সিরাজুর রহমান, বিশেষ প্রতিনিধি#
করাচি বন্দর হল পাকিস্তানের বৃহত্তম সমুদ্র বন্দর। এই বন্দরটি পাকিস্তানের সিন্ধি প্রদেশের বৃহত্তম শহর করাচিতে অবস্থিত। বন্দরটি দেশের ৬০% এর বেশি পণ্য দ্রব্য পরিবহন করে। এই বন্দরের প্রধান কন্টেইনার টার্মিনাল হল করাচি ইন্টারন্যাশনাল কন্টেইনার টার্মিনাল। বর্তমানে চরম অর্থনৈতিক সংকটের মুখে পাকিস্তান এবার তাদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ করাচি সমুদ্র বন্দর সংযুক্ত আরব আমিরাতের হাতে তুলে দিতে যাচ্ছে। এখানে আসলে ঠিক সমুদ্র বন্দরের মালিকানা নয় বরং এর ব্যবস্থাপনা বা অপারেটিং সিস্টেম নিদিষ্ট সময়ের জন্য ডলারের বিনিময়ে লিজে সংযুক্ত আরব আমিরাত কিনে নিচ্ছে। এর বিনিময়ে ভালো অংকের ডলার পাবে বলে আশা করছে পাকিস্তানের সরকার। যদিও এখনো পর্যন্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাথে এ নিয়ে চূড়ান্ত কোন চুক্তি বা সমাঝোতা সম্পন্ন করেনি দেশটি।
মূলত ডলারের চরম সংকটে ভেঙে পড়েছে দেশটির জাতীয় অর্থনীতি। এমন পরিস্থিতিতে দেশের গুরুত্বপূর্ণ করাচি সমুদ্র বন্দর সংযুক্ত আরব আমিরাত বা অন্য কোন দেশের কাছে ডলারে ভাড়া পাওয়ার আশায় তুলে দেয়া ছাড়া বিকল্প তেমন কিছু রয়েছে বলে মনে হয় না। তাছাড়া কয়েক বছর আগে পাকিস্তানের চাঙ্গাপাঙ্গা ন্যাশনাল রিজার্ভ ফরেস্ট ও আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত গোয়াদর বন্দর চীনের কাছে লিজে হস্তান্তর করার খবর রটেছিল। তবে তথ্যটি গুজব নাকি সঠিক তা কিন্তু স্পষ্ট নয়।
আসলে সাম্প্রতিক সময়ে ঋনের পূর্ব শর্তপূরণ করতে না পারায় আইএমএফ পাকিস্তানকে প্রতিশ্রুতি দেয়া ৬.৫ বিলিয়ন ডলারের বেল আউট প্যাকেজ বাতিল করে দেওয়ায় বড় ধরণের বিপর্যয়ের মুখে পরে পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। তাই পাকিস্তান এখন ডলার সংকট মোকাবেলা করতে নতুন করে ঋন প্রাপ্তির আবেদন করতে যাচ্ছে আইএমএফ এর পাশাপাশি সৌদি আরব, চীন ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাছে।
স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তান (এসপিবি) এর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংক্রান্ত বিষয়ে সদ্য প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায় যে, চলতি ২০২৩ সালের ৯ই জুনের হিসেব অনুযায়ী পাকিস্তানের সেন্ট্রাল ব্যাংকে গচ্ছিত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৪.০১৯ বিলিয়ন ডলার। যদিও একই সময়ে দেশটির সকল বানিজ্যিক ব্যাংকে ফরেক্স রিজার্ভ ছিল ৫.৩৬ বিলিয়ন ডলার। সে হিসেবে পাকিস্তানের হাতে এ মুহুর্তে মোট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রয়েছে ৯.৩৮ বিলিয়ন ডলার।
যদিও গত ২০২২ সালের ২রা ডিসেম্বরে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে থাকা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৬.৭২ বিলিয়ন ডলারে। তাছাড়া গত ২০২০-২১ অর্থবছরে পাকিস্তানের সেন্ট্রাল ব্যাংকের কাছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ১৭.৩ বিলিয়ন ডলার। তবে দেশটির ফরেক্স রিজার্ভ আশাঙ্খাজনক হারে হ্রাস পেলেও চলতি ২০২৩ সালের মার্চ মাসের হিসেব অনুযায়ী সার্বিক বৈদেশিক ঋন ও দেনার বোঝা বর্তমানে কিন্তু কিছুটা কমে ১২৫.৭ বিলিয়ন ডলারে এসে ঠেকেছে।
নির্বিচারে বিদেশে অর্থ পাচার ও রপ্তানির তুলনার অত্যাধিক আমদানি ব্যয় পরিশোধ করতে গিয়ে পাকিস্তান আজ ভয়াবহ মাত্রায় ডলার সংকটের মুখে পড়তে হয়েছে। তাছাড়া উন্নয়নের নামে বিগত কয়েক দশকের বিভিন্ন দেশ, আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক, এডিবিসহ একাধিক সংস্থার কাছ থেকে অপরিকল্পিতভাবে গোপন শর্তের বেড়াজালে ঋন নিয়ে গেছে দেশটি। এখন কিনা সেই ঋনের আসল ও ঋনের সুদ পরিশোধ করতে গিয়ে সেই আবার অন্য কোন দেশ ও সংস্থার কাছ থেকে চড়া সুদে ঋন পাওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে পাক সরকার।
যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক ইউনাইটেড ইনিস্টিটিউট অব পিস এর অনলাইন সূত্র মতে, চলতি ২০২৩ সাল থেকে ২০২৬ সালের মধ্যে এসব পূর্বের ঋনের আসল কিস্তি ও সুদ বাবদ শর্ত মোতাবেক মোট আনুমানিক প্রায় ৭৭.৫ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করতে হবে পাকিস্তানকে। যা কিনা দেশটির বর্তমান অর্থনৈতিক সক্ষমতার বিচারে এক কথা অসম্ভব বলা চলে। ঠিক একই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে আমাদের পাশ্ববর্তী বন্ধুদেশ শ্রীলংকার ক্ষেত্রেও। যা হোক এসব দেশের ত্রুটিপূর্ণ বৈদেশিক ঋন নীতি ও অব্যবস্থাপনা বিশ্বের অন্যান্য সকল স্বল্প আয়ের দেশের জন্য একটি চরম সতর্ক বার্তা হিসেবে দেখা হচ্ছে।#