--- বিজ্ঞাপন ---

তারা আমাদের কাছে দক্ষ শ্রমিক চায়, আমরাও দক্ষ শ্রমিক প্রেরণে আগ্রহী

সৌদি আরব ও ইউএইর সঙ্গে দ্বি পাক্ষিক বৈঠক

0

জিয়া চৌধুরী, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে #

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী বৈশ্বিক অভিবাস মানদন্ড মেনে চলা ও অভিবাসন ব্যবস্থাপনা যুগোপযুগী করার ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকার দৃঢ় প্রতিশ্রুতির কথা পুর্নব্যক্ত করেন । তিনি দুবাই এ চলমান সপ্তম আবুধাবি ডায়ালগে প্লেনারী সেশনে বক্তব্য প্রদানকালে এই কথা বলেন। এ ছাড়া তিনি অভিবাসী শ্রমিক প্রেরণকারী ও গ্রহণকারী দেশসমূহের মধ্যে সহযোগিতা আরো জোরদার করার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। এসময় তিনি দেশের ১১০ টি কারিগরী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র সহ যুক্তরাজ্য, কোরিয়া, সৌদি আরব সহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দ্বি পাক্ষিক সভায় গৃহীত বিভিন্ন প্রকল্পের কথা তুলে ধরেন।
রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) মন্ত্রী পর্যায়ের এই পরামর্শ সভায় সংযুক্ত আরব আমিরাতের মানবসম্পদ ও আমিরাত সংক্রান্ত মন্ত্রী ডা. আব্দুর রহমান আল আওয়ার নতুন সভাপতি নির্বাচিত হয়ে মূল বক্তব্য প্রদান করেন। দুই দিনের সম্মেলনে বৈশ্বিক শ্রম বাজার নিয়ন্ত্রণ ও উদ্ভাবনী প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে দক্ষ শ্রমিক তৈরির উপর জোর আরোপ করা হয়।

আবুধাবি সংলাপের বর্তমান সদস্যভুক্ত মোট ১৬টি দেশ এতে অংশগ্রহণ করে। যার মধ্যে বাংলাদেশ, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, নেপাল, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম মিলে নয়টি শ্রম প্রেরণকারী দেশ রয়েছে। এ ছাড়া সাতটি শ্রমিক গ্রহীতা দেশের মধ্যে সংলাপে অংশ নেয় সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, কুয়েত, ওমান, কাতার, সৌদি আরব ও মালয়েশিয়া। এতে বাংলাদেশের পক্ষে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী এমপি সহ সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর শ্রম, মানবসম্পদ ও কর্মসংস্থান মন্ত্রীরা যোগ দেন। এ ছাড়া বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা, বেসরকারি খাত ও বেসামরিক প্রতিনিধিরা এতে অংশ নেন। এসময় শ্রমিক গ্রহীতা দেশগুলো শ্রমিকদের দক্ষতার বৃদ্ধির বিষয়ে অধিকতর গুরুত্ব দেন।

একই দিন স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ৩০মিনিটে দুবাইয়ের ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে সৌদি আরবের মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আহমাদ বিন সুলাইমান আলরাজি ও বিকাল তিনটায় সংযুক্ত আরব আমিরাতের মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ডা. আব্দুর রহমান আল আওয়ার এর সাথে দ্বি পাক্ষিক বৈঠক করেন প্রতিমন্ত্রী।
প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী  বলেন, আবুধাবি ডায়ালগে আসার পর অনেকটা অভিজ্ঞতা হয়েছে। আরো অভিজ্ঞতার প্রয়োজন আছে। আমাদের এখন মূল লক্ষ্য হলো, দক্ষ শ্রমিক বিদেশে প্রেরণ করার জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। যেসকল দেশ শ্রমিক নিবে তারা এই বিষয়টি অবগত করেছে। আজকের আলোচনার বিষয়ও ছিল এটি। দ্বি পাক্ষিক আলোচনা আরো চলবে। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে তাদেরকে আমরা বাংলাদেশে যেতে দাওয়াত দিয়েছি। তারা দাওয়াত গ্রহণ করেছে। কিছুদিনের মধ্যে তারা তারিখ জানাবে। সেই অনুযায়ী দুই দেশের মধ্যে সুসম্পর্কে মাধ্যমে আমরা কাজ করে যাবো।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, তারা আমাদের কাছে দক্ষ শ্রমিক চায়। আমরাও দক্ষ শ্রমিক প্রেরণে আগ্রহী। বিশেষ করে আমাদের কাছে যেসব দক্ষতা সম্পন্ন ডাক্তার, নার্স, প্রকৌশলী, ড্রাইভার, নিমার্ণ শ্রমিক আছে, এসব শ্রমিকদের নিতে বলেছি। সে ক্ষেত্রে তারা শিক্ষাগত সনদ ও দক্ষতা সনদের উপর গুরুত্ব দিচ্ছে। এ ছাড়া আমাদের যেসব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আছে, সেখান থেকে তাদের চাহিদা অনুযায়ী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। প্রয়োজনে এসব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে তিন থেকে দশটি সেন্টার তাদের জন্য বরাদ্ধ দিয়ে দিবো। সেখানে তারা দক্ষ শ্রমিক তৈরি করে নিতে পারবে। এসব বিষয়ে আমাদের টিম কাজ করছে।

