--- বিজ্ঞাপন ---

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ কি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে পৃথিবীকে ঠেলে দিচ্ছে

0

কাজী আবুল মনসুর/সিরাজুর রহমান#

সহসা থামছে না রাশিয়া – ইউক্রেন যুদ্ধ। পশ্চিমা অনেক দেশ চাইছে না যুদ্ধ থামুক। অস্ত্র বিক্রিও বেড়েছে। জমজমাট চলছে আন্তর্জাতিক অস্ত্র বাজার। টেবিলে বসে সমাধানের কথা মূখে মূখে অনেকে বললেও এগিয়ে আসছে না কেউ। রাশিয়া রীতিমতো ইউক্রেনকে মানচিত্রের পাতা থেকে মুছে দেয়ার প্রতিজ্ঞা করে আসছে। পুতিনকে হত্যা চেষ্টার অভিযোগ উঠার পর রাশিয়ার আক্রমন আরো জোরদার হয়েছে। বিশেষজ্ঞ মহল এরই মধ্যে প্রশ্ন তুলেছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে পৃথিবীকে ঠেলে দিচ্ছে।

চলতি ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসটি ছিল ইউক্রেনের জন্য এক ভয়াবহ রকমের বিপর্যয়ের সময়। গত এপ্রিল মাস থেকে আজ অব্ধি ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী নজিরবিহীনভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা দপ্তরের দেয়া তথ্য মতে, গত এপ্রিল মাসে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর প্রায় ১৫ হাজারের অধিক সেনা হতাহত হয়েছে। তার পাশাপাশি একই সময়ে ইউক্রেনের ৮টি যুদ্ধবিমান, প্রায় তিন শতাধিক কমব্যাট ড্রোন ও তার পাশাপাশি ৪৩০টি ট্যাংক ও সামরিক যান ধ্বংস করেছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী।

যদিও রাশিয়া কিন্তু যুদ্ধের শুরুর পর থেকে আজ অব্ধি নিজেদের ঠিক কতজন সেনা হতাহত হয়েছে এবং তাদের সামরিক ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে কোন ধরনের সঠিক তথ্য উপাত্ত বিশ্ব মিডিয়ার সামনে উপস্থাপন করেনি। পশ্চিমা মিডিয়ার দেয়া তথ্যমতে, যুদ্ধের শুরু থেকে এখনো পর্যন্ত রাশিয়ার প্রায় লক্ষাধিক সেনা হতাহত হয়েছে। এদিকে রাশিয়ার দেয়া তথ্য মতে, গত ২০২২ সালের ২৪শে ফেব্রুয়ারি থেকে আর এখন কিনা এই সামরিক আগ্রাসনে প্রথম বারের মতো টিইউ-১৬০ স্ট্যাটিজিক হেভি বোম্বার মোতায়েন করেছে রাশিয়া। মূলত গত ১লা মে খুব সকালে রাশিয়ার বিমান বাহিনীর ৯টি টিইউ-৯৫ বিয়ার এবং ২টি টিইউ-১৬০ হেভি স্ট্যাটিজিক বোম্বার ইউক্রেনে বড় ধরনের মিসাইল হামলায় অংশ নেয়।

সাম্প্রতিক সময়ে ইউক্রেনে রাশিয়ার বিমান বাহিনীর হেভি বোম্বার বিমান থেকে মোট ১৮টি নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড ক্যাপবল সভিয়েত আমলের কেএইচ-১০১/ কেএইচ-৫৫৫ ক্রুজ মিসাইল ফায়ার করে। তবে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর দেয়া ভাষ্য মতে, তাদের নিজস্ব এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম মোট ১৫টি মিসাইল আকাশেই ধ্বংস করেছে এবং মাত্র ৩টি টার্গেটে আঘাত করেছে। এটিই ছিল আসলে রাশিয়ার টিইউ-১৬০ হেভি স্ট্যাটিজিক বোম্বারের সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণ।

তবে সবচেয়ে আশঙ্খাজনক খবর হচ্ছে যে, যুদ্ধের ভয়াবহতা ধীরে ধীরে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরিণতি বা নিউক্লিয়ার ওয়ারের দিকে যাচ্ছে, তাও বেশ স্পষ্ট করেই মিডিয়ায় জানিয়ে দিয়েছেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ‘সার্গেই ল্যাভরভ’। রাশিয়ার সীমানায় সার্বভৌমত্বে আঘাত আসলেই যে কোন দেশের উপর আগাম ঘোষণা না দিয়েই নিউক হামলা করতে মোটেও দ্বিতীয় বার ভাববে না দেশটির সামরিক বাহিনী। এদিকে রাশিয়ার হুমকিকে আমলে নিয়ে আমেরিকা ও তার নেতৃত্বে ন্যাটো জোট নিউক্লিয়ার এন্ড থার্মোনিউক্লিয়ার যুদ্ধের ঝুঁকি মোকাবেলায় এক রকম নিরবেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করে দিয়েছে।

