--- বিজ্ঞাপন ---

হিংসা আর প্রতিশোধের আগুনে জ্বলছে পাকিস্তান

0

পাকিস্তানের অতীত ইতিহাসে দেখা গেছে, একটা বড় সময় ধরে ক্ষমতায় ছিল সে দেশের সামরিক বাহিনী। জেনারেল জিয়া উল হকের আমল থেকে পাকিস্তানে মূলত অশান্তি শুরু। বিশেষ করে আফগানিস্তানে সোভিয়েত ইউনিয়নের আগ্রাসনের পর আমেরিকার পাকিস্তান নির্ভরতায় অস্ত্রের আনাগোনা শুরু হয়। বিভিন্ন গ্রুপের কাছে চলে যায় ভারী অস্ত্র। আমেরিকানরাই অস্ত্রের যোগান দাতা। জিয়াউল হক সেনাবাহিনীর ছত্রছায়ায় গণতন্ত্রের আবরণে এমন একটি ব্যবস্থার চেষ্টা করে যার ফলে পাকিস্তানে রাজনীতি অনেকটা হ-য-ব-র-ল হয়ে যায়। একদিকে ইসলামী শাসন ব্যবস্থার প্রবর্তন অন্যদিকে গণতন্ত্রের বুলি মিলে দিশেহারা হয়ে যায় পাক জনগণ। নিজের শাসন টিকিয়ে রাখার জন্য ডানপন্থিদের উপর নির্ভর করেন জিয়া। সোভিয়েত ইউনিয়নকে আফগানিস্তান থেকে বিতাড়িত করার জন্য ইসলামী দলগুলোকে ব্যবহার করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আফগান মুজাহিদদের অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গ্রুপ পাকিস্তানে জায়গা করে নেয়। যা এখন পাকিস্তানের জন্য বিষফোঁড়া হিসেবে দেখা দিয়েছে।
পাকিস্তান জন্মের পর অর্ধেক শাসন সেনাবাহিনীর হাতে থাকলেও পাকিস্তানী রাজনীতিকরা দল গঠনে পিছিয়ে নেই।

