ইরানের সাথে কি যুদ্ধে লিপ্ত হচ্ছে আমেরিকা। ঘুরে ফিরে এ প্রশ্নটি সামনে আসছে বারবার। এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবর আমেরিকা বিভিন্ন দিকে বোমারু বিমান পাঠানোর কাজ শুরু করেছে। ভারত মহাসাগরে গোপন সামরিক ঘাঁটি দিয়াগো গার্সিয়ায় ছয়টি বি-৫২ স্ট্রাটোফোরট্রেস দীর্ঘ-পাল্লার বোমারু বিমান পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। শুক্রবার ভোরে মার্কিন ড্রোন হামলায় ইরানের প্রভাবশালী জেনারেল কাসেম সোলাইমানি নিহত হওয়ার পরে উত্তেজনার মধ্যেই এমন খবর এসেছে।
সোমবার অজ্ঞাত কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএনের বারবারা স্টার এক প্রতিবেদনে বলেন, নির্দেশ দেয়া হলে ইরানের বিরুদ্ধে অভিযানে প্রস্তুত এসব বোমারু বিমান। যদিও এই প্রতিবেদক বলেন, এই বোমারু বিমান মোতায়নে অভিযানের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে কোনো ইঙ্গিত বহন করছে না।
তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের এটাই একমাত্র বোমারু বিমান মোতায়েনের ঘটনা না। এর আগে গত বছরের মে-তে আল উদায়েদ বিমান ঘাঁটিতে চারটি দূরপাল্লার বোমারু পাঠিয়েছিল দেশটি। পেন্টাগনের বরাতে মেইল অনলাইনের খবরে জানা গেছে, ইরানের নিকটবর্তী মধ্যপূর্বাঞ্চলীয় কয়েকটি দেশে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটি রয়েছে। কিন্তু ইরানের দীর্ঘ পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের আওতায় বাইরে রাখতেই দিয়াগো গার্সিয়ায় এসব বিমান মোতায়েন করা হয়েছে।
১৮ শতকে ফ্রান্সের উপনিবেশ ছিল দিয়াগো গার্সিয়া। নারিকেল চাষ করতে সেখানে আফ্রিকান দাসদের নিয়ে আসা হয়েছিল। ১৮১৪ সালে দ্বীপটি ব্রিটেনের কাছে ছেড়ে দেয়া ফ্রান্স। ১৯০৩ সালে এটি মরিশাসের সঙ্গে একীভূত করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৬৫ সালে মরিশাস থেকে চাগোস দ্বীপকে আলাদা করে ফেলে ব্রিটেন। বিনিময়ে তাদের তিন কোটি ডলার দেয়া হয়েছে। বছর তিনেক পরে দেশটি স্বাধীন হয়ে গেলে দ্বীপটি ব্রিটিনের নিয়ন্ত্রণেই থেকে যায়। যদিও এটির বৈধ মালিকানা মরিশাসের।
ব্রিটেন এটাকে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চল নামে আখ্যায়িত করে। ১৯৬৬ সালে ৫০ বছরের জন্য দ্বীপটিকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ইজারা দেয় ব্রিটিশরা। ১৯৬৮ থেকে ১৯৭৩ সালের মধ্যে দ্বীপটি থেকে দুই হাজার চাগোসকে উচ্ছেদ করে তাদের মরিশাস ও সিসিলিসে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।
ভারতের কাছে ইরানের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রখাটা খুবই জরুরি৷ কারণ, এর সঙ্গে ভারতের বানিজ্যিক স্বার্থ রয়েছে৷ ইরান ভারত থেকে প্রচুর পরিমাণে চা, চাল ও অন্য জিনিস নেয়৷ ইরান থেকে তেল পাওয়াটা ভারতের কাছে খুবই জরুরি৷
পরিকল্পনা বিশারদ ও লেখক অমিতাভ রায় ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ”ইরানের চাবাহার বন্দরে বিপুল বিনিয়োগ, তাদের সহায়তায় পাকিস্তানকে এড়িয়ে আফগানিস্তান সহ পশ্চিম এশিয়ায় বানিজ্যিক যোগযোগ বাড়ানো এবং অবশ্যই তেল আমদানি করা ভারতের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ ট্রাম্প ইরানকে একঘরে করে রাখার নীতি নিয়েছেন৷ তাই নয়াদিল্লিকে তেহরানের থেকে দূরে রাখতে চাইছে তারা৷ আমেরিকা চায়, ইরান নয়, পুরো তেল সৌদি আরব থেকে কিনুক ভারত৷ এই অবস্থায় ভাপরত ও আমেরিকা নিজেদের জাতীয় স্বারথ বজায় রেখে বারসাম্য বজায় রাখতে চাইবে৷”
ফলে এই প্রেক্ষাপটে মোদী-ট্রাম্প কথা আলাদা মাত্রা পেয়ে যাচ্ছে৷ (সূত্রঃ যুগান্তর/দয়েৎসেভেলে)