আর এই চীরশত্রু দুই শিবিরের পাল্টাপাল্টি ভয়ঙ্কর রণ হুংকার ও যুদ্ধ প্রস্তুতি কিন্তু সারা বিশ্বের অস্তিত্বের জন্য এক চরম হুমকি ও তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহ আলামত হিসেবে মনে করেন আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সামরিক বিশ্লেষকেরা। আর রাশিয়া কিন্তু এখন এক রকম প্রকাশ্যেই ইউক্রেনকে মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়ে হলেও নিজ দখলে নেওয়ার হুমকি দিয়ে রেখেছে। যা আসলে স্পর্ষ্টভাবেই অদূর ভবিষ্যতে মানচিত্র থেকে দেশটির চিহ্ন একেবারেই মুছে যাওয়ার মতো ভয়াবহ সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। আর তার সাথে অত্র অঞ্চলে মারা যেতে পারে প্রায় কোটির কাছাকাছি সাধারন মানুষ। যাদের সাথে কিনা যুদ্ধের কোনই সম্পর্ক নেই এবং তারা এখনো পর্যন্ত হয়ত জানেই না যে, এই দীর্ঘ মেয়াদী ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ কেন চলছে।

কিছুদিন থেকে রাশিয়া যে ধরনের কনভেনশনাল ওয়ারহেড দ্বারা মিসাইল ফায়ার করে যাচ্ছে তা আসলে কিন্তু সোভিয়েত আমলের তৈরি নিউক্লিয়ার এন্ড থার্মোনিউক্লিয়ার ওয়ারহেড ক্যাপবল মিসাইল ওয়েপন্স সিস্টেম। যা দিয়ে যে কোন মুহুর্তেই নিউক্লিয়ার ওয়ার শুরু করে দিতে পারে রাশিয়া। মনে করা হয় রাশিয়ার অস্ত্র ভান্ডারে এখনো পর্যন্ত প্রায় তিন থেকে পাঁচ হাজারের কাছাকাছি বা অধিক সংখ্যক এই জাতীয় ইন্টারমিডিয়েট রেঞ্জের ব্যালেস্টিক এন্ড ক্রুজ মিসাইলের বিশাল ভান্ডার রয়েছে। যদিও ১৯৯১ সালের দিকে ইউক্রেনের অস্ত্র ভান্ডারে প্রায় দুই হাজারের কাছাকাছি একই জাতীয় মিসাইলের বিশাল মজুত ছিল।

শুধুমাত্র নিজেকে শান্তিপ্রিয় দেশ হিসেবে বিশ্বের সামনে তুলে ধরার জন্য বা ২ থেকে ৩ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক ঋন ও সাহায্য পেতে তাদের হাতে থাকা ৯০% এই জাতীয় মিসাইল ধ্বংস করে দেয় ও চুক্তি করে রাশিয়া অথবা জাতিসংঘের হাতে তুলে দেয় তৎকালীন নির্বোধ ইউক্রেন সরকার। ১৯৯১ সালে সভিয়েত ইউনিয়ন থেকে স্বাধীনতা লাভের পর ইউক্রেনের হাতে প্রায় ২ হাজারের কাছাকাছি নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড, ১৭৬টি ইন্টারকন্টিন্যান্টাল ব্যালেস্টিক মিসাইল, ৪৪টি স্ট্যাটিজিক হেভি বোম্বার, দুই হাজারের কাছাকাছি ইন্টারমিডিয়েট রেঞ্জের ব্যালেস্টিক এন্ড ক্রুজ মিসাইলের মজুত ছিল। তার সাথে শতাধিক এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম, হাজার হাজার ট্যাংক ও আর্টিলারী সিস্টেম থেকে যায় ইউক্রেনের হাতে।

আর পরবর্তী কয়েক বছরের মধ্যেই রাশিয়া, আমেরিকা ও জাতিসংঘের সাথে চুক্তি করে সকল নিউক্লিয়ার ওয়েপন্স, সকল আইসিবিএম ও হেভি বোম্বার ধ্বংস কিংবা রাশিয়ার কাছে হস্তান্তর করে দেয় ইউক্রেন। তাছাড়া হাজার হাজার অমূল্য ডিফেন্স সিস্টেম খোলা আকাশের নিচে পড়ে থেকে জং ধরে নষ্ট ও অকেজো হয়ে যায়। অথচ সুচতুর রাশিয়া কিন্তু শত বাধা ও সমস্যার মধ্যেও তার হাতে থাকা সকল ডিফেন্স সিস্টেম অত্যন্ত যত্ন করেই সংরক্ষণ করেছে এবং বর্তমান যুদ্ধে রাশিয়া যত অস্ত্র ও মিসাইল ব্যবহার করছে তার ৮০% পর্যন্ত কিন্তু সভিয়েত আমলের তৈরি। যা হোক অতি উন্নত ও শান্তিপ্রিয় দেশ হিসেবে নিজেকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে গিয়ে নিজস্ব প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বজায় রাখাকে অবজ্ঞা করে ইউক্রেন তার নিজস্ব স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে পরোক্ষভাবে হলেও নিজেই কিন্তু আজ ধ্বংসের মুখে এনে দাঁড় করিয়েছে।##

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.