--- বিজ্ঞাপন ---

পশ্চিমা বিশ্বের অস্ত্র ও অর্থ সহায়তায় অনিশ্চয়তার পথে ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ

0

সিরাজুর রহমান, বিশেষ প্রতিনিধি#

গত ২০২২ সালের ২৪শে ফেব্রুয়ারি থেকে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসন রুখে দিতে পশ্চিমা বিশ্ব সম্মিলিতভাবে বিগত ২ বছরে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে ফেলেছে। যার মধ্যে আমেরিকা একাই আনুমানিক ১০৫ বিলিয়ন ডলার এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সকল দেশ কানাডাসহ একত্রে প্রায় ৯৫ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ ব্যয় করেছে ইউক্রেনের পিছনে। যায় মধ্যে অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ, মানবিক, আর্থিক, সামরিক প্রশিক্ষণ সহায়তার অংশ হিসেবে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা হয়।

দীর্ঘ মেয়াদি এই ভয়াবহ যুদ্ধে ইউক্রেনকে বাঁচাতে গিয়ে ইউরোপের অনেক দেশের অস্ত্র ভান্ডারে এখন টান পড়তে শুরু করেছে। তার পাশাপাশি অনেক দেশ অস্ত্র সরবরাহ বন্ধের বিষয়টি বিবেচনা করছে এবং কোন কোন দেশ তা ইতোমধ্যেই সীমিত করে ফেলেছে। তাছাড়া ইউক্রেন সরকার প্রধানের বিরূপ আচরণ নিয়ে এর আগে সমালোচনা করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কিছু দেশ। এদিকে সাম্প্রতিক সময়ে হাঙ্গেরির প্রবল আপত্তি সত্ত্বেও ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্য সকল দেশ একত্রে যে কোন মূল্যে ইউক্রেনকে সর্বাত্মক সহযোগিতার বিষয়ে আশ্বাস প্রদান করেছে।

আসলে অনেক আগে থেকেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পক্ষ থেকে ইউক্রেনকে আরও অর্থ সহায়তা দেওয়ার বিষয়ে প্রবল আপত্তি জানিয়ে আসছিল হাঙ্গেরি। কিন্তু এবার রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসন রুখে দিতে হাঙ্গেরির আপত্তিকে পাশ কাটিয়েই কিয়েভকে বিপুল পরিমাণ অর্থ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে ইইউর বাকি সদস্য দেশগুলো। তারা এবার ইউক্রেনকে পরিকল্পনা মাফিক এবং পর্যায়ক্রমে চলতি ২০২৪ সাল থেকে ২০২৭ সালের মধ্যে ঋণ হিসেবে ৩৩ বিলিয়ন ইউরো বা ৩৫.৬৪ বিলিয়ন ডলার দিতে চায়। তার পাশাপাশি অনুদান হিসেবে আরও ১৭ বিলিয়ন ইউরো বা ১৮.৩৬ বিলিয়ন ডলার দেবার বিষয়ে অঙ্গীকার করেছে। আর এই বিপুল পরিমাণ অর্থ সরাসরি ইইউ’র তার নিজস্ব তহবিল থেকে পর্যায়ক্রমে সরবরাহ করবে।

এদিকে যুদ্ধ শুরু থেকে চলতি ২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত আমেরিকা এককভাবে ইউক্রেনকে প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলারের অধিক নগদ অর্থ, অস্ত্র সরবরাহ, মানবিক, সামরিক সহায়তা, প্রশিক্ষণ, অস্ত্র ও গোলাবারুদ ক্রয় বাবদ দিয়েছে। যদিও এখনো পর্যন্ত আমেরিকার সরাসরি সেনা পাঠানোর মতো কোন আলামত বিশ্বের সামনে প্রকাশ হয়নি। আর আমেরিকার বাইডেন প্রশাসন গত ২০২৩ সালের শেষের দিকে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর হাতে ৩১টি আব্রামস এম১এ২ মেইন ব্যাটল ট্যাংক তুলে দিলেও সরাসরি সেনা পাঠানোর বিষয়টি খারিজ করে দেয়।

