বৃহস্পতিবার ফ্লোরিডার মধ্য ও উত্তরাঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় মিল্টনের আঘাতে প্রবল বন্যা ও বাতাসে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়। অনেক বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গেছে। এই ঝড়ে কমপক্ষে ১৬ জন নিহত এবং ৩০ লাখ মানুষ বিদ্যুৎ সংযোগবিহীন হয়ে পড়েছেন।
বুধবার রাতে সারাসোটা কাউন্টির সিয়েস্তা কির কাছে ঝড়টি ক্যাটাগরি ৩ মাত্রার হারিকেন হিসেবে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২০৫ কিলোমিটার বাতাসের গতিবেগ নিয়ে আঘাত হানে। রাতভর ঘূর্ণিঝড় রাজ্যজুড়ে বইতে থাকে, যার ফলে কর্তৃপক্ষ আকস্মিক বন্যার জন্য সতর্কতা জারি করে। সূর্যোদয়ের কয়েক ঘণ্টা আগে ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্র আটলান্টিক মহাসাগরে সরে যায়। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টার জানিয়েছে, ঝড়টি রাজ্য থেকে দূরে সরে যাওয়ায় বৃহস্পতিবার ফ্লোরিডার উত্তরাঞ্চলের একটি এলাকায় ৫ থেকে ১০ সেন্টিমিটার অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত হতে পারে।
ফ্লোরিডার পশ্চিম উপকূলের শহর সেন্ট পিটার্সবার্গে ৪১ সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়, যা অক্টোবরের গড় বৃষ্টিপাতের আটগুণ। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে টাম্পা, সেন্ট পিটার্সবার্গ, সারাসোটা এবং ফোর্ট মায়ার্স শহরও জলোচ্ছ্বাসের কবলে পরে প্লাবিত হয়। তিরিশ লাখেরও বেশি বাসিন্দা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিদ্যুৎ সংযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
এই অবস্থা দীর্ঘ সময় স্থায়ী হতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছে ইউটিলিটি কোম্পানিগুলো।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ, মায়ামির ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিস টর্নেডোর ছবি পোস্ট করে বলেছে, ফ্লোরিডা এখন দ্রুত গতির ও বিপজ্জনক টর্নেডোর ঝুঁকিতে রয়েছে। বুধবার বিকেল পর্যন্ত ৫০টিরও বেশি টর্নেডো সতর্কতা জারি করে সংস্থাটি।
ঘূর্ণিঝড় হেলেন আঘাত হানার মাত্র দুই সপ্তাহ পরই ফ্লোরিডায় মিল্টনের আঘাত এলো। ফ্লোরিডা জরুরি পরিস্থিতি ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিচালক কেভিন গুথরি বলেছেন, হারিকেনটি স্থলভাগে আঘাত হানার আগেই প্রায় ১২৫টি বাড়ি লন্ডভন্ড করে দেয়। এর মধ্যে অনেকগুলো বাড়ি প্রবীণ নাগরিকদের জন্য তৈরি করা।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টার জানায়, বুধবার রাতে স্থলভাগে আঘাত হানে হারিকেনটি। এসময় কিছুটা দুর্বল হয়ে ২ মাত্রার ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয় মিল্টন। এটির কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১১০ মাইল (১৭৫ কিলোমিটার), যা ঘণ্টায় ১৬ মাইল (২৬ কিলোমিটার) বেগে পূর্ব ও উত্তর–পূর্বে অগ্রসর হচ্ছিল।
