বৈশ্বিক বানিজ্যে চীনের নব্য উত্থান

বিশ্বে সামরিক সুপার পাওয়ার দেশ হিসেবে আমেরিকা বা রাশিয়া তাদের পূর্বের প্রভাব ও অবস্থান এখনো পর্যন্ত ধরে রাখতে সক্ষম হলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বমঞ্চে অর্থনৈতিক পরাশক্তি ও গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে চিনের নব্য উত্থান একেবারে চোখে পড়ার মতো। আবার মোট সম্পদ ও বৈদেশিক বানিজ্যের বিবেচনায় চীন কিন্তু অনেকটা আগেই আমেরিকাকে ছাপিয়ে সবার উপরে উঠে এসেছে।
চীনের শুল্ক প্রশাসনের দেয়া তথ্যমতে, ২০২১ সাল শেষে চীনের বৈদেশিক বানিজ্য (আমদানি-রপ্তানি) এই প্রথম বারের মতো ৬.০৫ ট্রিলিয়ন ডলার বা ৬,০৫০ বিলিয়ন ডলারের সীমাকে স্পর্শ করে এক নতুন ইতিহাস রচনা করে। দেশটি আশা করছে চলতি ২০২২ সালে ৫.৫% হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারবে। যেখানে ২০২০ সালে ভয়াবহ করোনা মহামারির মধ্যেও সারা বছরে প্রায় চীন ৪.৭৬ ট্রিলিয়ন ডলার বা ৪,৭৬০ বিলিয়ন ডলারের আন্তর্জাতিক আমদানি-রপ্তানি বানিজ্য সম্পন্ন করেছিল।
২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বারো মাসে চীন সারা বিশ্বে ৩.৩৬ ট্রিলিয়ন ডলার বা ৩,৩৬০ বিলিয়ন ডলারের পন্য রপ্তানি করেছে এবং তার বিপরীতে ঠিক একই সময়ে সারা বিশ্ব থেকে ২.৬৯ ট্রিলিয়ন ডলার বা ২,৬৯০ বিলিয়ন ডলারের পন্য ও সেবা আমদানি করে বিশ্বের এক নম্বর অর্থনীতির দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। সে হিসেবে চীনের বানিজ্য উদ্বৃত্ত অবিশ্বাস্যভাবে ৬৭৬ বিলিয়ন ডলারে এসে ঠেকেছে।
এদিকে বৈশ্বিক বানিজ্যের বিবেচনায় চীনের নিজস্ব মুদ্রা ইউয়ানের হিসেবে ২০২১ সালে চীনের আমদানি-রফতানি বানিজ্য হয়েছিল ৩৯.১০ ট্রিলিয়ন ইউয়ান। যা ২০২০ সাল অপেক্ষা ২১.৪% বেশি। যার মধ্যে দেশটির বৈশ্বিক রপ্তানি ২১.২% বৃদ্ধি পেয়ে ২১.৭৩ ট্রিলিয়ন ইউয়ান এবং সারা বিশ্ব থেকে মোট আমদানি ২১.৫% বৃদ্ধি পেয়ে ১৭.৩৭ ট্রিলিয়ন ইউয়ানে পৌঁছে যায়।
এদিকে করোনা মহামারির আগের বছর ২০১৯ সালে চীনের বৈদেশিক বানিজ্যের পরিমাণ ছিল ৪.১৫ ট্রিলিয়ন ডলার। সে বছর দেশটি সারা বিশ্বে ২.৫৭ ট্রিলিয়ন ডলারের পন্য রপ্তানি করে এবং তার বিপরীতে সারা বিশ্ব থেকে ১.৫৮ ট্রিলিয়ন ডলারের পন্য আমদানি করে। যেখানে ২০১৩ সালে চীনের বৈদেশিক বাণিজ্য হয়েছিল ৪.০০ ট্রিলিয়ন ডলার।
এখানে প্রকাশ থাকে যে, ২০২১ সালে একক কোন দেশ হিসেবে চীন সবচেয়ে বেশি বৈদেশিক বানিজ্য সম্পন্ন করে চীনের বর্তমানে প্রধান শত্রু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে। ২০২১ চীন মার্কিন যুক্তরাষ্টের কাছ থেকে ১৭৯.৫৩ বিলিয়ন ডলারের পন্য আমদানি করে এবং ঠিক তার বিপরীতে চীন ৫৭৬.১১ বিলিয়ন ডলারের পন্য আমেরিকায় রপ্তানি করে।
এদিকে আবার চীনের সাথে বিবাদমান আরেক উদীয়মান দেশ ভারতের বানিজ্য ঘাটতি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাহাড় সমান হয়ে দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে চীনের জেনারেল এডমিনিস্ট্রেশন অফ কাস্টমস (জিএসি) এর দেয়া তথ্যমতে, ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত মোট ১১ মাসে চীন-ভারতের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বানিজ্য হয়েছে ১১৪.২৬৩ বিলিয়ন ডলার। যা কিনা গত ২০২০ সালের ঠিক একই সময় থেকে ৪৬.৪% বেশি। ভারত ২০২১ সালের প্রথম ১১ মাসে চীনে মোট পন্য রপ্তানি করে ২৬.৩৫৮ বিলিয়ন ডলার এবং যা কিনা গত ২০২০ সাল অপেক্ষা ৩৮.৫% বেশি ছিল। এদিকে চীন কিন্তু একাই ভারতে মোট পন্য রপ্তানি করেছে ৮৭.৯০৫ বিলিয়ন ডলার এবং যা কিনা ২০২০ সাল থেকে ৪৯% বেশি ছিল।
আবার ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে জুলাই সাত মাসে চীনের সাথে বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানি বানিজ্যের পরিমাণ ছিল প্রায় ১৩.০০ বিলিয়ন ডলার। যা ছিল ২০২০ সালের একই সময় অপেক্ষা ৫৮.৯% বেশি। যেখানে বাংলাদেশ ২০২০ সালের ভয়াবহ করোনা মহামারির মধ্যেও চীন থেকে মোট ১৫.০৬ বিলিয়ন ডলারের পন্য চীন থেকে আমদানি করেছিল এবং তার বিপরীতে বাংলাদেশ মাত্র ৭৯৯ মিলিয়ন ডলারের পন্য চীনের বাজারে রপ্তানি করতে সক্ষম হয়। অবশ্য ২০১৯ সালে বাংলাদেশ চীনে ১.০৩ বিলিয়ন ডলারের পন্য রপ্তানি করে।#

চীনের অর্থনীতিচীনের বৈদেশিক বাণিজ্যবিশ্বে চীনের আধিপত্য
Comments (০)
Add Comment