টানেল যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ

বিশেষ প্রতিনিধি#
টানেল যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বন্দরনগরী চট্টগ্রামের কর্নফুলি নদীর তলদেশ দিয়ে নির্মিত হচ্ছে ‘বঙ্গবন্ধু টানেল’। আর মাত্র ১৭ শতাংশ কাজ বাকি। পদ্মা সেতুর পর দেশের অন্যতম আরও একটি চমক হচ্ছে এ টানেল। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ হবার কথা রয়েছে। এ টানেল নির্মিত হলে বিশ্বে বাংলাদেশের মর্যাদা আরও বেড়ে যাবে। বিশে^র নজর বাড়বে বাংলাদেশের প্রতি। কারন এ টানেলকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম বন্দর, চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর, চট্টগ্রাম ইপিজেড বিশে^র কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।
এ টানেলের মধ্যে দিয়ে বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের সাথে যুক্ত হবে দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও পর্যটন শহর কক্সবাজার। গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর। কারন বিমান বন্দরের খুব কাছেই বঙ্গবন্ধু টানেল। পর্যটকরা সরাসরি টানেল দিয়েই চলে যাবেন কক্সবাজার। শাহ আমানত বিমান বন্দর থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত যে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মিত হচ্ছে তাতে টানেলের সাথে শহর চট্টগ্রাম থেকে যাতায়াত সহজ হবে। ফলে বাংলাদেশের যে কোন অঞ্চল থেকে আসা মানুষ অনেক সহজে টানেলের ভেতর দিয়ে চলে যেতে পারবে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, কর্ণফুলির তলদেশ দিয়ে টানেল নির্মানের স্বপ্ন ছিল অনেক দিনের পুরানো। এটি আদৌ সম্ভব হবে কিনা এ নিয়ে নানা প্রশ্ন থাকলেও শেষপর্যন্ত টানেল নির্মাণের পরিকল্পনা চুড়ান্ত হয় ২০১৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে। বাংলাদেশ মূলত চীনের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এটি নির্মান করতে অগ্রসর হয়। চীন সরকার কর্ণফুলির তলদেশ দিয়ে টানেল নির্মান করা যাবে বলে বাংলাদেশ সরকারকে অবহিত করলে ২০১৫ সালের ২৪ নভেম্বর এ সংক্রান্ত একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।। টানেল নির্মানে অভিজ্ঞ চীনা প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশন অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেডকে চীন সরকার এ কাজের জন্য নিযুক্ত করে। এর পর দীর্ঘ সময় ধরে চলে নানা সমীক্ষা ও নকশা প্রণয়নের কাজ। শেষপর্যন্ত নকশা ও অন্যান্য কাজ শেষে ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি পতেঙ্গা প্রান্ত থেকে টানেলের নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
কর্ণফুলি টানেলের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী হারুনুর রশিদ জানান, এটি দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার কোন প্রথম টানেল। ব্যয় হচ্ছে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। এ টাকার মধ্যে ডিসেম্বর মাসে টানেল নির্মানের কাজটি শেষ হবার আশা। তিনি বলেন, এরই মধ্যে প্রায় ৮৩ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এ টানেলের অভ্যন্তরে দুটি টিউব রয়েছে। এ টিউবগুলোর কাজ প্রায় শেষের পথে। এখন টিউবগুলোর মধ্যে সংযোগ স্থাপন ও প্যাসেজ নির্মানের কাজ চলছে।
সূত্র জানায়, টানেলের একটি অংশে রয়েছে পতেঙ্গা। পতেঙ্গার সাথে টানেলের ভেতর দিয়ে যুক্ত হবে আনোয়ারা উপজেলা। পতেঙ্গা অংশে সংযোগ সড়ক নির্মাণের কাজও এগিয়ে চলেছে। একইভাবে দক্ষিণ পাড়ে অর্থাৎ আনোয়ারা অংশে সংযোগ সড়কের নির্মাণ এগিয়ে নিচ্ছে সড়ক ও জনপথ এবং সেতু বিভাগ। টানেলের ভেতরের কাজ বেশ জটিল। কারন উচ্চমাত্রার ঝড় জলোচ্ছাস চট্টগ্রামের উপর যে কোন প্রভাব বিস্তার করতে পারে। তাই কোন প্রকাল ঝড়-জলোচ্ছাসে টানেল অভ্যন্তরে যাতে ক্ষতি না করে তার জন্য অবকাঠামো নির্মান চলছে। সমুদ্রের লোনা পানির কথা চিন্তা করে এরই মধ্যে নির্মিত হয়েছে সিটি আউটার রিং রোড।
চউকের প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন সামশ জানান, বঙ্গবন্ধু টানেলের বিষয়টি চিন্তা করে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩০ ফুট উচ্চতায় এ রিং রোড নির্মিত হয়েছে। পতেঙ্গার শেষ অংশে নেভাল পয়েন্ট থেকে ঝড় জলোচ্ছ¡াস থেকে টানেলকে রক্ষার জন্য আলাদা পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে।’
সূত্র জানায়, চীনের সাংহাই শহরের আদলে চট্টগ্রামকে ওয়ান সিটি টু টাউনে পরিণত করার কাজ চলছে। এ টানেলের কারনে শাহ আমানত বিমান বন্দর দিয়ে পর্যটকরা সরাসরি কক্সবাজার যাবেন। অন্য দিকে বিমানবন্দর থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণকাজও এগিয়ে চলছে। কর্ণফুলী টানেলে যান চলাচল শুরু হলে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা কক্সবাজার ও দক্ষিণ চট্টগ্রামগামী যানবাহনকে আর মহানগরীতে প্রবেশ করতে হবে না। সিটি আউটার রিং রোড হয়ে টানেলের মাধ্যমে দ্রæততম সময়ের মধ্যে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে। এতে চট্টগ্রাম নগরীতে যানবাহনের চাপ কমে যাবে।

চট্টগ্রাম চেম্বার প্রেসিডেন্ট মাহাবুল আলম জানান, এ টানেল চালু হলে দেশের অর্থনীতিতে পরিবর্তন আসবে। একই সাথে এই অঞ্চলে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায়ও বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। চট্টগ্রাম দেশের অর্থনীতির লাইফলাইন। টানেলের কারণে দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী বন্দরনগরীর সাথে দক্ষিণ চট্টগ্রামের সেতুবন্ধন তৈরি হবে। কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ে নগরায়ণ, শিল্পায়ন ও বন্দরের কার্যক্রম প্রসারিত হবে। মীরসরাইয়ের বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর থেকে কক্সবাজারের টেকনাফ পর্যন্ত গড়ে উঠবে শিল্প করিডোর। মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্রবন্দর হওয়ার পর চট্টগ্রাম হয়ে যানবাহন এই টানেল দিয়ে সহজে চলাচল করতে পারবে।’##

কর্ণফুলি টানেলচট্টগ্রামবঙ্গবন্ধু টানেল
Comments (০)
Add Comment