আবুধাবি ডায়ালগের বিষয়ে দেশটিতে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত মো. আবু জাফর জানান, আবুধাবি ডায়ালগে গত দুই দিনের আলোচনা শেষে একটি খসড়া প্রকাশ করা হচ্ছে। শ্রমিক প্রেরণকারী দেশ ও শ্রমিক গ্রহণকারী দেশগুলোর অংশগ্রহণে আলোচনার মাধ্যমে এই খসড়া তৈরি করা হয়। এই খসড়া মাধ্যমে আগামী বছরগুলোতে আবুধাবি ডায়লগে অন্তর্ভূক্ত দেশগুলো শ্রমিক পাঠানোর ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার ও নতুন যেসব খাতে দক্ষতা সম্পন্ন শ্রমিক দরকার যেমন- হেলথ কেয়ার প্রফেশনাল, গ্রিন জব, নবায়ন যোগ্য জ্বালানীর ক্ষেত্রে যে নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে সেগুলো ও আইটি সেক্টরে মতো খাতে দক্ষতা বাড়ানোর মতো বিষয়গুলো কিভাবে সহজ করা যায় এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এর ভিত্তিতে আগামী দুই মাস পর ডিক্লেরাশেন বের হবে। যেখানে শ্রমিক প্রেরণকারী দেশগুলো কিভাবে কাজ করবে, তাদের দক্ষ শ্রমিক প্রস্তুত, প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা কি হবে এবং প্রয়োজনীয়তার ভিত্তিতে শ্রমিক সরবরাহের বিষয়টি ঠিক করা হবে। এটির ভিত্তিতে দ্বি পাক্ষিক শ্রমিক পাঠানো যে চুক্তিগুলোর রয়েছে সেগুলো বাস্তবায়িত হচ্ছে।

সৌদি আরব ও ইউএই’র মানবসম্পদ মন্ত্রীদ্বয়ের সঙ্গে দ্বি পাক্ষিক বৈঠকের বিষয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশের যেসব শ্রমিক সৌদি আরবে কাজ করছে তাদের কর্মদক্ষমতা ও বিভিন্ন গুণাবলীর প্রশংসা করেছে। তারা সবসময় বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী। সামনের দিনগুলোতে দক্ষ শ্রমিক তৈরির ব্যাপারে সৌদি আরব তাগিদ দিয়েছে।

আবু জাফর বলেন, আরব আমিরাতে যখন নির্মাণ সেক্টরে কাজের ক্ষেত্র সংকুচিত হচ্ছে তখন অন্যান্য দেশগুলোতে নির্মাণ সেক্টরের কাজে ক্ষেত্র বাড়ছে। সৌদি আরব বড় বড় মেঘা প্রকল্প হাতে নিয়েছে। আগামীতে তাদের বড় দুটো বড় প্রকল্প আছে। ২০৩০ সালে ওয়ার্ল্ড এক্সপো, ২০৩৪ সালে বিশ্বকাপ ফুটবল। এই প্রকল্পে প্রচুর নির্মাণ শ্রমিকের প্রয়োজন হবে। এ ছাড়া যেসব ক্ষেত্রে দক্ষ শ্রমিক প্রয়োজন সেসব সেক্টরের শ্রমিক নিতে চায় সৌদি আরব। তারা হেলথ কেয়ার সেক্টরে দক্ষ শ্রমিক নিতে চায়। এই ব্যাপারে তারা সামনের দিনগুলোতে সরকারের সঙ্গে আলাপ করবে। এখন বিষয় হচ্ছে- আমরা কিভাবে আমাদের শ্রমিকদের দক্ষ করে তুলবে ।

আরব আমিরাত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সৌদি আরব যেমন দক্ষ শ্রমিক চায় তেমনি আমিরাতে হেলথ কেয়ার সেক্টরেও দক্ষ শ্রমিকের চাহিদা রয়েছে । আমাদের চ্যালেঞ্জও রয়েছে। এই লোকগুলোকে দেশে যথাপোযুক্তভাবে প্রশিক্ষণ দিতে । আমাদের যেসব ম্যানপাওয়ার এজেন্সি আছে তাদেরকে বিষয়টি অনুধাবন করতে হবে। এবং সেভাবে তারা পাইভেট সেক্টর থেকে শ্রমিকদের প্রশিক্ষিত করে তুলেন সেই বিষয়টিতে আমাদের অধিক নজর দিতে হবে। তাহলে আগামীদিনগুলোতে বাংলাদেশি শ্রমিকদের ক্ষেত্রে বেশ সাফল্য অর্জন করা যাবে।

এসময় রাষ্ট্রদূত বিদেশে শ্রমিক প্রেরণের ক্ষেত্রে শ্রমিকদের দক্ষতার সনদ জাল-জালিয়তি হ্রাস করার বিষয়েও যথাযথ নজরদারীর কথা জানান।##

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.