-- বিজ্ঞাপন ---

নিজস্ব প্রযুক্তির হেলিকপ্টারের ইঞ্জিন বিশ্বের সামনে উন্মোচন করেছে চীন!

সিরাজুর রহমান, বিশেষ প্রতিনিধি#

চীন সাম্প্রতিক সময়ে নিজস্ব প্রযুক্তির তৈরি বেসামরিক হেলিকপ্টারের এইএস-১০০ সিরিজের টার্বো-শ্যাফট ইঞ্জিন বিশ্বের সামনে উন্মোচন করেছে। যা চীনের জন্য ছিল জেট/টার্বো-শ্যাফট ইঞ্জিন ম্যানুফ্যাকচারিং এর এক মাইলফলক অর্জন। তাছাড়া দেশটি কিন্তু নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন, উন্নয়ন এবং গবেষণায় এক আমেরিকার পর প্রতি বছর বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে যাচ্ছে।

মূলত বেসামরিক কাজে ব্যবহারের উপযোগী এই জাতীয় টার্বো-শ্যাফট ইঞ্জিন ১,০০০ থেকে ১,১০০ কিলোওয়াট শক্তি (টেকঅফ পাওয়ার) উৎপাদন করে। যা কিনা একটি ইঞ্জিন দ্বারা তিন থেকে চার টন ওজনের একটি হেলিকপ্টার এবং দুটি ইঞ্জিন দ্বারা পাঁচ থেকে ছয় টন ওজনের একটি হেলিকপ্টারকে আকাশে দীর্ঘ সময় এবং সাবলীলভাবে উড়ার সক্ষমতা প্রদান করে।

চীনের নিজস্ব প্রযুক্তির তৈরি এইএস-১০০ সিরিজের টার্বো-শ্যাফট ইঞ্জিন ডিজাইন ও ম্যানুফ্যাকচারিং করে এ্যারো ইঞ্জিন কর্পোরেশন অব চায়না (এইসিসি)। প্রতিষ্ঠানের দেয়া তথ্যমতে, বেসামরিক হেলিকপ্টারের ব্যবহারের উপযোগী এই ইঞ্জিনটিকে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন, কম জ্বালানি খরচ, দীর্ঘস্থায়ী লাইফ টাইম এবং সর্বোচ্চ নির্ভরযোগ্য করে ডিজাইন ও তৈরি করা হয়েছে।

আসলে চীন এই টার্বো-শ্যাফট ইঞ্জিন নিয়ে কাজ শুরু করে গত ২০১৬ সালে এবং এর প্রথম পরীক্ষামূলক উড্ডয়ন সম্পন্ন করা হয় গত ২০২১ সালের জুলাই মাসে। তাছাড়া চীনের দ্য সিভিল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অব চায়না ইতোমধ্যেই এইএস-১০০ সিরিজের ইঞ্জিন বেসামরিক হেলিকপ্টারে ব্যবহারের চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে। যার আলোকে এ্যারো ইঞ্জিন কর্পোরেশন অব চায়না (এইসিসি) ইতোমধ্যেই এই ইঞ্জিনের ম্যাসিভ প্রডাকশন শুরু করে দিয়েছে।

বর্তমানে সারা বিশ্বে প্রায় ১০ থেকে ১২ টি দেশ সামরিক ও বেসামরিক এয়ারক্রাফট ডিজাইন ও তৈরি করলেও বাস্তবে হাতে গোনা মাত্র ৫ থেকে ৬টি দেশ একেবারে নিজস্ব প্রযুক্তির জেট ও টার্বো শ্যাফট ইঞ্জিন ম্যানুফ্যাকচারিং করতে সক্ষম। যার মধ্যে আমেরিকা, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য এবং ফ্রান্সের নাম সবার উপরে থাকলেও যুদ্ধ কবলিত পূর্ব ইউরোপের দেশ ইউক্রেন কিন্তু খুবই ভালো মানের ডেডিকেটেড জেট ও টার্বো-শ্যাফট ইঞ্জিন ম্যানুফ্যাকচারিং করে। আর ইউক্রেনের এ রকম একটি ডেডিকেটেড এয়ারক্রাফট ইঞ্জিন ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি হচ্ছে ‘মোটরসিচ’ কোম্পানি।

তাছাড়া তুরস্কের নিজস্ব প্রযুক্তির তৈরি অধিকাংশ এরিয়াল সিস্টেম বা ড্রোনে ইউক্রেনের তৈরি ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন এবং তুরস্ক তাদের নিজস্ব প্রযুক্তির তৈরি জেট/ টার্বো শ্যাফট ইঞ্জিন ডিজাইন এবং ম্যানুফ্যাকচারিং এ বড় ধরনের সফলতা অর্জন করেছে। বিশেষ করে অন্য দেশের প্রযুক্তি ক্লোন কপি করে কিংবা প্রযুক্তি হাতিয়ে নিয়ে হলেও চীন বর্তমানে বিভিন্ন সিরিজের নিজস্ব প্রযুক্তির এয়ারক্রাফট ইঞ্জিন তৈরি করছে।

প্রযুক্তিগত সক্ষমতার দিক দিয়ে আমেরিকা এবং ফ্রান্স অপেক্ষা চীন এখনো পর্যন্ত অনেকটাই পিছিয়ে থাকলেও বাস্তবে নিজস্ব প্রযুক্তির ভালো মানের এয়ারক্রাফট ইঞ্জিন ডিজাইন এবং রিসার্চে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে যাচ্ছে। খুব সম্ভবত গত ২০২১ সালের দিকে চীন অনেকটাই গোপনে ইউক্রেনের ‘মোটরসিচ’ ইঞ্জিন ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি কয়েক বিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে ক্রয়ের চুক্তি প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলে। যদিও পরবর্তীতে ইউরোপের দেশগুলো বিশেষ করে শেষমেশ আমেরিকার সরাসরি হস্তক্ষেপে এই চুক্তিটি একেবারে বাতিল করতে বাধ্য হয় ইউক্রেন।##তথ্যসূত্র:- সিজিটিএন, গ্লোবাল টাইমস।

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.