সিরাজুর রহমান#
আর্জেন্টিনা সাম্প্রতিক সময়ে ডেনমার্কের কাছ থেকে প্রথম ব্যাচে একটি পুরোনো এফ-১৬এ/বি যুদ্ধবিমানের সরবরাহ পেয়েছে। মূলত চলতি ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে আমেরিকার হস্তক্ষেপে চীনের যুদ্ধবিমান ক্রয়ের প্রাথমিক চুক্তি বাতিল করে মাত্র ৩০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে ২৪টি প্রায় ৪০ বছরের পুরাতন এফ-১৬ যুদ্ধবিমান ক্রয়ের চূড়ান্ত চুক্তি করে আর্জেন্টিনা। যদিও এই যুদ্ধবিমান সরবরাহের আগে চুক্তি মোতাবেক গুরুত্বপূর্ণ আধুনিকায়ন সম্পন্ন করেই সরবরাহ করবে ডেনমার্ক।
তাছাড়া আর্জেন্টিনার অতি পুরাতন এই ২৪টি যুদ্ধবিমানের জন্য আলাদা করে ৯৪১ মিলিয়ন ডলারের ওয়েপন্স প্যাকেজ, প্রোগ্রাম এন্ড লজিস্টিক সাপোর্ট চুক্তি অনুমোদন করেছে আমেরিকার বাইডেন প্রশাসন। যার আওতায় আইএম-১২০সি-৮ সিরিজের এয়ার টু এয়ার মিসাইল সহ অন্যান্য অস্ত্র ও সাজ সরঞ্জাম সরবরাহ করবে আমেরিকা। তাছাড়া এর আগে আর্জেন্টিনার কাছে ভারতের তেজাস, চীন এবং পাকিস্তানের যৌথভাবে তৈরি জেএফ-১৭ রপ্তানির চেষ্টা করা হলেও আমেরিকার হস্তক্ষেপে তা বাতিল হয়ে যায়।
পুরোনো হলেও এই ২৪টি যুদ্ধবিমান দিয়ে আর্জেন্টিনার বিমান বাহিনী তাদের এয়ার কমব্যাট ফ্লিটের চাহিদা কমপক্ষে ১০ থেকে ১২ পর্যন্ত পূরণ করতে পারবে। প্রথম ব্যাচে কিছু সংখ্যক যুদ্ধবিমান তুলে দিলেও চুক্তি মোতাবেক ডেনমার্ক তাদের পুরোনো এফ-১৬এ/বি সিরিজের যুদ্ধবিমান আপগ্রেড করে আগামী ২০২৫ সাল থেকে ২০২৮ সালের মধ্যে পর্যায়ক্রমে আর্জেন্টিনার হাতে তুলে দিবে। এদিকে ডেনমার্কের সরবরাহ করা আমেরিকার তৈরি পুরোনো এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের আরো একটি চালান চলতি ডিসেম্বর মাসে হাতে পেয়েছে ইউক্রেন।
নরডিক ইউরোপীয়ান দেশ ডেনমার্ক ও নরওয়ের মতো দেশ দাতা হয়ে একেবারে বিনামূল্যে বা কম মূল্যে ইউক্রেন এবং আর্জেন্টিনাকে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান দিয়ে দিচ্ছে বিষয়টি তা কিন্তু মোটেও নয়। আসলে আমেরিকার কথা মতো নরওয়ে, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক কিংবা নেদারল্যান্ডস তাদের বিমান বহরে থাকা এফ-১৬ যুদ্ধবিমান সরবরাহ করলে তার বিনিময়ে অদূর ভবিষ্যতে চুক্তি মোতাবেক আমেরিকার অত্যাধুনিক এফ-৩৫ স্টেলথ ফাইটার জেট সহজ শর্তে এবং ছাড়কৃত দামে ক্রয়ের বিশেষ সুযোগ পাবে।
