মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম, (১০.০৯.২০১৯ ইং): ইসলামিক দুনিয়ার প্রভাবশালী দেশ সৌদি আরব । বর্তমানে বিশ্বের প্রধান অর্থাৎ ১ নং অস্ত্র আমদানীকারক দেশ। দুটি খবর নিয়ে বিশ্বের সামরিক অঙ্গনে বিশ্লেষকরা নানা হিসাব কষতে শুরু করেছেন। সৌদি আরবকে নিয়ে দুটি খবর সোমবার সর্বত্র বেশ আলোচিত হয়েছে । এর মধ্যে প্রধান সংবাদটি হচ্ছে সৌদী আরব পরমাণু প্রযুক্তি পেতে মরিয়া হয়ে প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছে। সে দেশের নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত জ্বালানি মন্ত্রী প্রিন্স আবদুল আজিজ বিন সালমান সোমবার সংযুক্ত আরব আমিরাতে পৌঁছেন।
সেখানে আবুধাবিতে বিশ্ব জ্বালানী কংগ্রেসের ৩৪তম সম্মেলনের উদ্বোধনী দিনে দেশটির জ্বালানি খাতে পরমাণু প্রযুক্তিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনার কথা সকলকে জানান। তিনি বলেন, তবে আমরা এব্যাপারে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে অগ্রসর হচ্ছি। তেলের উপর নির্ভরশীলতার কমিয়ে বিকল্প খাত থেকে জ্বালানি সংগ্রহ করতে ২ টি পরমাণু চুল্লি নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়ে আমরা এগুচ্ছি জানান তিনি । চুল্লিতে প্রাপ্ত সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম দিয়ে বেসামরিক খাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে তেলের উপর থেকে নির্ভরশীলতা কমাতে চায় দেশটি। তবে সামরিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সৌদি জ্বালানি মন্ত্রীর এ পরমাণু রিএ্যাক্টর নির্মাণের পরিকল্পনা আসলে ইরান কেন্দ্রিক ।
সামরিক পর্যবেক্ষকগণ বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে ইরান এতদঞ্চলে পরমাণু অস্ত্রের অধিকারী হয়ে উঠছে বিধায় তাকে মোকাবেলা করতেই সৌদি আরব সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম উৎপাদনের জন্য রিএ্যাক্টর নির্মাণ করতে চায়। যা দিয়ে পরমাণু বোমা বানানো যায়। সৌদি আরবের অন্যতম প্রতিপক্ষ শিয়া মুসলিম অধ্যুষিত দেশ ইরান আঞ্চলিক শক্তি হয়ে উঠবে এটা সৌদিরা দেখতে চায়না। বেসামরিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজে সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম ব্যবহার না করে পরমাণু বোমা বানানোর উদ্দেশ্যে ব্যবহার করবে আশংকায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ দেশগুলো জাতিসংঘ ও এর আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ)কে ইরানের উপর নজরদারী রাখছে।
শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের উদ্দেশ্যে নিয়ে অত্যধিক পরিশোধিত ইউরেনিয়াম দিয়ে বোমা বানানো যায়। রিএ্যাক্টরের হেভী ওয়াটার প্লুটোনিয়াম উৎপাদন করে যা পারমানবিক বোমায় ব্যবহার করা যায়। ইরান ৩.৫ ভাগ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম উৎপাদন করছে বেসামরিক পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য । এ হার অর্থাৎ ২০ ভাগ বাড়াতে চায় ইরান। যা দিয়ে বোমা বানানো যাবে আশংকা করা হচ্ছে। সৌদি আরব মূলত: ইরানকে ঘিরেই এ পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে বলে সামরিক বিশ্লেষকরা মনে করেন। সৌদি বর্তমান পরিকল্পনা মার্কিন সমর্থন নিয়েই হচ্ছে বলে ধারণা করছেন অনেকে।
দেশটি ইরানকে ঠেকাতে তার দেশও পরমাণু শক্তির অধিকারী হওয়ার অভিপ্রায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়েছে। সৌদি আরব বিশ্বের প্রধান অস্ত্র ক্রেতা দেশ। এটা আর থাকতে চায়না দেশটি। আজ অপর এক ঘোষণায় সৌদি সরকার জানিয়েছে অস্ত্র আমদানী কমাতে দেশটি এখন নিজেদের দেশেই সমরাস্ত্র কারখানা গড়ে তোলার জন্য বড় বড় অস্ত্র নির্মাতাদের অস্ত্র বানানোর লাইসেন্স দেবে।
মুসলিম বিশ্বে একমাত্র পরমাণু শক্তি অর্জনকারী দেশ হচ্ছে পাকিস্তান। বহু মার্কিন বাধা অতিক্রম করে দেশটি পরমাণু শক্তির অধিকারী হয়। সৌদি আরব পাকিস্তান থেকে যখনই চাইবে পরমাণু বোমা পাবে এমন কথাও শোনা গেছে। কারণ পাকিস্তানের পরমাণু বোমা বানান প্রকল্পে সৌদি আরব অর্থ যোগান দিয়েছিল বলে শোনা যায়। পাকিস্তান ১৯৯৮ সালের ২৮ মে সেদেশের বেলুচিস্তানের চাগি পর্বতে পাঁচটি পরমাণু বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়।
এরপর ৩০ মে আরও একটি পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পরমাণু শক্তির অধিকারী হয়। সম্প্রতি তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানও পরমাণু বোমা বানানোর জোর সংকল্প ব্যক্ত করে বলেছেন, পাশের দেশ ইসরাইল যদি গোপণে পরমাণু বোমার অধিকারী হয়ে থাকে এবং সেদেশকে নিয়ে কেউ উচ্চবাচ্য করেনা। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোকে ইঙ্গিত করে ইসরাইলকে ছত্রচ্ছায়া দেয়ার কথা উল্লেখ করেন। প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান গত ৪ সেপ্টেম্বর ক্ষমতাসীন দলের এক সমাবেশে বলেন, তুরস্ক পরমাণু শক্তির অধিকারী হতে পারবেনা এটা নিতে মেনে নেবেননা। বিজ্ঞানীদের মনে করেন, ইহুদী দেশ ইসরাইলের হাতে ৮০ থেকে ১০০টি পরমাণু বোমা মজুত রয়েছে।
## শহীদ, ১০.০৯.২০১৯ইং।