টালমাটাল ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইল

নেতানিয়াহুর পদত্যাগ দাবি, আড়াই লাখেরও বেশি মানুষের সমাবেশ

বিশেষ প্রতিনিধি ##

টালমাটাল ইসরাইল। ইসরাইলে সাধারনত এত বড় বিক্ষোভ আর কখনও হয়েছে কিনা সন্দেহ। অনেকদিন ধরে ইসরাইলিরা প্রেসিডেন্ট নেতানিয়াহুর পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছিল। এবার সেই আন্দোলন সামিল হলো আড়াই লাখেরও বেশি মানুষ। শনিবার এ বিপুল মানুষ আন্দোলনে নামে। গ্রেফতার করা হয়েছে কয়েক হাজার মানুষকে। বেশিরভাগ মানুষ সমবেত হয়েছে জেরুজালেমে।

হিব্রু পত্রিকা মারিভের এক জরিপে দেখা যায় ইসরাইলের ৫৪ শতাংশ মানুষ নেতানিয়াহুকে চায় না। পত্রিকার পাঠকরা এ বিষয়ে তাদের মতামত দিয়েছে। জরিপে অধিকাংশ পাঠক নেতানিয়াহুর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে বলে জানায় মিডেল ইস্ট মনিটর। জরিপে দেখা যায়, ৫৪ শতাংশ পাঠক চায় নেতানিয়াহু তার অবস্থান থেকে সরে দাঁড়াক। ৩৫ শতাংশ পাঠকের ইচ্ছা তিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব অব্যাহত রাখুক। বাকি ১০ শতাংশ কোনো মতামত দেয়নি। পত্রিকার রিপোর্টে বলা হয়, নির্বাচন হলে নেতার পার্টি লিকুদ ২০-২৫টির বেশি সিট পাবে না।নেতানিয়াহুকে নিয়ে ইসরাইলে সমালোচনার শেষ নেই। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অতি ঘনিষ্ট এই নেতানিয়াহু নাকি আমেরিকাতে গেলে বিশাল সুটকেস ভর্তি ময়লা কাপড় নিয়ে যান। আর সেগুলো মার্কিন নাগরিকদের দিয়ে ধৌত করান। ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়,নেতানিয়াহু সরকারি সফরে যুক্তরাষ্ট্রে আসলে প্রতিবারই মার্কিন প্রেসিডেন্টের গেস্ট হাউস ব্লেয়ার হাউসে উঠেন, যেটি হোয়াইট হাউসের উল্টোদিকে অবস্থিত। প্রতিবারই ইসরায়েল থেকে তিনি অনেকগুলো ব্যাগ ও সুটকেস সঙ্গে করে নিয়ে আসেন, যাতে ময়লা কাপড় ভর্তি থাকে। সেসব ময়লা কাপড় বিনা পয়সায় মার্কিন কর্মকর্তাদের কর্মী দিয়ে ধুয়ে নেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী। আর তিনি নাকি এসব কাপড় না ধুয়েও রাষ্ট্র থেকে খরচ নেন।

ইসরাইলে নেতানেয়াহুর বিরুদ্ধে আন্দোলন চলছিল দীর্ঘ দিন ধরে। বরাবর্য়োই মার্কন যুক্তরাষ্ট্র নেতানিয়াহুর পক্ষে সমর্থন জুগিয়ে চলেছেন। তবে এবার দেশজুড়ে ২ লাখ ৬০ হাজার মানুষ এ বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন।নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে করোনা মোকাবিলায় ব্যর্থতা, দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ তুলে এই বিক্ষোভ শুরু হয়। যা এখন সরকার পতনের আন্দোলনে রুপ নিয়েছে। নেতানিয়াহু দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হওয়ায় তিনি দেশ পরিচালনায় অযোগ্য আখ্যা দিয়ে পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন বিক্ষোভকারীরা। এছাড়াও বেকারত্ব বাড়তে থাকায় ক্ষুব্ধ কর্মহীন বহু ইসরাইলি।