এদিকে, গতকাল সকালে হোয়াইট হাউস থেকে প্রেসিডেন্ট বাইডেন ও ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস ফ্লোরিডায় উপদ্রুত এলাকার খোঁজখবর নেয়ার পর এক বিবৃতিতে হতাহত ও ক্ষতির শিকার হওয়া লোকজনের প্রতি সহমর্মিতা জ্ঞাপন করেন এবং উদ্ধার ও পুনর্বাসনে ফেডারেল সহায়তা অব্যাহত থাকবে বলে উল্লেখ করেন।
টাম্পায় বাংলাদেশিদের ‘দুর্বিষহ অভিজ্ঞতা’
বেশ কয়েক বছর হল প্রচুর সংখ্যক বাংলাদেশি ফ্লোরিডায় স্থায়ী বা অস্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। তাদের একজন ডঃ ইসরাত জাহান মিতা, যিনি টাম্পার অধিবাসী। তিনি ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলছেন, বুধবার রাতে তাদের উপর দিয়ে এ’বছরের সবচেয়ে ভয়ানক ঝড় বয়ে গেছে।
“এটি ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে দুর্বিষহ অভিজ্ঞতা। এ পর্যন্ত আমি ৮-১০টা টর্নেডো বা সাইক্লোন দেখেছি কিন্তু এরকম অভিজ্ঞতা আগে হয়নি। সন্ধ্যা থেকে রাত আড়াইটা পযর্ন্ত ঠাই বসেছিলাম, এবং রাত ৮টার পর হুহু করে থেকে থেকে কেমন বিকট একটা শব্দ হচ্ছিল সেই সঙ্গে থেমে থেমে বৃষ্টি,” তিনি বলেন।
“তবে সকাল বেলা যখন বাড়ির বাইরে গেলাম দেখি, বাড়ি পেছনের বাগানে যে দুটো শিউলি ফুল গাছ ছিল তার একটি বিশাল যেখানে অনেক ফুল ফুটত সেটাতা উপড়ে গেছে, বাড়ির ছাদের শিঙ্গেলসগুলো উড়ে গেছে, প্যাটিওতে নেট ছিল তা উড়ে গেছে।”
ইসরাত জাহান বলেন যে, বুধবার রাতে ৬ -৭ ঘণ্টা তাদের “বিভীষিকার মত কেটেছে।” “মুহুর্তগুল যে ভাবে কেটেছে তা ভাষায় প্রকাশ করার মত না। ঝড়ের কারনে আমার কয়েক জন বন্ধু আমাদের বাড়িতে গতকাল থেকে আছেন। ওদের বাড়ির ভেতরে বন্যার পানি ঢুকেছে তবে আমরা লাকি,” তিনি বলেন।
ফ্লোরিডার আরেক বাংলাদেশি অধিবাসী ওষুধ বিশেষজ্ঞ ডঃ শওকত হোসেন। তিনি বলেন যে, সেরাসোটা কাউন্টি যেখানে মিল্টন মারত্মক ভাবে আঘাত হেনেছে সেখান থেকে এবং উপকূল এলাকা থেকে বেশ কয়েক কিলোমিটার দূরে থাকার জন্য তারা রক্ষা পেয়েছি।
“বছরে দুই-তিনটি ঝড়ের জন্য আমরা প্রস্তুত থাকি, তবে এমন মারাত্মক অবস্থা আমরা আগে কখনো দেখিনি,” তিনি ভয়েস অফ আমেরিকাকে জানান। বুধবার রাতের “মত অভিজ্ঞতা আমার আর কখন হয়নি,” তিনি বলেন।
তিনি বলেন যে, তাদের এলাকায় বিদ্যুতের লাইন মাটির নীচ দিয়ে এসেছে যে কারণে কিছুক্ষণের জন্য ইলেক্ট্রিসিটে না থাকলেও পরে চলে আসে। বিদ্যুৎ “ এখন আছে এবং যার জন্য আজ বাড়ি থেকে কাজ করতে পারছি,” তিনি বৃহস্পতিবার জানান।
“এখানকার প্রায় সব অফিস আদালত বন্ধ। আজ সকলে পরিস্থিতি দেখার জন্য আমি কিছুক্ষণের জন্য গাড়ি নিয়ে বাইরে যাই, অনেক গাছ ঝড়ে ভেঙ্গেছে, রাস্তাঘাটে লোকজন তেমন একটা দেখা যায় নি। অবশ্য শহরের ৫০ শতাংশ লোক অন্যত্র আশ্রয় দিয়েছেন,” শওকত হোসেন বলেন।
উল্লেখ্য, হারিকেন হেলেনের বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যেই অঙ্গরাজ্যটি আবারও দুর্যোগের মুখে পড়লো। ওই ঘূর্ণিঝড়ে ফ্লোরিডা, জর্জিয়া, দক্ষিণ ক্যারোলিনা, টেনেসি, ভার্জিনিয়া ও উত্তর ক্যারোলিনা অঙ্গরাজ্যে অন্তত ২২৫ জন প্রাণ হারিয়েছিলেন। ##সূত্রঃ ভয়েস অব আমেরিকা