--- বিজ্ঞাপন ---

চীনের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩,২০৫ ট্রিলিয়ন ডলার!

0

সিরাজুর রহমান, বিশেষ প্রতিনিধি#

চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অবিশ্বাস্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে চীনের জাতীয় অর্থনীতি এবং বৈদেশিক কারেন্সি রিজার্ভ। তার পাশাপাশি চীনের নিজস্ব মুদ্রা ইউয়ান সারা বিশ্বে ধীরে ধীরে প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে দিয়েছে। যদিও অবশ্য গত এপ্রিল মাসে চীনের নিজস্ব মুদ্রা ইউয়ান ডলারের বিপরীতে ০.৬৩% মান হারায়। আজকের ৭ই মে এর রেট অনুযায়ী এক ডলারের বিপরীতে ৬.৯১ চাইনিজ মুদ্রা ইউয়ান লেনদেন করা হয়। তাছাড়া চলতি ২০২৩ সালের মার্চ মাসের হিসেব অনুযায়ী চীনের কনজুমার প্রাইস ইনডেক্স (মুদ্রাস্ফীতির হার) ছিল ০.৭%।

এদিকে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্সের দেয়া তথ্য মতে, চীনের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ চলতি ২০২৩ সালের এপ্রিল মাস শেষে ২১ বিলিয়ন ডলার বৃদ্ধি পেয়ে মোট ৩.২০৫ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছে গেছে। যেখানে কিনা গত মার্চ মাসে দেশটির কাছে ৩.১৮৪ ট্রিলিয়ন ডলারের ফরেক্স রিজার্ভ মজুত ছিল। আর এটিই হচ্ছে কিন্তু বিশ্বের একক কোন দেশ হিসেবে সর্বোচ্চ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। তাছাড়া একই সময়ে বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ফরেক্স রিজার্ভকারী দেশ হিসেবে জাপানের কাছে ১.৩৭৬ ট্রিলিয়ন ডলার এবং তৃতীয় সর্বোচ্চ রিজার্ভকারী দেশ হিসেবে সুইজারল্যান্ডের কাছে ১.০৩৩ ট্রিলিয়ন ডলার মজুত রয়েছে।

অন্যদিকে, চীনের রাষ্ট্রীয় কোষাগারে চলতি ২০২৩ সালের এপ্রিল মাস শেষে ৬৬.৭৬ মিলিয়ন আউন্স বা ১,৮৯২.৬১৩ টন সোনার বিশাল মজুত ছিল। যার আন্তর্জাতিক বাজার মূল্য কিনা প্রায় ১৩২.৩৫ বিলিয়ন ডলার। যদিও বিশ্বের একক দেশ হিসেবে সর্বোচ্চ ৮,১৩৩ টন সোনার মজুত রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেমে। এদিকে জার্মানির কাছে ৩,৩৫৯ টন, ইতালির কাছে ২,৪৫২ টন, ফ্রান্সের কাছে ২,৪৩৬ টন এবং রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ২,২৯৯ টনের বিশাল পরিমাণ সোনার মজুত রয়েছে।

২০২৩ অর্থ বছরে চীনের প্রত্যাশিত জিডিপি’র হার ৫.২% নির্ধারণ করা হয়। তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের সর্বশেষ প্রতিবেদনে অনুমান করা হয়েছে যে, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার চীন ও ভিয়েতনামকে ছাপিয়ে ৫.৫% এর সীমা অতিক্রম করতে পারে।

যদিও অবশ্য ইউকীপিডিয়ার দেয়া তথ্যমতে, চলতি ২০২৩ সালের চীনের নমিনাল জিডিপি’র আকার দেখানো হয়েছে ১৯.৩৭৩ ট্রিলিয়ন ডলার (১৯,৩৭৩ বিলিয়ন ডলার) এবং বাংলাদেশের নমিনাল জিডিপি’র আকার ৪২০.৫২ বিলিয়ন ডলার দেখানো হয়েছে। তাই নমিনাল জিডিপি’র বিবেচনায় চীনের অর্থনৈতিক সক্ষমতা ও আকার বাংলাদেশের প্রায় ৪৬ গুণ বেশি বড়।
চীনের সার্বিক অর্থনৈতিক সক্ষমতা ঠিক কতটা শক্তিশালী তা দেশটির মোট বৈদেশিক (আমদানি-রপ্তানি) বানিজ্যের হিসেবটি দেখলে অনুমান করা যায়। চীন ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১২ মাসে মোট ৬.২৬ ট্রিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক বানিজ্য সম্পন্ন করে। যার মধ্যে চীনের মোট রপ্তানি আয় ছিল ৩.৫৯ ট্রিলিয়ন ডলার এবং একই সময়ে সারাবিশ্ব থেকে পন্য ও সেবা আমদানি করে ২.৬৭ ট্রিলিয়ন ডলার।

বর্তমানে চলমান ভয়াবহ ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মহামন্দার কবলে বিশ্ব অর্থনীতিতে দেখা দিয়েছে চাহিদার ব্যাপক সঙ্কোচন ও স্থবিরতা। আবার এই সময়ে বিভিন্ন দেশের কঠোর মুদ্রানীতি ও বানিজ্য বিশ্ব অর্থনীতিকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করছে। অস্থিতিশীল যুদ্ধের কারনে আজ বিশ্বের অধিকাংশ স্বল্প আয়ের দেশের অর্থনীতি ও আর্থিক ব্যবস্থা খাত চরমভাবে নাস্তানাবুদ হয়ে পড়েছে। তবে এমন এক সময়ে চীনের নিজস্ব শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় বিশ্ব অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের জন্য এক বড় ধরনের সুযোগ এনে দিতে পারে। তবে এক্ষেত্রে কিন্তু চীনকে তার অভ্যন্তরীণ বাজার বিশ্বের জন্য সবার আগে যতটা সম্ভব উম্মুক্ত করার বিষয়ে আরো আন্তরিক হতে হবে।#

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.