--- বিজ্ঞাপন ---

যুক্তরাষ্ট্র ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সক্রিয়তা সম্প্রসারণে অঙ্গীকারবদ্ধ

- ভারত মহাসগরীয় সম্মেলনে বললেন যুক্তরাষ্ট্রের ডেপুটি সেক্রেটারি শেরম্যান

0

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনকে ধন্যবাদ জানাই ২০২৩ সালের ভারত মহাসাগরীয় সম্মেলন আয়োজন এবং মর্যাদাপূর্ণ এই সভায় আমাকে কথা বলার আমন্ত্রণ জানানোর জন্য। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী জয়শঙ্কর ও ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনকে ধন্যবাদ প্রতি বছর এই অনুষ্ঠান আয়োজনে সহায়তার লক্ষ্যে তাদের অংশীদারিত্বের জন্য।

আমার সত্যিই খুব ভালো লাগতো ঢাকায় আপনাদের সবার সাথে থাকতে পারলে। তবে আমি আনন্দিত যে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করছেন এবং আমাদের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অফ স্টেট আফরিন আক্তার।

অনন্য এই ফোরাম যেখানে আফ্রিকা থেকে দক্ষিণ এশিয়া পর্যন্ত ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চল থেকে শুরু করে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলের বহু দেশ একত্রিত হয়েছে, সেখানে আমাকে কথা বলার সুযোগ দেয়ার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। আমি একটি সহজ বার্তা দিতে চাই, আর সেটা হলো- যুক্তরাষ্ট্র ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সক্রিয়তা সম্প্রসারণে অঙ্গীকারবদ্ধ।

এ অঞ্চলে যা ঘটবে তার মধ্য দিয়েই অনেকাংশে বিশ্বের ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হবে। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ২৭০ কোটি মানুষ বাস করে যা বিশ্বের জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশেরও বেশি এবং গড় ৩০ বছর বয়সীদের শতকরা হার ক্রমবর্ধমান হারে বাড়বে ।

এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক তাৎপর্যকে বাড়িয়ে বলার কিছু নেই। ভারত মহাসাগর বিশ্বের পুরো সমুদ্রপৃষ্ঠের এক-পঞ্চমাংশ এবং এটি সারা বিশ্বের মানুষ ও অর্থনীতিকে সংযুক্ত করেছে। এর বিস্তীর্ণ উপকূলরেখার মধ্যে রয়েছে হরমুজ প্রণালী থেকে শুরু করে মালাক্কা প্রণালী পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জাহাজ চলাচল পথ। সারা বিশ্বে সমুদ্রপথে পরিবহনকৃত তেলের চালানের ৮০ শতাংশই ভারত মহাসাগরের জলসীমা অতিক্রম করে থাকে। আমাদের আবাসগ্রহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু মৎস্যভাণ্ডারও রয়েছে এ অঞ্চলে। সেগুলো এ অঞ্চলের মানুষের কর্মসংস্থান ও বিশ্বজুড়ে মানুষের খাবার যোগানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

সুস্পষ্ট কারণেই, ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ নির্মাণের দিকে আমাদের সকলের আগ্রহ রয়েছে। এ বছরের সম্মেলনের প্রতিপাদ্যে আমাদের যৌথ দৃষ্টিভঙ্গি উঠে এসেছে… শান্তি, সমৃদ্ধি ও স্থায়িত্বশীল ভবিষ্যতের জন্য অংশীদারিত্ব। প্রেসিডেন্ট বাইডেন যেমন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র “বন্ধুরাষ্ট্র ও অংশীদারদের সাথে একত্রে দীর্ঘ পথ চলার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ এবং এ অঞ্চলে ইতিবাচক ভবিষ্যৎ বিনির্মাণের লক্ষ্যে আমাদের যৌথ অভীষ্ট অর্জনে প্রস্তুত।”

একইসাথে, এই অঞ্চলটি গুরুতর চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। জলবায়ু সংকট আমাদের সবাইকে স্পর্শ করে, তবে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোতে এর প্রভাব অসম। জলবায়ু পরিবর্তন কিছু দেশ, বিশেষত দ্বীপরাষ্ট্রগুলোকে অস্তিত্বের হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। এদিকে জলদস্যুতা, সমুদ্রে সশস্ত্র ডাকাতি ও পাচার সমুদ্র এলাকায় নিরাপত্তার অবনতি ঘটাচ্ছে। তাছাড়া অবৈধ, অজানা ও অনিয়ন্ত্রিত মাছ শিকার সমুদ্র-নির্ভর অর্থনীতিকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের উন্নতির জন্য এটি টেকসই করা প্রয়োজন।

এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমাদের সবাইকে তথা বিভিন্ন দেশ, IORA’র মতো বহুপাক্ষিক সংস্থা, সুশীল সমাজ ও জনগণকে সাথে নিয়ে সমন্বিত ও সহযোগিতামূলক পন্থা অবলম্বন করা আবশ্যক। আর এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র আমাদের ভূমিকা পালনে অঙ্গীকারবদ্ধ। সে কারণেই আমরা ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চল জুড়ে দূষণমুক্ত জ্বালানি-নির্ভর ভবিষ্যতে উত্তরণসহ জলবায়ু পরিবর্তনের বিপরীতে অভিযোজন ও প্রশমন কার্যক্রমে ১৬ কোটি ৫০ লক্ষ ডলার প্রদানের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছি।

এ কারণেই আমরা আঞ্চলিক সমুদ্র নিরাপত্তা বিষয়ক উদ্যোগের আওতায় যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের সাথে কাজের সূত্রে বাংলাদেশ, ভারত, মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কার সাথে অংশীদারিত্বের জন্য ৬০ লক্ষ ডলার প্রদান করতে চাইছি। এই তহবিল ভারত মহাসাগরের আওতাধীন দক্ষিণ এশীয় উপ-অঞ্চলে নিষেধাজ্ঞা ও আইন প্রয়োগের সক্ষমতাকে জোরদার করবে। সমুদ্র নিরাপত্তার জন্য অংশীদারিত্ব গুরুত্বপূর্ণ এবং আমি এক্ষেত্রে বিশেষত জলদস্যুতা প্রতিরোধ, EEZ পরিবীক্ষণ ও দুর্যোগ মোকাবেলার ক্ষেত্রে ভারতের নেতৃত্বকে সামনে রাখতে চাই…

সমুদ্র-ভিত্তিক টেকসই অর্থনীতিতে বিনিয়োগের মাধ্যমে এর শক্তি বহুগুণ বাড়বে যার ফলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে এবং পরিবেশ সুরক্ষা ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কীভাবে একে অপরকে শক্তিশালী করতে পারে তার পথ প্রদর্শন করবে। ইউএসএআইডি’র মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র টেকসই মৎস্য আহরণ ও সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে প্রতি বছর ১৫টি দেশে ৩ কোটি ৩০ লক্ষ ডলারেরও বেশি বিনিয়োগ করছে। তাছাড়া এ অঞ্চলে আমরা বাংলাদেশের জন্য-সহ ক্রমবর্ধমান সমুদ্র-ভিত্তিক অর্থনীতির দিকে দৃষ্টি দিয়ে উন্নয়ন সহায়তা চিহ্নিত করার লক্ষ্যে কাজ করছি।

আমাদের এইসকল কার্যক্রম ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অফুরান সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎকে আরো গতিশীল করার লক্ষ্যে । আমরা এটি করছি কারণ এর পূর্ণ সম্ভাবনা বিকাশের জন্য আমাদের সবার একত্রিত হওয়া আবশ্যক। তাছাড়া আমরা যখন যৌথ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য পদক্ষেপ নিচ্ছি তখন আমরা অন্যদের কথাও শুনবো। আমি আশা করি যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি আক্তার ও আমাদের প্রতিনিধি দলের সাথে আমাদের অংশীদারিত্বকে আরো জোরদার করতে পারে সে বিষয়ে আপনাদের পরামর্শগুলো তুলে ধরবেন।

আগামী মাসগুলোতে আমরা এ সপ্তাহে আপনাদের আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সৃষ্ট গতিশীলতাকে আরো দ্রুততার সাথে বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে উপায় অন্বেষণ করবো। তাছাড়া আমরা আমাদের সম্মিলিত অভীষ্টকে এগিয়ে নেয়ার ধারা অব্যাহত রাখবো যাতে আমরা আরো শান্তিপূর্ণ, সমৃদ্ধ ও ঝুঁকিসহিষ্ণু ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চল গড়ে তুলতে পারি… একসাথে।

আজ এখানে আমাকে কথা বলার আমন্ত্রণ জানানোর জন্য আপনাদেরকে আবারও ধন্যবাদ এবং আমি আপনাদের এই সম্মেলনের সর্বাঙ্গীন সফলতা কামনা করছি।##

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.