--- বিজ্ঞাপন ---

প্রথম ফ্লাইট টেস্ট সম্পন্ন করে ভারতের ‘তেজাস’ মার্ক-১এ সিরিজের যুদ্ধবিমান

0

সিরাজুর রহমান, বিশেষ প্রতিনিধি#
গত ২৮শে মার্চ বৃহস্পতিবার ভারতের হিন্দুস্থান এ্যারোনেটিকস লিমিটেড (এইচএএল) তৈরি ‘তেজাস’ মার্ক-১এ সিরিজের অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান সফলভাবে আকাশে প্রথম ফ্লাইট টেস্ট সম্পন্ন করে। এটি মূলত ব্যাঙ্গালুরের আকাশে সফলভাবে একটানা ১৫ মিনিট উড্ডয়ন করে এবং এর সিরিয়াল নম্বর হচ্ছে এল এ-৫০৩৩। যাকে ভারতের নিজস্ব প্রযুক্তির ডিফেন্স এভিয়েশন সেক্টরে এক মাইলফলক অর্জন হিসেবে দেখা হচ্ছে।
তবে চমক হিসেবে আগামীকাল ৩১মার্চ পরিকল্পনা মাফিক আনুষ্ঠানিক ভাবে ভারতের বিমান বাহিনীর হাতে তুলে দেয়া হতে পারে এই নতুন মার্ক-১এ সিরিজের যুদ্ধবিমানের প্রথম ইউনিট। তাছাড়া এই সিরিজের যুদ্ধবিমানের দ্বিতীয় ইউনিটটি খুব সম্ভবত চলতি ২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে সরবরাহ করা হবে।
‘তেজাস’ যুদ্ধবিমান মূলত ডিজাইন ও তৈরি করে ভারতের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত হিন্দুস্থান এ্যারোনেটিকস লিমিটেড (এইচএএল)। প্রতিষ্ঠানটি এবার নিজস্বভাবে ডিজাইনকৃত ‘তেজাস’ যুদ্ধবিমানের পূর্বের সকল প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতাকে কাটিয়ে উঠে আরো আধুনিক এবং উন্নত প্রযুক্তির সমন্বয়ে নতুন তেজাস মার্ক-১এ সিরিজের যুদ্ধবিমানের প্রডাকশন লাইন চালু করেছে। যা পর্যায়ক্রমে ভারতের বিমান বাহিনীর হাতে তুলে দিতে চায়।
ভারতের বিমান বাহিনী বর্তমানে সিঙ্গেল ইঞ্জিনের ৩২টি ‘তেজাস’ এমকে-১ সিরিজের যুদ্ধবিমান অপারেট করে। তবে এখনো পর্যন্ত এই যুদ্ধবিমানের প্রায় ৪৫% যন্ত্রাংশ ও প্রযুক্তি নিজ দেশেই উৎপাদন করা হলেও এর গুরুত্বপূর্ণ অংশ যেমন ইঞ্জিন, এভিয়নিক্স সিস্টেম, রাডার আমেরিকা বা অন্য কোন দেশ থেকে আমদানি করা হয়। তবে ভারত সরকারের আর্থিক সহায়তা ও নির্ভরযোগ্য দেশীয় প্রযুক্তি ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির তৈরি যন্ত্রাংশ ও ডিভাইস ব্যবহার করে এর প্রডাকশন ক্যাপাবিলিটি ৬০% পর্যন্ত বৃদ্ধি করতে কাজ করে যাচ্ছে ভারত।
ভারতের বিমান বাহিনী অদূর ভবিষ্যতে পর্যায়ক্রমে মোট ১৭০টি সিঙ্গেল সিটের ‘তেজাস’ মার্ক-১এ সিরিজের অ্যাডভান্স যুদ্ধবিমান ও ১৭টি মার্ক-১ সিরিজের ট্রেইনার ভার্সন বিমান অপারেট করবে। তার পাশাপাশি বিমান বাহিনীতে থাকা সকল অতি পুরোনো যুদ্ধবিমান পর্যায়ক্রমে অবসরে পাঠিয়ে নতুন প্রজন্মের হাইলি অ্যাডভান্স কমব্যাট এয়ারক্রাফট সার্ভিসে আনার পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে ভারত।