আমেরিকার তৈরি এফ-১৬ ফাইটিং ফ্যালকন যুদ্ধবিমান ১৯৭৮ সালের ১৭ই আগস্ট প্রথম সার্ভিসে আসলেও এটি এখনো পর্যন্ত আমেরিকার বিমান বাহিনীসহ বিশ্বের মোত ২৫টি দেশ সক্রিয়ভাবে ব্যবহার করে। বর্তমানে সারা বিশ্বে সার্ভিসে থাকা সিঙ্গেল ইঞ্জিনের যুদ্ধবিমানের মধ্যে আমেরিকার তৈরি এফ-১৬ যুদ্ধবিমানকে সবচেয়ে শক্তিশালী এবং যুদ্ধ পরীক্ষিত লাইট কমব্যাট এয়ারক্রাফট হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এর সবচেয়ে আধুনিক ও আপগ্রেড ভার্সন হচ্ছে এফ-১৬ভি ব্লক-৭০/৭২ সিরিজের ফাইটিং ফ্যালকন যুদ্ধবিমান।
১৯৭৪ সালে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান প্রথম আকাশে উড্ডয়ন করে। তবে তখন থেকে গত ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত মোট প্রায় ৪,৮০০টি বিভিন্ন সিরিজের যুদ্ধবিমান তৈরি করেছে। তবে একক দেশ হিসেবে মার্কিন বিমান বাহিনী এবং নৌবাহিনী সর্বোচ্চ সংখ্যক ৮৯৭টি বিভিন্ন সিরিজের এফ-১৬ যুদ্ধবিমান অপারেট করে। তাছাড়া মিশর ২১৮টি, তুরস্ক ২৪৩টি, ইসরাইল ২২৪টি, দক্ষিণ কোরিয়া ১৬৭টি, গ্রিস ১৫৪টি এবং তাইওয়ান ১৩৭টি (৫৬টি নতুন অর্ডার দেয়া আছে) এবং পাকিস্তান ৭৫টি বিভিন্ন সিরিজের এফ-১৬ যুদ্ধবিমান অপারেট করে।
তাছাড়া এফ-১৬ যুদ্ধবিমান ব্যবহারকারী অন্যান্য দেশগুলোর মধ্যে ইন্দোনেশিয়া ৩৩টি, সিঙ্গাপুর ৬০টি, জর্ডান ৫৯টি, বেলজিয়াম ৫৩টি, থাইল্যান্ড ৫০টি, পোল্যান্ড ৪৮টি, চিলি ৪৬টি, নেদারল্যান্ডস ২৬টি, পর্তুগাল ২৫টি, ওমান ২৩টি, মরক্কো ২৩টি ডেনমার্ক ৪৩টি, ইরাক ৩৪টি, সংযুক্ত আরব আমিরাত ৭৬টি এফ-১৬ই (ব্লক-৬০) ফাইটিং ফ্যালকন যুদ্ধবিমান (১৮টি সি/ডি ব্লক-৫২) অপারেট করে। তাছাড়া মার্কিন বিরোধী শিবিরের একমাত্র দেশ হিসেবে ভেনিজুয়েলার বিমান বাহিনীতে এফ-১৬এ/বি সিরিজের যুদ্ধবিমান রয়েছে ১৫টি।
বর্তমানে এফ-১৬ ফাইটিং ফ্যালকন যুদ্ধবিমান আমেরিকা ছাড়াও নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান এবং তুরস্কে ম্যানুফ্যাকচারিং বা অ্যাসেম্বলি করে থাকে। বিশেষ করে দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাং কোম্পানি ও জাপানের মিতসুবিশি হেভি ইন্ডাস্ট্রিজ তাদের নিজস্ব প্রযুক্তির সমন্বয়ে নিজ দেশেই এই জাতীয় যুদ্ধবিমান উৎপাদন করে। জাপান এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের কিছুটা আপগ্রেড করে এফ-২ তৈরি করে থাকে। তবে কোন দেশই আমেরিকার অনুমতি ছাড়া অন্য কোনো দেশের কাছে এই যুদ্ধবিমান বিক্রি বা রপ্তানি করতে পারে না।#তথ্যসূত্র:- উইকিপিডিয়া, দ্য ডিফেন্স পোস্ট।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.