আমেরিকা এখন নিজেই প্রায় ৩৪ ট্রিলিয়ন ডলারের পাহাড় সমান ঋণ ও দেনায় ডুবে থাকলেও ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়াকে সামরিক দিক দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত করতে যুদ্ধের শুরু থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১১৩.৪ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে। আবার চলতি ২০২৪ সালেও নতুন করে হয়ত প্রায় ৫০ বিলিয়ন ডলারের অধিক অর্থ ও অস্ত্র ইউক্রেনের জন্য বরাদ্দ দিতে যাচ্ছে কিংবা হয়ত ইতোমধ্যেই দিয়ে ফেলেছে। যদিও ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা বাবদ বিলটি আমেরিকার কংগ্রেসে অনুমোদন হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। আর আগে ইসরাইল ও ইউক্রেনের জন্য বরাদ্দকৃত সামরিক সহায়তা বিল কংগ্রেসে ভোটাভুটিতে বাতিল হয়ে যায়।

এদিকে গত ২০২৩ সালের শেষের দিকে পশ্চিমা মিডিয়ায় প্রকাশ হয় যে, ইউক্রেনকে দেয়া প্রায় অর্ধশত নগদ ডলারের সামরিক সহায়তা ও অনুদানের প্রায় ৩০% থেকে ৩৬ শতাংশ পর্যন্ত ইউক্রেনের অতি মাত্রায় দুর্নীতিবাজ সামরিক ও সরকারি কর্মকর্তারা লুটপাট করে ইতোমধ্যেই শেষ করে ফেলেছে কিংবা অবৈধভাবে ইউরোপ বা অন্য কোন দেশে পাচার করে ফেলেছে। যা ইউক্রেনে পুনরায় আবার ফেরত আসার সম্ভাবনা একেবারে নেই বললেই চলে। এই হলো ইউক্রেনের বর্তমান প্রশাসনের নৈতিক অবস্থা। তাছাড়া গত ২০২১ সালের দিকে ইউক্রেনের একমাত্র জেট ইঞ্জিন ম্যানুফ্যাকচারিং “মোটরসীচ” কোম্পানি বিলিয়ন ডলার ঘুষ বা উৎকোচ গ্রহণের মাধ্যমে চীনের কাছে বিক্রি করা প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছিল দেশটির কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা। তবে পরবর্তীতে আমেরিকার সরাসরি হস্তক্ষেপে এ অপকর্ম থেকে সরে আসে ইউক্রেন।

এখানে প্রকাশ যোগ্য যে, ইউক্রেন যুদ্ধে লক্ষ লক্ষ সামরিক ও বেসামরিক নাগরিক মারা গেলেও এতে পশ্চিমা বিশ্বের কিছুই যায় কিংবা আসে না। বরং তার চায় ইউক্রেনকে ব্যবহার করে রাশিয়াকে ধ্বংস করতে বা সামরিক সক্ষমতা ও বৈশ্বিক প্রভাব যতটা সম্ভব হ্রাস করে দিতে। আর এভাবে যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করতে গিয়ে এখন নিজেরাই কিনা চরম বিপাকে পড়ে গেছে। ইউক্রেনকে নির্বিচারে অস্ত্র দিতে গিয়ে এখন ইউরোপের অনেক দেশের নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা অনেকটাই ঝুঁকির মুখে রয়েছে। এমনকি তাদের নিজস্ব অস্ত্র ভান্ডারে ঘাটতি দেখা দিতে শুরু করে দিয়েছে। এদিকে ইউক্রেনের প্রশাসনের বিরূপ আচরণের কারণে হয়ত চলতি ২০২৪ সাল থেকেই পশ্চিমা বিশ্বের অনেক দেশ ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে নিজেদেরকে সরিয়ে নেয়া কিংবা সামরিক সহায়তা সীমিত করে দিতে চায়।

গত ২০২২ সাল থেকে চলমান ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের উত্তাপে বর্তমানে সারা বিশ্বের প্রায় অধিকাংশ দেশই অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিশেষ করে স্বল্প আয়ের ও উন্নয়নশীল দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকট এবং বাণিজ্য ঘাটতি ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। তার পাশাপাশি এই দীর্ঘ মেয়াদি যুদ্ধে জড়িয়ে বর্তমানে আমেরিকাসহ গোটা ইউরোপ বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মহামন্দার কবলে পড়ে অনেকটাই বিপর্যস্থ হয়ে পড়েছে। অথচ রাশিয়ার সাথে ইতিবাচক আলোচনার মাধ্যমে যুদ্ধ বিরতি কিংবা নতুন কোন চুক্তিতে গিয়ে সংকট নিরসনের মতো ইতিবাচক পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।##

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.