ভারতের তৈরি ‘তেজাস’ মার্ক-১এ সিরিজের যুদ্ধবিমানে ইসরাইলের তৈরি অ্যাডভান্স ইএল/এম-২০৫২ এবং উত্তম এইএসএ রাডার, সেলফ প্রটেকশন জ্যামার, রাডার ওয়ার্নিং রিসিভার ও মাউন্ট এক্সটার্নাল (ইএমসি) পড ইনস্টল করা হয়েছে। আসলে ভারত গত ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে ‘তেজাস’ মার্ক-১এ সিরিজের যুদ্ধবিমান বিশ্বের সামনে প্রথম প্রোটোটাইপ কপি উন্মোচন করে এবং এই প্রোটোটাইপ কপির সফল ফ্লাইট টেস্ট সম্পন্ন করা হয় গত ২০২২ সালের ২০শে মে।
ভারতের হিন্দুস্থান এ্যারোনেটিকস লিমিটেড (এইচএএল) ‘তেজাস’ মার্ক-১ সিরিজের যুদ্ধবিমান অপেক্ষা মার্ক-১এ সিরিজের যুদ্ধবিমান কিছুটা লাইট ওয়েট করে তৈরি করেছে। এতে করে নতুন সিরিজের মার্ক-১এ সিরিজের লাইট কমব্যাট এয়ারক্রাফটের ওয়েপন্স ক্যারি ক্যাপাবিলিটি কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং আগের ভার্সনের সকল সীমাবদ্ধতা সর্বোচ্চভাবে সমাধানের চেষ্টা করা হয়েছে। তার পাশাপাশি দেশীয় ডিফেন্স টেক জায়ান্ট কোম্পানির তৈরি ওয়েপন্স এন্ড এভিয়নিক্স সিস্টেম ব্যবহারের বিষয়ে অধিক গুরুত্ব দেয়া হয়।
তেজাস যুদ্ধবিমান গত ২০১৫ সালে সার্ভিসে আসলেও এখনো পর্যন্ত মাত্র একটি যুদ্ধবিমান আকাশে ধ্বংস হয়েছে। যদিও সারা বিশ্বের প্রথম সারির সকল যুদ্ধবিমান কারিগরি ত্রুটিজনিত কারণে কম বা বেশি ধ্বংস হয়। তবে এটা ঠিক যে, ‘তেজাস’ কমব্যাট এয়ারক্রাফটকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডেডিকেটেড এফ-১৬ই/এফ (ব্লক-৭০) ফাইটিং ফ্যালকন যুদ্ধবিমানের পর্যায়ের পৌঁছে গেছে তা বলার সময় কিন্তু এখনো পর্যন্ত হয়নি।
এই যুদ্ধবিমানের ২,৪৫৮ কেজি ফুয়েলের পাশাপাশি ম্যাক্সিমাম ৫,৩০০ কেজি ওজনের পে-লোড ক্যারি করার উপযোগী করে ডিজাইন করা হয়েছে। এখানে প্রকাশ যোগ্য যে, ভারতের হিন্দুস্থান এ্যারোনেটিকিস লিমিটেড বর্তমানে নিজস্ব বা দেশীয় প্রযুক্তির তৈরি ১১০ কিলোমিটার রেঞ্জের অস্ত্র মার্ক-১ এয়ার টু এয়ার মিসাইল ও তার পাশাপাশি অত্যাধুনিক ব্রহ্মস-এনজি এয়ার লঞ্চড বেসড ক্রুজ মিসাইলের ব্যবহারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে ভারতের বিমান বাহিনী।
তাছাড়া ‘তেজাস’ মার্ক-১এ সিরিজের যুদ্ধবিমানের ক্ষেত্রে বন্ধুভাবাপন্ন দেশ থেকে আমদানি করা আর-৭৩/এমবিডিএ মেটওর এয়ার টু এয়ার মিসাইল, ফ্রান্সের এএএসএম- হ্যাম্মার এয়ার টু গ্রাউন্ড মিসাইল এবং কেএইচ-৩৫/৫৯ এন্টিশীপ মিসাইল ব্যবহারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ভারত। এদিকে ইঞ্জিন হিসেবে আমেরিকার জেনারেল ইলেক্ট্রিক্স কোম্পানি তৈরি শক্তিশালী এফ-৪০৪-জিই-আইএন-২০ আফটার টার্বোফ্যান জেট ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে।
সূত্র : হিন্দুস্থান টাইমস

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.