--- বিজ্ঞাপন ---

বৈশ্বিক পর্যায়ে বনভূমি সুরক্ষার আন্দোলন বাস্তবে, নাকি কাগজে কলমে?

0

সিরাজুর রহমান, বিশেষ প্রতিনিধি#
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) এর দেয়া তথ্যমতে, গত ২০২০ সালের হিসেব অনুযায়ী সারা বিশ্বের মোট বনভূমির পরিমাণ হচ্ছে মোট স্থলভাগের ৩০.৪%। সেদিক বিবেচনায় বর্তমানে পৃথিবীর ভূভাগে মোট বনভূমির পরিমাণ হচ্ছে ৪০.৬ মিলিয়ন বর্গ কিলোমিটার। তবে একক দেশ হিসেবে সারা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বনভূমি রয়েছে রাশিয়ায়। গত ২০২০ সালের হিসেব অনুযায়ী রাশিয়ার মোট বনভূমির পরিমাণ ছিল ৮.১৫ মিলিয়ন বর্গ কিলোমিটার।
‘ওয়াল্ডওমেটার’ ওয়েবসাইটের দেয়া তথ্য মতে, রাশিয়ার পাশাপাশি বিশ্বের শীর্ষ স্থানীয় বনভূমির দেশের মধ্যে ব্রাজিলের প্রায় ৪.৯২ মিলিয়ন বর্গ কিলোমিটারের বনভূমি রয়েছে। তাছাড়া কানাডার ৩.৪৭ মিলিয়ন বর্গ কিলোমিটার, আমেরিকার ৩.১১ মিলিয়ন বর্গ কিলোমিটার এবং চীনের প্রায় ২.১১ মিলিয়ন বর্গ কিলোমিটারের বিশাল বনভূমি রয়েছে। আবার আফ্রিকা মহাদেশে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ বনভূমি রয়েছে ডিআর কঙ্গতে। দেশটিতে মোট বনভূমির পরিমাণ প্রায় ১.৫২ মিলিয়ন বর্গ কিলোমিটার।
‘ওয়াল্ডওমেটার’ ওয়েবসাইটের দেয়া তথ্যমতে, দক্ষিণ এশিয়ার সামগ্রিক বনভূমির হিসেবে ভারতের মোট ৭,১০,৪০০ বর্গ কিলোমিটার এবং বাংলাদেশের মোট ১৪,২৩৮ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বনভূমি রয়েছে। যা মোট ভূমির প্রায় ১৫.৫৮% হচ্ছে বনভূমি। যদিও বাংলাদেশের বৃক্ষ আচ্ছাদিত ভূমির পরিমাণ দেশের মোট আয়তনের ২২.৩৭% পর্যন্ত ছড়িয়ে রয়েছে। তবে পরিবেশ বিজ্ঞানীরা মনে করেন যে, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় যেকোনো দেশে কমপক্ষে ২৫% বনভূমি থাকা প্রয়োজন।
বৈশ্বিক বনভূমি সুরক্ষা নিয়ে কাজ করা ‘গ্লোবাল ফরেস্ট ওয়াচ’ সাম্প্রতিক সময়ে সারা বিশ্বে বনভূমি ধ্বংস হওয়া নিয়ে এক ভয়ঙ্কর তথ্য বিশ্বের সামনে তুলে ধরেছে। স্যাটেলাইট থেকে ধারণ করা তথ্য বিশ্লেষণ করে ‘গ্লোবাল ফরেস্ট ওয়াচ’ জানয়া যে, শুধু গত ২০২২ সালেই সারা পৃথিবীতে প্রায় ৪১ হাজার বর্গ কিলোমিটারের এলাকার রেইন ফরেস্ট ধ্বংস করা হয়েছে।
আর এই বনভূমি ধ্বংসের তালিকায় সবার উপরে নাম উঠে এসেছে দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের দেশ ব্রাজিলের। ব্রাজিল কার্যত একাই গত ২০২২ সালে সারা বিশ্বের মোট ধ্বংসকৃত বনভূমির ৪৩% একাই ধ্বংস করেছে। তার পাশাপাশি কঙ্গো প্রজাতন্ত্র ১৩% এবং বলিভিয়া ৯% বনভূমি ধ্বংস করে। তাছাড়া একই সময়ে ইন্দোনেশিয়া তাদের দেশের সংরক্ষিত বনভূমির একটি বড় অংশ ধ্বংস করে ফেলেছে।
গ্লোবাল ফরেস্ট ওয়াচের তথ্য বলছে, গত বছর চিরহরিৎ বন ধ্বংসের কারণে ২৭০ কোটি টন কার্বন ডাই–অক্সাইড গ্যাস নির্গত হয়ে। যা গত ২০২৩ সালে বনাঞ্চল ধ্বংস হয়ে আনুমানিক ২৯০ কোটি টন কার্বন বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে। আর এভাবেই প্রতিনিয়ত আশাঙ্কাজনক হারে বায়ুমন্ডলে বৃদ্ধি পাচ্ছে গ্রীনহাউজ গ্যাসের পরিমাণ। যা নিশ্চিতভাবে পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠকে আরো উপ্তত্ত করে তুলছে। যা থেকে রক্ষা পেতে এখনো পর্যন্ত বাস্তব সম্মত কিছুই করে দেখাতে পারিনি আমরা।
বর্তমানে সারা বিশ্বব্যাপী চলমান তীব্র মাত্রায় দাবদাহের ফলে বিপর্যস্ত হচ্ছে মানুষ এবং বিপন্ন হচ্ছে অন্যান্য সকল প্রাণী। আর ঠিক এই সময়ে প্রতি বছর প্রাকৃতিক পরিবেশ সুরক্ষায় গাছ লাগানোর আন্দোলন শুরু হয় সারা দেশে। তবে প্রতি বছর সারা বিশ্বে সে পরিমাণ গাছ লাগানো হয় তার চেয়ে কিন্তু অনেক বেশি পরিমাণ বনভূমি ও গাছপালা ধ্বংস করে ফেলা হচ্ছে। আবার নতুন করে যে গাছ লাগানো হচ্ছে বাস্তবে নিয়মিত পরিচর্চা ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে আনুমানিক ৮০% গাছ বড় হওয়ার আগেই শেষ হয়ে যায়।##

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.