বর্তমানে ২৪টি রাজনৈতিক দল সক্রিয় রয়েছে। মুহাজির নেতা আলতাফ হোসেনের ‘মুহাজির কওমি মুভমেন্ট’ওয়ালী খানের নেতৃত্বে আওয়ামী ন্যাশনাল পার্টি, বেলুচিস্তান ন্যাশনাল পার্টি (আওয়ামী), বেলুচিস্তান ন্যাশনাল পার্টি (হাবি গ্রুপ), বেলুচিস্তান ন্যাশনাল পার্টি (মেঙ্গল), সৈয়দ মুনওয়ার হাসানের জামাতে ইসলামী, জামহুরি ওয়াতান পার্টি, সৈয়দ মিরের জমিয়াত এ আহলে হিদাত, ফজলুর রহমানের জমিয়াতে ই ওলামায়ে ইসলাম, সামিউল হকের জমিয়াতে ই ওলামায়ে ইসলাম, আবুল খায়ির জুবায়েরের জমিয়াতে উলেমা ই পাকিস্তান, আল্লামা সাজিদ নকবীর মিল্লাত ই জাফরিয়া, আলতাফ হোসেনের মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি, মাহমুদ খান আকজাই এর পাখতুন খাওয়া মিল্লি আওয়ামী পার্টি, তাহির উল কাদিরের পাকিস্তান আওয়ামী তেহরিক, চৌধুরী সুজ্জাত হোসেনের পাকিস্তান মুসলিম লীগ (কায়েদে আজম), পীর পাগারোর পাকিস্তান মুসলিম লীগ, নেওয়াজ শরীফের পাকিস্তান মুসলিম লীগ (নেওয়াজ), ভুট্টো পরিবারের পাকিস্তান পিপলস পার্টি, পাকিস্তান পিপলস পার্টি (আফতাব আহমেদ), আফতাব আহমেদ খানের কওমি ওয়াতান পার্টি ও ইমরান খানের পাকিস্তান তেহরিক ই ইনসাফ অন্যতম।
আর এসব রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা নিজেদের অবস্থানে কখনও স্থির থাকতে পারেন না। বার বার তারা চরিত্র বদলায়। দলগুলোর নেতাদের মধ্যে কেউ ইসলামকে ব্যবহার করে, কেউ সাধারণ মানুষের দারিদ্রতার সুযোগ নেয়, কেউ নিজের প্রভাব খাটিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা করে। আবার কেউ ক্ষমতার কাছাকাছি গেলে তাকে টেনে নামানোর চেষ্টা চালায়। সব মিলিয়ে শেষপর্যন্ত সেনাবাহিনীই পালন করে মূখ্য ভূমিকা। যে কেউ ক্ষমতায় যাক না কেন তাদের পরামর্শে দেশ চালাতে হবে। অন্যতায় ক্ষমতাচ্যুত। এভাবে চলছে দেশটি।
পাকিস্তানের রাজনীতি বরাবরের মতো হিংসা আর হানাহানিতে ভরা। কোন কিছুর স্থায়িত্ব নেই এখানে। ‘হিসটোরি রিপিটস ইটসেল্ফ’ বলে একটি কথা আছে যা পাক রাজনীতির সাথে একেবারে মিলে যায়। পাকিস্তানের বর্তমান অবস্থার মূল্যায়ন করতে গেলে ফিরে যেতে হয় কয়েক বছর আগে ২০১৩ সালে। এ সময় সফল একটি জাতীয় নির্বাচন হয়। পাকিস্তানের সবাই মনে করেছিল শান্তির সুবাতাস বইতে শুরু করেছে। ঠিক বছর যেতে না যেতে বিরোধীদলীয় নেতা ইমরান খান পার্লামেন্টের বিলুপ্তিসহ একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন দাবি করে বসেন। তার দল আরো দাবি করে, ২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নওয়াজ শরিফ কারচুপির মাধ্যমে জয়ী হয়েছেন। তিনি নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেন। কিন্তু তিনি নিজে সে সময় নির্বাচনের ফলাফল মেনে নিয়েছিলেন। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক দল এ নির্বাচনকে অবাধ ও সুষ্ঠু বলেছিল। এরপরও প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ সরকারের পদত্যাগের দাবিতে মাঠে নামেন ইমরান খান। তারঁ নেতৃত্বে সরকার বিরোধী আন্দোন শুরু হয় লাহোর থেকে। ইমরান খান তার সঙ্গি হিসেবে বেছে নেন প্রভাবশালী ধর্মীয় নেতা তাহির উল কাদরিকে। এই আন্দোলনের পেছেনে নেপথ্যে সমর্থন দেয় বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল। যারা আজকে ইমরানের বিপক্ষে। পাক সেনাবহিনীও সমর্থন জানায় ইমরানের প্রতি। আইএসআইও নাকি অবস্থান নেয় ইমরানের পক্ষে। এ সময় কয়েকদিনের সরকার বিরোধী বিক্ষোভে বেশ কয়েকজন নিহত এবং কয়েকশো মানুষ আহত হয়। বিরোধী পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল ভারতের প্রতি শরিফ সরকারের অনুকূল মনোভাব আছে। যার কারনে সন্তুষ্ট নয় পাক সেনাবাহিনীও। এছাড়া সরকারের আফগানিস্তান নীতিরও বিরোধীতা করা হয়। এ সময় নেওয়াজ ক্ষমতায় থাকলেও ইমরান খানের নানামূখি বিরোধীতার কারনে তিনি শান্তি পাননি। ইমরানকে এ সময় শেল্টার দেয় পাক সেনাবাহিনী। কারন নেওয়াজ পাকিস্তানের রাজনীতিতে সেনাবাহিনী হস্তক্ষেপ মেনে নিতে পারেন নি। সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যাওয়ার কারনে তাকে গদিচ্যুত করার জন্য সেনাবাহিনী ইমরান খানের প্রতি হাত বাড়ান। শেষপর্যন্ত ২০১৭ সালে নেওয়াজ শরিফকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তার বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে আল-আজিজিয়া স্টিল মিল মামলায় শরিফকে সাত বছরের জেল দেয়া। কিছুদিন জেলের চার দেওয়ালে কাটিয়ে তিনি লন্ডনে যান চিকিত্‍‌সা করাতে। শারীরিক অসুস্থতার কারণেই আদালত তাঁকে শর্তসাপেক্ষে জামিন দিয়ে লন্ডনে যাওয়ার অনুমতি দেয়। আট সপ্তাহের মধ্যে তাঁকে দেশে ফিরতে বলা হয়। কিন্তু তাঁর শারীরিক জটিলতার তিনি দেশে ফিরেন নি। নেওয়াজকে সরিয়ে পাক সেনার সহযোগিতায় ইমরান খান পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হন। যে কায়দায় ইমরান খান প্রেসিডেন্ট পদ থেকে নেওয়াজ শরীফকে সরালেন এখন একই কায়দায় ইমরান খানও বিদায় নেন।
ক্ষমতায় থাকাকালে ইমরান খান সাবেক প্রধানমন্ত্রী নেওয়াজ শরীফের মেয়ে বর্তমানে ক্ষমতাসীন মরিয়ম নওয়াজের স্বামীকে হোটেলের দরজা ভেঙ্গে পুলিশকে দিয়ে গ্রেফতার করায়। অনেকটা একই কায়দায় মরিয়ম নেওয়াজ পুলিশকে দিয়ে ধাক্বা দিতে দিতে ইমরান খানকে গ্রেফতার করে গাড়ীতে উঠায়। অদ্ভুত সব কাজ-কারবার।##

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.