-- বিজ্ঞাপন ---

মহাসাগরের বুকে দাপিয়ে বেড়ানো হেভি ডেস্ট্রয়ার ব্যাটল শিপ!

সিরাজুর রহমান#
বর্তমানে সারা বিশ্বের মধ্যে মাত্র ১৪টি দেশ হেভি এন্ড মিডিয়াম টাইপের ডেস্ট্রয়ার ব্যাটল শিপ অপারেট করে। যাকে মহাসাগরের বুকে যুদ্ধের রাজা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই দেশগুলো তাদের নৌবাহিনীতে হেভি ও মিডিয়াম টাইপের ডেস্ট্রয়ার ব্যাটল শিপ ব্যবহার করে, যা তাদের সামরিক শক্তি ও নৌ-প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে সহায়তা করেছে। উচ্চ প্রযুক্তি সমৃদ্ধ এই জাতীয় যুদ্ধজাহাজ অত্যাধুনিক প্রযুক্তির রাডার, সেন্সর, হেভি মিসাইল সিস্টেম, নেভাল গান, এবং এর পাশাপাশি এয়ার ডিফেন্স মিসাইল দ্বারা সজ্জিত করা থাকে।
গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার ওয়েবসাইটের দেয়া তথ্যমতে, বর্তমানে বিশ্বের মাত্র ১৪টি দেশের নৌবাহিনীতে হেভি এন্ড মিডিয়াম টাইপের ডেস্ট্রয়ার ব্যাটল শিপ থাকলেও বিশ্বের একক কোন দেশ হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীতে সর্বোচ্চ সংখ্যক বিভিন্ন সিরিজের মোট ৮১টি গাইডেড/মিসাইল গাইডেড ডেস্ট্রয়ার বা আক্রমণাত্মক যুদ্ধজাহাজ অপারেশনাল রয়েছে । বিশেষ করে বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীতে হেভি এবং মিডিয়াম ডেস্ট্রয়ার হিসেবে মূলত আর্লেই বার্ক-ক্লাস ডেস্ট্রয়ার (Arleigh Burke-class destroyers) পরিচালনা করা হয়।
এদিকে চলতি ২০২৫ সালের হালনাগাদ তথ্যমতে, আমেরিকার পাশাপাশি চীনের নৌবাহিনীতে মোট ৫০টি নিজস্ব প্রযুক্তির ডেস্ট্রয়ার রয়েছে। আবার অন্যান্য দেশের নৌবাহিনীর মধ্যে জাপানের ৪২টি, রাশিয়ার ১০টি, দক্ষিণ কোরিয়া ১৩টি, ভারত ১৩টি, ফ্রান্স ১১টি করে ডেস্ট্রয়ার অপারেশনাল রয়েছে। তার পাশাপাশি যুক্তরাজ্য ৬টি, মেক্সিকো ৫টি, তাইওয়ান ৪টি, ইতালি ৩টি এবং আর্জেন্টিনার নৌবাহিনী ৩টি করে বিভিন্ন সিরিজের হেভি ডেস্ট্রয়ার অপারেট করে। তাছাড়া র‍্যয়াল অস্ট্রেলিয়ান নেভি ৩টি এবং পাকিস্তানের নৌবাহিনীর ২টি করে মিডিয়াম টাইপের ডেস্ট্রয়ার অপারেশনাল রয়েছে।
বর্তমানে নেভাল কমব্যাট শিপের দিক দিয়ে আমেরিকা ও চীনের নেভাল মিলিটারি পাওয়ার ঠিক কোন পর্যায়ে রয়েছে তা কিন্তু বিশ্বের সামনে ঠিকই ফুঁটে উঠেছে। বিশেষ করে চীনের নৌবাহিনীতে বর্তমানে প্রায় ৫০টি হেভি এবং মিডিয়াম ডেস্ট্রয়ার সক্রিয় রয়েছে। যার মধ্যে ৮টি টাইপ ০৫৫ এবং ২৫টি বা তার অধিক টাইপ ০৫২ডি ক্লাসের হেভি মিসাইল গাইডেড হেভি ডেস্ট্রয়ার-কে সবচেয়ে আধুনিক এবং শক্তিশালী করে ডিজাইন ও তৈরি করা হয়েছে। তাছাড়া শান্তিপ্রিয় জাপানের নব্য সামরিক উত্থান ও নৌবাহিনীর পরিকল্পনা মাফিক উন্নয়ন কিন্তু বেশ চোখে পড়ার মতো ছিল।
তবে চীনের তুলনায় সংখ্যার দিক দিয়ে ভারতের হেভি ডেস্ট্রয়ার ব্যাটল শিপ বা আক্রমণাত্মক যুদ্ধজাহাজ কম হলেও ভারত সাম্প্রতিক সময়ে তার নিজস্ব প্রযুক্তির অত্যাধুনিক ‘বিশাখাপত্তনম’ ক্লাস মিসাইল গাইডেড হেভি ডেস্ট্রয়ার সার্ভিসে এনেছে। বিশেষ করে ভারতের নৌবাহিনীতে অপারেশনাল থাকা মোট ডেস্ট্রয়ারের সংখ্যা হচ্ছে ১৩টি। বর্তমানে ভারতের নৌবাহিনীতে ৭,৪০০ টন ওজনের ‘বিশাখাপত্তনম’ ক্লাস ৪টি, ৭,৪০০ টন ওজনের ‘কলকাতা’ ক্লাস ৩টি, ৬,২০০ টন ওজনের ‘দিল্লী’ ক্লাস ৩টি এবং ৪,৯৭৪ টন ওজনের ‘রাজপুত’ ক্লাস ৩টি হেভি এন্ড মিডিয়াম টাইপের ডেস্ট্রয়ার রয়েছে।
তবে এখানে প্রকাশ থাকে যে, বর্তমানে বিশাল আকারের যুদ্ধজাহাজের চাইতে অনেকটাই ছোট এবং মাঝারি আকারের ব্যাটল শিপের জন্য স্মার্ট ওয়েপন প্যাকেজ, সেন্সর, হাইলি স্টেলথনেস, ইলেক্ট্রনিক ওয়ারফেয়ারকেই প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। যা কিনা এখন বিশ্বের অধিকাংশ দেশ তাদের নেভাল ডকট্রিনে বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছে। বিশেষ করে পরিবর্তনশীল বৈশ্বিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সাথে তাল মিলিয়ে হাইলি অ্যাডভান্স এবং ছোটো আকারের দ্রুতগামী ও শক্তিশালী মিসাইল সজ্জিত ফ্রিগেট ও কর্ভেটই নেভাল ফ্লিটে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে ।#
তথ্যসূত্র: গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার, উইকিপিডিয়া।

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.