--- বিজ্ঞাপন ---

কোন পথে আমেরিকার অর্থনীতি

মোট ঋন ও দেনার বোঝা প্রায় ৩১.৪৬ ট্রিলিয়ন ডলার!

0

কাজী আবুল মনসুর/সিরাজুর রহমান#

সারা বিশ্বের মধ্যে এমন একটি দেশ রয়েছে যার নমিনাল জিডিপি’র আকারের তুলনায় মোট ঋন ও দেনার স্থিতির পরিমাণ অবিশ্বাস্যভাবে অনেক বেশি। আর সেই দেশটি হচ্ছে বিশ্বের এক নম্বর পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মূলত আমেরিকার প্রশাসনের নির্বিচারে অর্থ ব্যয় ও অতি মাত্রায় যুদ্ধ প্রিয়তার কারণেই আজ মোট ঋনের পরিমাণ ইতিহাসে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। তার সাথে দেশটি বর্তমানে এক নম্বর সুপার পাওয়ার হওয়ার পাশাপাশি বিশ্বের শীর্ষ প্রথম স্থানীয় ঋণগ্রস্ত দেশ হিসেবে নিজের নাম লিখিয়েছে। আসলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে আজ অব্ধি ডলার বিশ্বের সকল দেশের আন্তঃবানিজ্য লেনদেনে প্রধান মুদ্রা হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ায় আমেরিকা কিন্তু বার বার দেউলিয়া হওয়া থেকে রক্ষা পেয়ে যায়।

খোদ আমেরিকার একাধিক প্রথম সারির নিউজ এজেন্সি’র দেয়া তথ্য মতে, আমেরিকার রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে মোট ঋন ও দেনার বোঝা ইতোমধ্যেই প্রায় ৩১.৪৬ ট্রিলিয়ন ডলারের পৌঁছে গেছে। যদিও অবশ্য এই ঋন দেশের অভ্যন্তরীণ আর্থিক খাত ও বিশ্বের অন্যান্য দেশ ও সংস্থার কাছে থেকে নেয়া মোট ঋনের হিসাবটি সমন্বয় করে প্রকাশ করা হয়েছে। বিশেষ করে চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মহামন্দা ও ভয়াবহ ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের মুখে আমেরিকার সমষ্টিক অর্থনীতি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং তার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মুদ্রা হিসেবে ডলারের ক্রমহ্রাসমান অবনতি প্রভাব হ্রাস দেশটির অর্থনীতিকে এক গভীর অন্ধকারের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।

মনে করা হয় চলতি ২০২৩ সালের মার্চ মাস শেষে আমেরিকার বৈদেশিক ঋন ও দেনার স্থিতির পরিমাণ অবিশ্বাস্য ভাবে প্রায় ৮.৫ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছে গেছে। তাছাড়া দেশের অভ্যন্তরীণ উৎস হতে নেয়া ঋনের স্থিতির পরিমাণ খুব সম্ভবত প্রায় ২৩ ট্রিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি হতে পারে। তবে এই হিসেবটি যুক্তি সঙ্গত কারণেই কিছুটা কম বা বা বেশি হতে পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যয় ও দেশের জনগণের ট্যাক্সের টাকা কিন্তু ঘুরেফিরে সেই আমেরিকারই বড় বড় অস্ত্র উৎপাদনকারী কর্পোরেশনের পকেটে চলে যায়।

মূলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই মার্কিন প্রশাসন তাদের দেশীয় মুদ্রা ডলারকে বিভিন্ন দেশের বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে সরাসরি ব্যবহার করে আসিছে। তাছাড়া বিভিন্ন কারণে বা অকারণে অন্যান্য দেশের উপর শত শত অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ও অবরোধ আরোপ করে সারা বিশ্বে নিজের একক কতৃত্ব বা খবরদারি নগ্নভাবে জাহির করে আসছে। যা বর্তমানে বিশ্বের অধিকাংশ প্রভাবশালী ও সচেতন দেশগুলো মোটেও ভালো চোখে দেখছে না। তারা সকলেই চায় ডলারের এক বিকল্প শক্তিশালী মুদ্রা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে। আর ঠিক এমন গুঞ্জনের মুখে অনেকটাই বিরুপ প্রভাব পড়েছে আমেরিকার জাতীয় অর্থনীতি ও অর্থিক ব্যবস্থাপনা খাতে। তার সাথে বিপদজনকভাবে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মুদ্রাস্ফীতি এবং জাতীয় ঋন ও দেনার স্থিতির পরিমাণ।

এদিকে আমেরিকার কারেন্সি মার্কিন ডলারের একচ্ছত্র আধিপত্য রুখে দিতে এবার ব্রিকস জোট ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে আরও নতুন ২৫ দেশ যোগ দিয়ে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য তাদের নতুন কোন মুদ্রায় আন্তঃবানিজ্য সম্পন্ন করার প্রস্তুতি নিতে শুরু করে দিয়েছে। শুধু আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে নয়, সম্প্রসারিত ব্রিকস জোটের মুদ্রা মার্কিন ডলারকে বৈশ্বিক রিজার্ভ ব্যবস্থা থেকেও সরিয়ে দিতে একমত হতে যাচ্ছে বলে জোর গুঞ্জন শুনা যায়। যদি অদূর ভবিষ্যতে প্রভাবশালী এতগুলো দেশ ডলার ত্যাগ করে এবং একটি নতুন মুদ্রা দিয়ে আন্তঃবানিজ্য লেনদেন শুরু করে, তবে তা হবে কিন্তু মার্কিন ডলারের জন্য এক বড় ধরণের পরাজয়।#

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.