সিরাজুর রহমান, বিশেষ প্রতিনিধি#
বর্তমানে সারাবিশ্বে মার্কেট ক্যাপিটাল ভ্যালুর দিক দিয়ে সবচেয়ে বড় বা দামি কোম্পানি হচ্ছে আমেরিকার এ্যাপল (Apple Inc.) কোম্পানি। বিশ্বের প্রথম স্থানীয় এই কোম্পানির বর্তমান মার্কেট ক্যাপিটাল ভ্যালু ২.৬১৩ ট্রিলিয়ন ডলার। তাছাড়া দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দামি কোম্পানি হিসেবে মাইক্রোসফট কর্পোরেশনের মার্কেট ক্যাপিটাল ভ্যালু ২.১২৯ ট্রিলিয়ন ডলার এবং তৃতীয় স্থানে থাকা সৌদি আরবের তেল ও গ্যাস উৎপাদন ভিত্তিক ‘আরামকো’ কোম্পানির মার্কেট ক্যাপিটাল ভ্যালু ১.৯২৬ ট্রিলিয়ন ডলার (মার্চ ২০২৩)।
তবে দেখা যায় যে, মার্কেট ক্যাপিটাল ভ্যালুর দিক দিয়ে বিশ্বের সর্বোচ্চ ১০টি কোম্পানির মধ্যে ৯টি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এবং সৌদি আরবের একটি কোম্পানি নিজের যোগ্য স্থান করে নিয়েছে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সৌদি আরবের ‘আরামকো’ কোম্পানি অবিশ্বাস্য গতিতে এগিয়ে গেছে। সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন তেল ও গ্যাস উৎপাদন ও আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানিকারক কোম্পানি ‘আরামকো’ ২০২২ সালে ৬০৪.১৭ বিলিয়ন ডলারের রেভিনিউ অর্জন করে এবং এর প্রতিটি স্টক শেয়ার মূল্য ৩২.৮৫ সৌদি রিয়াল।
গত ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাস শেষে আরামকো’র নেট ইনকাম ছিল ১২৫.৩৪ বিলিয়ন ডলার ও অপারেটিং ইনকাম হলো ২৪১.১৮ বিলিয়ন ডলার। তাছাড়া প্রতিষ্ঠানটি গত ২০২১ সালের সারা বছরে নীট মুনাফা অর্জন করে ১০৫.৩৭ বিলিয়ন ডলার। বর্তমানে সৌদি আরব প্রতিদিন গড়ে ৭৫ লক্ষ ব্যারেল ক্রুড অয়েল উত্তোলন করে সারা বিশ্বে রপ্তানি করে থাকে। দেশটির তেল রপ্তানির আয়ের শতভাগ কিন্তু রাষ্ট্রীয় মালিকানায় নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হয়।
অন্যদিকে নীট আয়ের দিক দিয়ে বিশ্বের সর্বোচ্চ আয়কারী কোম্পানির মধ্যে এ্যাপল ৯৯.৮ বিলিয়ন ডলার, মাইক্রোসফট ৬৯.৭৯ বিলিয়ন ডলার, এ্যালফাবেট ৬৬.৯৯ বিলিয়ন ডলার, ইন্ডাস্ট্রিয়াল এন্ড কমার্শিয়াল ব্যাংক অব চায়না ৫৫.৩৪ বিলিয়ন ডলার, এক্সোন মোবিল ৫১.৮৬ বিলিয়ন ডলার, চায়না কনাস্ট্রাকশন ব্যাংক ৪৮.৪৯ বিলিয়ন ডলার, শেল পিএলসি ৪৩.৩৬ বিলিয়ন ডলার এবং এগ্রিকালচারাল ব্যাংক অব চায়না ৩৮.৪৫ বিলিয়ন ডলার নীট মুনাফা করে।
বিগত চার দশকে সৌদি আরবের জাতীয় অর্থনীতি গ্যাস ও জ্বালানী তেল রপ্তানি নির্ভর শিল্পের উপর ভিত্তি করে অত্যন্ত শক্তিশালী অবস্থানে উঠে এসেছে। ২০২৩ সালের হিসেব অনুযায়ী ১.০৬১ ট্রিলিয়ন ডলারের নমিনাল জিডিপি নিয়ে সৌদি আরব বর্তমানে বিশ্বের অত্যন্ত শক্তিশালী ও বৈশ্বিকভাবে প্রভাবশালী দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। মাত্র ৩ কোটি ৬১ লক্ষ জনসংখ্যার দেশ সৌদি আরবের অর্থনীতি ঠিক কতটা শক্তিশালী তা জানতে হলে তাদের হাতে মজুত থাকা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং মোট রপ্তানির পরিমাণ সম্পর্কে ধারনা লাভ করতে হবে।
চলতি ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসের হিসেব অনুযায়ী সৌদি আরবের কাছে ৪৩৭.৭৬ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক মুদ্রা এবং প্রায় ৩২৩ টন সোনার রিজার্ভ রয়েছে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে। তাছাড়া মার্কিন আপত্তি উপেক্ষা করে নজিরবিহীনভাবে সৌদি আরব বৈদেশিক মুদ্রা হিসেবে ডলারের পাশাপাশী চীনের মুদ্রা ইউয়ান রিজার্ভ করা শুরু করে এক নতুন চমক সৃষ্টি করেছে।
ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের উত্তাপে সৌদি আরবের গ্যাস ও তেলের রপ্তানি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। গত ২০২২ সালে সৌদি আরব সারা বিশ্বে প্রায় ৪০৮ বিলিয়ন ডলারের তেল, গ্যাস ও অন্যান্য নন-ওয়েল গুডস সারাবিশ্বে রপ্তানি করে। তাছাড়া দেশটি গত ২০২১ সালে রপ্তানি করে ২৮৯.৮২ বিলিয়ন ডলার এবং ২০২০ সালে ১৮৪.১৬ বিলিয়ন ডলার। তবে দেশটি প্রতি বছর বিপুল পরিমাণে ক্রুদ ওয়েল সারা বিশ্বে রপ্তানি করলেও তাদের বৈশ্বিক আমদানি কিন্তু মোটেও কম নয়। ২০২১ সালের ১২ মাসে সৌদি আরব ২১৩.০২ বিলিয়ন ডলার এবং ২০২০ সালে ১৮২ বিলিয়ন ডলারের পন্য ও সেবা সারা বিশ্ব থেকে আমদানি করেছিল।
তবে সৌদি আরবের জাতীয় অর্থনীতি যথেষ্ঠ শক্তিশালী হলেও তার পাশাপাশি বৈদেশিক ঋন ও দেনার পরিমাণ কিন্তু মোটেও কম কিছু নয়। ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসের হিসেব অনুযায়ী সৌদি আরবের মোট বৈদেশিক ঋন অ দেনার স্থিতির পরিমাণ ছিল ২৬৪ বিলিয়ন ডলার। যদিও অবশ্য দেশটির প্রকৃত অর্থনৈতিক সক্ষমতার বিচারে এই বৈদেশিক ঋন ও দেনা মোটেও ঝুঁকিপূর্ণ কোন বিষয় নয়।##