সিরামিক, ধাতু এবং পলিমারের মতো উপাদানের স্তর দিয়ে তৈরি যা ট্যাংক বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ করতে সক্ষম। হায়দর ট্যাংকের বডির সামনের অংশে ERA (বিস্ফোরক প্রতিরোধ আর্মার) প্যাকেজ লাগানো আছে।
জানা যায়, এ ট্যাঙ্কের সাসপেনশন সিস্টেমে প্রতিটি পাশে ছয়টি চাকা রয়েছে, যেখানে প্রথম এবং শেষ রাস্তার চাকাগুলি হাইড্রোলিক শক অ্যাবজরবারে লাগানো থাকে। ট্যাঙ্কের সাসপেনশন সিস্টেম টর্শন বার টাইপের, প্রতিটি রাস্তার চাকা তার নিজস্ব টর্শন বারে মাউন্ট করা হয়। আইডলারটি সামনে থাকে যখন ড্রাইভ স্প্রোকেটটি পিছনে থাকে। ট্যাঙ্কটি একটি ফোর-স্ট্রোক টার্বো চার্জড ইলেকট্রনিক-নিয়ন্ত্রিত ১,২০০ এইচপি ডিজেল ইঞ্জিন দ্বারা চালিত হয়। এতে রয়েছে একটি হাইড্রো-মেকানিকাল স্বয়ংক্রিয় ট্রান্সমিশন। এটির পাল্লা সর্বোচ্চ ৫০০ কি.মি. এবং ৭০ কিমি/ঘন্টা গতিতে চলতে পারে। হায়দার ট্যাঙ্কটি একটি উন্নত ফায়ার কন্ট্রোল সিস্টেমের সাথে সজ্জিত যা যুদ্ধক্ষেত্রে ট্যাঙ্কের নির্ভুলতা এবং প্রাণঘাতীতা বাড়াতে বিভিন্ন সেন্সর এবং টার্গেটিং ডিভাইস অন্তর্ভুক্ত করে। সিস্টেমটি ট্যাঙ্কের ক্রুদের যুদ্ধক্ষেত্রের একটি পরিষ্কার ছবি প্রদান করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে এবং তাদের লক্ষ্যগুলি দ্রুত এবং কার্যকরভাবে চিহ্নিত করতে সহায়তা করে। ট্যাঙ্কের প্রধান গানটি একটি থার্মাল ইমেজিং সাইট দ্ধারা সজ্জিত, যা দিয়ে দীর্ঘ দূরত্বের লক্ষ্যগুলিকে কম আলোতেও হিট সিগনেচার এর সাহায্যে দেখা যায়।
এছাড়া র্ট্যাংকটিতে একটি লেজার রেঞ্জফাইন্ডার দিয়ে সজ্জিত, যা ট্যাংক ক্রুকে একটি লক্ষ্যের দূরত্ব সঠিকভাবে পরিমাপ করতে সক্ষম করে। থার্মাল ইমেজিং দৃষ্টির পাশাপাশি, ট্যাঙ্কটি একটি প্যানোরামিক কমান্ডারের দৃষ্টিশক্তি দিয়ে সজ্জিত, যা যুদ্ধক্ষেত্রের একটি ৩৬০-ডিগ্রি ভিউ প্রদান করে। ফায়ার কন্ট্রোল সিস্টেমে একটি ব্যালিস্টিক কম্পিউটারও রয়েছে, যা কোন লক্ষ্যে গোলা ছুড়তে এর দূরত্ব, কোণ এবং অন্যান্য ডাটার সমাধান দেয়। সব মিলিয়ে বর্তমান ভারতের তৈরী ‘অজুন’ ট্যাংক এবং অন্যান্য পশ্চিমা প্রযুক্তির ট্যাংকগুলির তুলনায় এটি যুদ্ধে সফলতা আনতে সহায়ক বলে দাবী করছেন পাকিস্তানি ট্যাংক উৎপাদকরা। ##