সিরাজুর রহমান#
আলজেরিয়া সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়ার তৈরি অ্যাডভান্স এসইউ-৩৫এস ফ্ল্যাংকার-ই সিরিজের যুদ্ধবিমান আনুষ্ঠানিকভাবে মোতায়েন শুরু করেছে। এর পাশাপাশি ৪.৫ প্রজন্মের এসইউ-৩৫ যুদ্ধবিমানের তৃতীয় আন্তর্জাতিক ক্রেতা দেশ হিসেবে ইরান এবং চীনের পর আত্মপ্রকাশ করেছে আলজেরিয়া। মূলত গত ২০১৮ সালের দিকে প্রায় ৩.০০ বিলিয়ন ডলার প্যাকেজ মূল্যের মিশরের অর্ডারকৃত ২৪টি নতুন এসইউ-৩৫এস যুদ্ধবিমান আলজেরিয়ার কাছে সরবরাহ করেছে রাশিয়া।গত ২০১৮ সালের দিকে এই উন্নত যুদ্ধবিমানগুলো মূলত মিশরের অর্ডারের অধীনে তৈরি করা হয়। তবে পরবর্তীতে আমেরিকার অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক চাপের কারণে, বিশেষ করে CAATSA-এর অধীনে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এড়াতে মিশরের আল ফাত্তা আল সিসি সরকার এই চুক্তিটি বাতিল করে দেয়। এর ফলে রাশিয়া এই যুদ্ধবিমানগুলো অনেকটাই ছাড়কৃত মূল্য এবং সহজ শর্তে আলজেরিয়ার ক্রয় করে। তবে কৌশলগত কারণে এই চুক্তি বা ক্রয় প্যাকেজ মূল্য প্রকাশ করেনি রাশিয়া এবং আলজেরিয়া।
এদিকে আলজেরিয়ার প্রতিরক্ষা দপ্তরের দেয়া তথ্যমতে, দেশটি তার বিমান বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে ওম বৌঘি বিমান ঘাঁটিতে রাশিয়ার তৈরি ৪.৫ প্রজন্মের এসইউ-৩৫এস ফ্ল্যাংকার-ই সিরিজের যুদ্ধবিমান মোতায়েন শুরু করেছে। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে, চীন ও ইরানের পরে আলজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে এসইউ-৩৫ বিমান পরিচালনাকারী তৃতীয় বিদেশী দেশ হয়ে উঠেছে। যা কিনা দেশটির বিমান বাহিনীর আধুনিকায়ন এবং যুদ্ধ প্রস্তুতি বাড়ানোর চলমান প্রচেষ্টাকে আরও শক্তিশালী করবে।
রাশিয়ার সুখোই কর্পোরেশনের তৈরি এসইউ-৩৫এস সুপার ফ্ল্যাংকার-ই সিরিজের যুদ্ধবিমান হলো একটি সুপার ম্যানুভারেবল এবং বহুমাত্রিক যুদ্ধবিমান। এটি হচ্ছে পুরোনো এসইউ-২৭ যুদ্ধবিমানের ৪.৫ জেনারেশনের একটি আপগ্রেড ভার্সন। লং রেঞ্জের হেভি কমব্যাট এয়ারক্রাফট হিসেবে এতে দুটি শক্তিশালী এ এল-৪১এস১এস আফটার টার্বোফ্যান ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে। এই যুদ্ধবিমানটিকে উচ্চ গতিশীলতা, শক্তিশালী অস্ত্র ব্যবস্থা এবং উন্নত এভিয়নিক্স সিস্টেম দ্বারা সজ্জিত করা হয়েছে।
এর সর্বোচ্চ গতি প্রায় ম্যাক ২.২৫ (২,৭০০ কিলোমিটার/ঘণ্টা) এবং এর কমব্যাট রেঞ্জ প্রায় ৩,৬০০ কিলোমিটার। এটি এয়ার টু এয়ার এবং এয়ার টু গ্রাউন্ড মিশনের জন্য বিভিন্ন ধরনের মিসাইল এবং গাইডেড এন্ড আন-গাইডেড ওয়েপন্স বহন করে। বিশেষ করে এটিতে রাশিয়া তার আর-৭৭ এবং আর-৭৩ এয়ার টু এয়ার মিসাইল ইনস্টল করেছে। এর পাশাপাশি উন্নত এবং আধুনিক এভিয়েশন সিস্তেম হিসেবে Irbis-E প্যাসিভ ইলেকট্রনিক স্ক্যানিং অ্যারে (PESA) রাডার, উন্নত ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার সিস্টেম এবং ডিজিটাল ফ্লাই-বাই-ওয়্যার প্রযুক্তি দ্বারা সজ্জিত করা হয়েছে।
আলজেরিয়ান বিমান বাহিনীর এয়ার ফ্লিটের আকার ও কমব্যাট এয়ারক্রাফটের সংখ্যা খুব বেশি না হলেও শতভাগ রাশিয়ার তৈরি বেশ শক্তিশালী ও ডেডিকেটেড যুদ্ধবিমান দ্বারা সজ্জিত করা হয়েছে। তবে তাদের কমব্যাট এয়ারক্রাফটের শতভাগই হচ্ছে রাশিয়ার তৈরি যুদ্ধবিমান। যার মধ্যে দেশটির বিমান বাহিনীতে বর্তমানে ২৪টি এসইউ-৩৫ যুদ্ধবিমানের পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি সংখ্যক এসইউ-৩০এমকেএ যুদ্ধবিমান রয়েছে ৭৩টি (১০টি নতুন অর্ডার করা আছে)। তাছাড়া মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান ৩৯টি (নতুন ৫টি অর্ডার করা আছে) এসইউ-২৪ যুদ্ধবিমান রয়েছে ৪২টি।
এর পাশাপাশি আলজেরিয়ার বিমান বাহিনীতে মোট প্রায় ৩৩০টি কমব্যাট অ্যান্ড নন কমব্যাট হেলিকপ্টার রয়েছে। যার মধ্যে শক্তিশালী মিল মি-২৮ অ্যাটাক হেলিকপ্টার রয়েছে ৪২টি এবং মিল মি-২৪ অ্যাটাক হেলিকপ্টার রয়েছে ৩২টি। তবে সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো যে দেশটি কিন্তু ইতোমধ্যেই রাশিয়ার তৈরি ১৪টি হাইলি অ্যাডভান্স এসইউ-৫৭ নতুন প্রজন্মের ফাইটার জেট অর্ডার কনফার্ম করেছে। এর মাধ্যমে আলজেরিয়া আন্তর্জাতিক ক্রেতা দেশ হিসেবে পঞ্চম প্রজন্মের এসইউ-৫৭ ডেডিকেটেড যুদ্ধবিমানের প্রথম ব্যবহারকারী দেশ হতে যাচ্ছে।## তথ্যসূত্র: বুলগেরিয়ান মিলিটারি, জোনা মিলিটার, ডিফেন্স মিরর।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.