-- বিজ্ঞাপন ---

অবেশেষে লন্ডন যাচ্ছেন খালেদা জিয়া

শাহজালাল বিমানবন্দর এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা

কিছুক্ষনের মধ্যে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবেন। খালেদা জিয়ার লন্ডন যাবার প্রাক্কালে হাজার হাজার নেতা-কর্মী বাড়ির সামনে দুপুর থেকে হাজির হতে থাকে। রাত গড়ার সাথে সাথে লোকে লোকারন্য হয়ে পড়ে বাড়ীর সামনের অংশটি। বিএনপি নেতা-কর্মীদের বড় একটি অংশ রাতে বিমানবন্দরে ভীড় জমায়। রাত ১০টায় খালেদা জিয়া লন্ডনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেবেন বলে জানা গেছে। সর্বশেষ গত ২০১৭ সালের ১৫ জুলাই তিনি চিকিৎসার জন্য লন্ডন গিয়েছিলেন।

এদিকে খালেদা জিয়ার লন্ডন যাওয়াকে কেন্দ্র হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকায় ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বিশেষ করে বিমানবন্দরের বহিরাঙ্গন এলাকাগুলোর প্রবেশমুখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এপিবিএনের ডগ স্কোয়াড এবং কুইক রেসপঞ্জ টিমও নিয়োজিত রয়েছে।

এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) সহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিরাপত্তা দায়িত্ব পালন করছেন। বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মঞ্জুর কবির ভুঁইয়া জানিয়েছেন, আজ রাত ১০টায় বেগম খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য ঢাকা ত্যাগ করবেন। নিরাপত্তার কোনো সমস্যা যাতে না হয়, সেজন্য বিমানবন্দর এলাকায় সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

বিমানবন্দরের বাইরে এবং ভেতরে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, যেখানে সন্দেহজনক যাত্রীদের তল্লাশি করা হচ্ছে। বিমানবন্দরের কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, এ সময়ের মধ্যে বিমানবন্দরে কোনো ধরনের নিরাপত্তা সংকট তৈরি না হওয়ার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।

বেগম খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যের ‘লন্ডন ক্লিনিক’-এ ভর্তি হবেন। তিনি আজ রাত ১০টায় কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি কর্তৃক পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকা থেকে লন্ডনের হিথরো ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে রওনা দেবেন। এ সময় খালেদা জিয়ার চিকিৎসক দলসহ অন্যান্য সহকর্মীরা তার সঙ্গে থাকবেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ এবং কিডনি সমস্যায় ভুগছেন। সেজন্য তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তিনি আরও জানান, কাতারের আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে কাতারের চারজন চিকিৎসক এবং প্যারামেডিকসসহ বাংলাদেশের মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা তাকে সহযোগিতা করবেন।

খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়া নিয়ে ছিল নানা টানাপোড়েন 

বিবিসির ২০২৪ সালের রিপোর্ট থেকে জানা যায়, গত ২০২৩ সালের শেষ দিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে চিