--- বিজ্ঞাপন ---

বাড়ছে রেমিট্যান্স, মার্চের ১৭ দিনে এসেছে ১২,৪৫৬ কোটি টাকা

0

সিরাজুর রহমান, বিশেষ প্রতিনিধি#

চলতি ২০২৩ সালের মার্চ মাসের প্রথম ১৭ দিনে প্রবাসী কর্মীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ১ দশমিক ১৬৪ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে গেছে। যা কিনা টাকার হিসেবে ১২,৪৫৬ কোটি টাকার সমান হয়। আর বিশেষ করে সামনের রমজান মাসকে কেন্দ্র করে আবারও চাঙ্গাভাব দেখা দিয়েছে রেমিট্যান্স প্রবাহে। রেমিট্যান্স প্রবাহের ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

গত ১৯ শে মার্চ রবিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য মতে, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের ১লা জুলাই থেকে মার্চের ১৭ তারিখ পর্যন্ত প্রবাসী কর্মীরা বৈধ ব্যাংকিং চ্যানেলে মোট ১৫.১৮ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন। তাছাড়া গত ২০২১-২২ অর্থবছরে ২১.০৩২ বিলিয়ন ডলার এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে ২৪.৭৮ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স হিসেবে দেশে আসে।বাংলাদেশ ব্যাংকের রেমিট্যান্স সংক্রান্ত হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী চলতি ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১.৯৫৯ বিলিয়ন ডলার এবং ফেব্রুয়ারি মাসে ১.৫৬২ বিলিয়ন ডলার। তাছাড়া গত ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে ১.৬৯৯ বিলিয়ন ডলার এবং নভেম্বর মাসে ১.৫৯৫ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স দেশে আসে। যদিও একক কোন মাস হিসেবে ২০২১ সালের মে মাসে সর্বোচ্চ ২.১৭১ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছিলেন প্রবাসী কর্মীরা। তবে একক কোন দেশ হিসেবে চলতি ২০২৩ সালের শুধু ফেব্রুয়ারি মাসে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে রেমিট্যান্স আসে সৌদি আরব থেকে। এ সময় সৌদি প্রবাসী বাংলাদেশী কর্মীরা দেশে রেমিট্যান্স পাঠান ২৬২.২১ মিলিয়ন ডলার। তাছাড়া গত ফেব্রুয়ারি মাসে রেমিট্যান্স হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২৩১.৪৮ মিলিয়ন ডলার এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে আসে ২১১.৮৬ মিলিয়ন ডলার। তবে বিগত আট মাসে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে রেমিট্যান্স এসেছে আমেরিকা থেকে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই ২০২২ থেকে ফেব্রুয়ারি ২০২৩ পর্যন্ত মোট আট মাসে আমেরিকায় অবস্থানরত বাংলাদেশি প্রবাসীরা মোট ২.৪৯৭ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন।

সূত্র মতে, রেমিট্যান্স প্রবাহ বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ স্থিতিশীল রাখতে বিগত চার দশক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। তাই স্বল্প আয়ের দেশ হিসেবে বাংলাদেশের রেমিট্যান্স আয়ের প্রবাহ ঠিক রাখার বিকল্প কিছুই আর হতে পারে না। তবে এটা ঠিক যে, দেশে অবৈধ অর্থিক সিন্ডিকেট বা হুন্ডিকে নিরুৎসাহিত এবং প্রতিরোধ করা সম্ভব হলে বাংলাদেশে দেশে প্রতি বছর গড়ে কমপক্ষে প্রায় ২৮ থেকে ৩০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি রেমিট্যান্স হিসেবে আয় করা সম্ভব হতো।

বিদেশের মাটিতে বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে থাকা অনেক প্রবাসী কর্মীর কাজ বা ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে বিভিন্ন জটিলতায় তারা নতুন করে আকামা সংগ্রহ করতে পারেন না। বিদেশে গিয়ে বৈধভাবে কাজ না পাওয়া কিংবা কাজের অনুমতি না থাকায় বৈধ ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ প্রেরণ করতে পারেন না। এক্ষেত্রে অনেকেই এক রকম বাধ্য হয়েই কিন্তু অবৈধ সিন্ডিকেট বা হুন্ডির মাধ্যমে দেশে টাকা পাঠিয়ে থাকেন। বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোকে প্রবাসী কর্মীদের এহেন সকল সমস্যা ও জটিলতা খুব দ্রুত সমাধান করতে আন্তরিকভাবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। এতে করে অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশে বৈধ ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রায় ৩০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি রেমিট্যান্স প্রবাহ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলে আশা করা যায়।

আবার স্বল্প আয়ের দেশ হিসেবে বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয় আমদানি ব্যয় অপেক্ষা কিন্তু অনেকটাই কম। ফলে বৈদেশিক বানিজ্যে দীর্ঘ মেয়াদে নেতিবাচক ভারসাম্য দেখা যায়। যা উদীয়মান কোন অর্থনীতির দেশের জন্য মোটেও কাম্য হতে পারে না। এক্ষেত্রে ধারাবাহিক রেমিট্যান্স প্রবাহ বৈদেশিক বানিজ্যে চলমান ঘাটতি পূরণ করে সার্বিক ব্যালেন্স অব পেমেন্টে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে। পাশাপাশি দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল রাখতে বড় ধরণের অবদান রাখে।

সূত্র মতে, ২০২২ অর্থবছরে ভারত রেমিট্যান্স হিসেবে সর্বোচ্চ ৮৯ বিলিয়ন ডলার এবং গত ২০২১ সালে ৮৭ বিলিয়ন ডলার আয় করে। যা কিনা বিশ্বের কোন একক দেশ হিসেবে এটি সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আয়। তাছাড়া বিশ্বব্যাংকের গবেষণা মতে ভারতের রেমিট্যান্স প্রবাহ ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে ১০০ বিলিয়ন ডলারের সীমাকে অতিক্রম করতে যাচ্ছে। আর দক্ষিণ এশিয়ার আরেক দেশ পাকিস্তান ২০২২ অর্থবছরে ৩১.২৮ বিলিয়ন ডলার ২০২১ অর্থবছরে ২৯.৪৫ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স হিসেবে আয় করেছে। যদিও সেন্ট্রাল ব্যাংক অব পাকিস্তানের দেয়া তথ্যমতে, ২০২৩ সালের ৩রা ফেব্রুয়ারির হিসেব অনুযায়ী পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে মাত্র ২.৯২ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রয়েছে।

এদিকে সেন্ট্রাল ব্যাংক অব শ্রীলংকা’র দেয়া তথ্যমতে, শ্রীলংকা রেমিট্যান্স হিসেবে গত ২০২২ সালে ৩.৭৯ বিলিয়ন ডলার এবং ২০২১ সালে ৫.৪৯ বিলিয়ন ডলার আয় করে। তবে চলতি ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাস শেষে শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কিছুটা বৃদ্ধি পেয়ে ২.১২ বিলিয়ন ডলারে উঠে আসে। তাছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার আরেক দেশ নেপাল রেমিট্যান্স হিসেবে গত ২০২২ সালে ৮.৫ বিলিয়ন ডলার আয় করে। ##

 

 

#

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.