সিরাজুর রহমান, বিশেষ প্রতিনিধি#
গত ২৮শে মে রবিবার বানিজ্যিকভাবে আকাশে যাত্রা শুরু করে চীনের নিজস্ব প্রযুক্তির তৈরি প্রথম মিডিয়াম রেঞ্জের কমার্শিয়াল সি-৯১৯ যাত্রী পরিবহন বিমান। মূলত এদিন সকালে বিমানটির প্রথম এমইউ-৯১৯১ ফ্লাইটে চীনের সাংহাই থেকে ১২৮ জন যাত্রী নিয়ে বেইজিং এর ক্যাপিটাল ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে অবতরণ করে সিভিল অ্যাভিয়েশন মার্কেটে এক নতুন যুগের সূচনা করে।
সিনহুয়া নিউজের দেয়া তথ্য মতে, চীনের তৈরি এই সি-৯১৯ প্যাসেঞ্জার বিমানটি কিন্তু এয়ার ফ্লাইটের সব ধরনের আন্তর্জাতিক সনদ পেয়েই তার বানিজ্যিক ফ্লাইট শুরু করে। এর মাধ্যমে আসলে চীনের যাত্রী পরিবহন বিমান তৈরি ও তা সফলভাবে সার্ভিসে আনার দীর্ঘ ১৬ বছরের লালিত স্বপ্ন পূরণ হলো।
চীনের এভিয়েশন ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি কমার্সিয়াল এয়ারক্রাফ্ট করপোরেশন অব চায়না (সিএসিসি) তাদের নিজস্ব প্রযুক্তির তৈরি সি-৯১৯ প্যাসেঞ্জার জেট লাইনার নিয়ে কাজ শুরু করে ২০০৭ সালে। তাছাড়া ব্যাপক সমালোচনা ও প্রতিবন্ধকতা জয় করে দীর্ঘ এক দশক গবেষণা ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নের পর ২০১৭ সালে এটি তার প্রত্যাশিত পরীক্ষামূলক সফল ফ্লাইট টেস্ট সম্পন্ন করে। তাছাড়া ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে এবং চলতি ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে এই বিমানের বেশকিছু সফল উড্ডয়ন বা ফ্লাইট টেস্ট সম্পন্ন করা হয়।
বর্তমানে এই জেট লাইনারের গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি যেমন ইঞ্জিন, এভিয়নিক্স সিস্টেম, রাডারসহ গুরুত্বপূর্ণ ডিভাইস এন্ড সিস্টেম ইউরোপ ও আমেরিকা থেকে আমদানি করে চাহিদা মেটানো হলেও ভবিষ্যতে এটি শতভাগ নিজস্ব প্রযুক্তির যাত্রী পরিবহন বিমান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে বলে প্রবলভাবে আশাবাদী রেড জায়ান্ট চীন। তাছাড়া এটি কিন্তু এভিয়েশন জায়ান্ট মার্কিন বোয়িং কর্পোরেশন এবং ইউরোপের এয়ারবাসকে ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে বলে মনে করে চীন।
চীনের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত বিমান পরিসেবা সংস্থা ‘চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইন্স’ হচ্ছে সি-৯১৯ প্যাসেঞ্জার জেট লাইনারের প্রথম ব্যবহারকারী এয়ারলাইন্স সংস্থা। বর্তমানে তাদের বিমান বহরে প্রায় ৮০০টি বিভিন্ন ক্যাটাগরির যাত্রী পরিবহন বিমান রয়েছে। তাছাড়া তারা বিশ্ব মানের এয়ারলাইন্স সংস্থার সাথে পাল্লা দিতে আগামী ২০৩০-৩৫ সালের মধ্যে তাদের বহরে থাকা পুরনো সকল বিমান রিপ্লেস করে একেবারে নতুন প্রজন্মের এবং আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত অত্যাধুনিক বিমান সার্ভিসে আনার পরিকল্পনা করেছে।
চীনের তৈরি সি-৯১৯ইআর সিরিজের যাত্রী পরিবহণ বিমানের দৈর্ঘ্য ৩৮.৯ মিটার এবং উইন্সপেন ৩৩.৬ মিটার। এর স্টান্ডার্ড পেলোড ক্যাপাসিটি ১৫ টন এবং এর স্টান্ডার্ড অপারেশনাল রেঞ্জ ৫,৫৭৬ কিলোমিটার। আকাশে এই বিমানের উড়ে চলা ও শক্তি উৎপাদনের জন্য ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের যৌথভাবে তৈরি ২টি সিএফএম ইন্টারন্যাশনাল এলইএপি-১সি সিরিজের শক্তিশালী টার্বোফ্যান ইঞ্জিন ব্যাবহার করা হয়েছে। এটিকে ১২,১০০ মিটার উচ্চতায় উড্ডয়ন করার উপযোগী করে ডিজাইন করা হয়েছে।
মিডিয়াম রেঞ্জের এই পরিবহন বিমানের ম্যাক্সিমাম সিট ক্যাপাসিটি ১৬৪টি। যার মধ্যে ৮টি বিজনেস ক্লাস এবং ১৫৬টি ইকোনোমী ক্লাস আসন অনুযায়ী সজ্জিত করেছে। অনেকটাই খরচ সাশ্রয়ী ও স্বল্প মূল্যের এই ন্যারো সেপের সি-৯১৯ বিমান দিয়ে অদূর ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক যাত্রী পরিবহন বিমানের বাজার নিয়ন্ত্রণ করার বিষয়ে আশাবাদী চীন। যদিও অবশ্য আমেরিকার বোয়িং কর্পোরেশন ও ইউরোপের এয়ারবাস এখনো পর্যন্ত আন্তর্জাতিক রুটের প্যাসেঞ্জার জেট লাইনার বা এয়ারক্রাফটের ৯০% পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ করে।
চীন মনে করে, তাদের নিজস্ব প্রযুক্তির সি-৯১৯ মিডিয়াম প্যাসেঞ্জার এয়ার লাইনারটি দিয়ে অদূর ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক বিমান বানিজ্যে আমেরিকার বোয়িং এবং ইউরোপের এয়ারবাসের একচেটিয়া সিন্ডিকেট ভেঙ্গে ফেলতে সক্ষম হবে। তাছাড়া বোয়িং ৭৩৭ এবং এয়ারবাস এ-৩২০ সিরিজের যাত্রী পরিবহণ বিমানের সাথে পাল্লা দিয়ে সারা বিশ্বে নিজের যোগ্য স্থান করে নিবে। তবে আন্তর্জাতিক সকল রুটেই এই বিমান অবতরণের অনুমতি খুব সহজে পাবে কিনা তা ভবিষ্যতই বলে দিবে।##