যে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে এত অভিযোগ তিনি কিন্ত বসে নেই। ট্রাম্পের সহযোগিতায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সাথে সর্ম্পক জোরদার করে চলেছেন। দেশগুলোর সাথে ঢিলেঢালা কুটনৈতিক সম্পর্ক সচল করাতে নেতানিয়াহু বেশ তৎপর। বাহরাইনের সাথে ইসরাইলের আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার হয়েছে। সম্প্রতি মানামায় আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে এ সম্পর্ক শুরু হয়েছে । মানামায় ইসরাইলের একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাংবাদিকদের জানান,ইসরাইলী প্রতিনিধি দল ও বাহরাইন সরকারের কর্মকর্তারা এ সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষর করবেন।
জানা গেছে, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইন যথাক্রমে তৃতীয় ও চতুর্থ দেশ যারা ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে সম্মত হয়েছে। এর আগে ১৯৭৯ সালে মিশর এবং ১৯৯৪ সাল জর্ডান ইসরাইলের সাথে শান্তি চুক্তি করে। অথচ ইসরাইলের সাথে ফিলিস্তিনেএর সম্পর্ক নিয়ে কেউ একটি কথাও বলেনি। ইসরাইল দিনের পর দিন ফিলিস্তিনের ভুমি দখল করে রেখেছে, বোমা মেরে মানুষ মারছে, এসব বিষয়ে দেশগুলো নীরব ভূমিকা পালন করছে।

এসব চুক্তি মূলে রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইলের অস্ত্র বিক্রির বিষয়টি। এরই মধ্যে কাতার যে মার্কিনীদের কাছ থেকে মার্কিন এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান কিনছে সে বিষয়ে কথা উঠেছে। ইসরাইল বিক্রিতে বাধা দেবে বলে ঘোষণা দিয়েছে দেশটির গোয়েন্দামন্ত্রী এলি কোহেন। এগুলো শেষপর্যন্ত ইসরাইল সরবরাহ দেয় কিনা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইলি সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখার জন্য সচেষ্ট এখন ইসরাইল।

এদিকে আবার  ইসরাইলের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে আরেক আরব রাষ্ট্র জর্ডান। ইসরাইলি বিমান চলাচলের জন্য সৌদি আরবের পর জর্ডান নিজ দেশের আকাশসীমা মুক্ত করে দিয়েছে। ইসরাইল ও জর্ডানের সঙ্গে এ সংক্রান্ত একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এতে উভয় দেশের বাণিজ্যিক বিমান উভয়ের আকাশপথ ব্যবহার করতে পারবে। ইসরাইলি ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশনের বরাত দিয়ে এ খবর জানিয়েছে তুর্কি সংবাদ মাধ্যম ইয়েনি শাফাক। জানা গেছে,এই চুক্তির ফলে আরব বিশ্বের আকাশপথ ব্যবহার করে ইসরাইলি বিমান ইউরোপ ও উত্তর দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোতে অতিস্বল্প সময়ে ভ্রমণ করতে পারবে। অর্থাৎ এখন থেকে আর এসব দেশ যেতে হলে ইসরাইলি বিমানকে অনেক পথ ঘুরতে হবে না। চুক্তির ফলে ইসরাইলের জ্বালানি খরচ অনেক কমে যাবে ফলে বিমান ভাড়াও অনেক কমানো হবে।এদিকে প্রথম থেকেই এ চুক্তির বিরোধিতা করে আসছে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যিপ এরদোগান। গত মাসেই ফিলিস্তিনি ইস্যু নিয়ে হামাস নেতারা বৈঠক করেছেন এরদোগানের সঙ্গে। তুর্কি প্রেসিডেন্ট ফিলিস্তিন ইস্যুতে পূর্ণ সমর্থন দিয়েছেন। অন্যদিকে, চুক্তি বাস্তবায়নের পরই চলতি সপ্তাহের শুরুতে নতুন করে পশ্চিম তীরে অবৈধ স্থাপনা তৈরির অনুমোদন দিয়েছেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। তবে তার এমন অপকর্মের প্রতিবাদ জানিয়েছে তুরস্ক।### ১৮.১০.২০

 

 

ইসরাইলইহুদি রাষ্ট্রনেতানিয়াহুমধ্যপ্রাচ্যের সাথে ইসরাইল
Comments (০)
Add Comment