এক কেজি হাড় বিহীন মুরগীর মাংসের দাম ৬ লাখ ৪০ হাজার রিয়েল, বাংলাদেশী ১৩০৩ টাকা!

কোন পথে ইরানের অর্থনীতি

বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্য ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক ইস্যুতে ইরান ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হলেও দেশটি কিন্তু তার নিজের অর্থনীতিকে একটি স্থিতিশীল অবস্থানে নিয়ে যেতে পারেনি। মুলত ৮০ দশকের শুরু থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার দোসর পশ্চিমা দেশগুলোর দীর্ঘ মেয়াদী অর্থনৈতিক অবরোধ এবং বানিজ্যিক নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরানের জাতীয় অর্থনীতি, তেল শিল্প এবং রপ্তানি খাত মারাত্বকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। তাছাড়া সত্তরের দশকে রেজাশাহ পাহেলভীর শাসন আমলে মধ্যপ্রাচ্যে সবচেয়ে ধনী তিনটি দেশের একটি ছিল ইরান।

২০২১ সালের জুন মাসের হিসেব অনুযায়ী ইরানের নমিনাল জিডিপি ৬৮২.৮ বিলিয়ন ডলার এবং মাথাপিছু আয় ১২,৭৩০ ডলার দেখানো হলেও দেশটির সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা এবং আর্থিক ব্যবস্থাপনা খাত মোটেও সন্তোষজনক নয়। বরং ইরানের বার্ষিক জিডিপি বৃদ্ধির হার ২০২১ সাল শেষে ৩.১% প্রত্যাশা করা হলেও তা কিন্তু ২০২০ সাল শেষে -৬% এ নেমে যায়। ইরানের ২০২১ সালের হিসেব অনুযায়ী সার্বিক মুদ্রাস্ফীতির হার ৩৪.৫% এবং গড় বেকারত্বের হার প্রায় ১৮% এসে ঠেকেছে।

আই এম এফ এর দেয়া তথ্যমতে, ২০২০ সালে করোনা মহামারি চলাকালে ইরানের ফরেন কারেন্সি রিজার্ভ আশাঙ্খাজনক হারে মাত্র ১২.৪ বিলিয়ন ডলারে নেমে যায়। যদিও ২০২১ সালে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানী তেলের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় ইরানের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অনেকটা বৃদ্ধি পেয়ে আবারো ৩১.৪ বিলিয়ন ডলারে উঠে এসেছে। তবে আমেরিকার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অর্থনৈতিক অবরোধের মধ্যেও দেশটি কাছে ২০১৮ সালে ১২২.৫ বিলিয়ন ডলারের বিশাল আকারের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল। যেখানে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে ইরানের সেন্ট্রাল ব্যাংকে ৮৬ বিলিয়ন ডলার এবং ২০১৫ সালে ১২৮ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল।

চলতি ২০২১ সালের ১৭ই নভেম্বরের হিসেব অনুযায়ী ইরানে এক ডলারের বিপরীতে প্রায় ৪২,২৫০ ইরানী রিয়াল গুনতে হচ্ছে দেশটির সাধারণ জনগণকে। যা কিনা আমাদের দেশের টাকার হিসেবে ১.০০ টাকার বিপরীতে ৪৯১.৯০ ইরানি রিয়াল বিনিময় মূল্য হয়ে যায়। অর্থ্যাৎ এ মুহুর্তে ইরানে মাত্র ১০০ ডলার নিয়ে কেউ ভ্রমনে গেলে তিনি ৪২ লক্ষ ২৫ হাজার ইরানী রিয়ালের সমপরিমাণ অর্থ ব্যয় করার সুযোগ পেয়ে যাবেন। যদিও দেশটি উচ্চ হারের দ্রব্যমূল্যের বিচারে এই পরিমাণ অর্থ একেবারেই নগন্য বলেই প্রতিয়মান হয়।

বর্তমানে ইরানের বিপ্লবী সরকার দেশের সার্বিক মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং বাজারে অর্থ প্রবাহ ঠিক রাখতে ১০০, ২০০, ৫০০ এবং ১,০০০ ইরানী রিয়ালের পাশাপাশি ৫,০০০, ১০,০০০, ২০,০০০, ৫০,০০০, ১,০০,০০০ এবং ৫,০০,০০০ মূল্য মানের ইরানী রিয়াল ব্যাংক নোট ছাড়া হয়েছে। তাছাড়া ইরানে বর্তমানে ৫০, ১০০, ২৫০, ৫০০, ১,০০০, ২,০০০ এবং ৫,০০০ রিয়াল মূল্য মানের ধাতব কয়েন প্রচলতি রয়েছে। তবে ইরানে সরকারি ভাবে এক ডলারের বিপরীতে ৪২,২৫০ ইরানী মুদ্রা মান নির্ধারণ করে দেয়া হলেও ইরানের খোলা বাজারে ডলারের তীব্র সংকটের মুখে ১ ডলারের বিনিময় মূল্য হিসেবে ২,৭৫,৫৫০ ইরানী রিয়েল খরচ করতে হচ্ছে।

এদিকে ইরানে খাদ্য ও অন্যান্য সামগ্রীর খুচরা বাজার মূল্য পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, ইরানের বাজারে ১ কিজি হাড় বিহীন প্রক্রিয়াজাত মুরগীর মাংসের মূল্য ৬,৪০,০০০ ইরানী রিয়ালের সমান প্রায়। যা বাংলাদেশী মুদ্রার হিসেবে ১,৩০৩ টাকার সমান। আবার ১ লিটার দুধের দাম ১,০৮,৭২০ রিয়াল, ১ হালি ডিমের দাম ৭৫,৮০০ রিয়াল, ১ কেজি আপেলের দাম ১,৯৩,৯০০ রিয়াল, ১কেজি টমেটো ১,১৪.৬০০ রিয়াল, এবং ১ কেজি আলু ৭৮,২০০ রিয়াল। তাছাড়া ২ লিটার কোকাকোলার দাম ১,২৩,১০০ রিয়াল।

ইরানের বড় শহরগুলোতে বা অভিজাত এলাকায় ৯০০ স্কোয়ার ফিটের একটি ফ্লাটের ভাড়া ১৪,৩২,৩৫,০০০ রিয়াল এবং সাধারণ এলাকায় ৮০,১,০০,০০০ রিয়াল। যা কিনা বাংলাদেশী মুদ্রায় যথাক্রমে প্রায় ২,৯২,০০০ টাকা এবং ১,৬৩,১৫০ টাকার সমান। তাছাড়া ভালো মানের এক জোরা জিন্সের কাপড়ের মূল্য ৪,৬৫,২০০ রিয়াল এবং ১ মাসের (৮ এমবিপিএস গতির) ইন্টারনেট খরচ প্রায় ৭,৮৯,০০০ রিয়াল। তাছাড়া ১ কাপ চায়ের দাম ২০,০০০ রিয়াল (বাংলাদেশী মুদ্রায় ৪১.০০ টাকার সমান) এবং ১.৫ লিটারের ১ বোতল পানির দাম ১০,০০০ রিয়াল। তবে ইরানের শহর ও এলাকা ভেদে সব পণ্যের দাম কিছুটা কম বা বেশী হতে পারে।#

ইরানইরানের অর্থনতিইরানের মুদ্রাস্ফিতী
Comments (০)
Add Comment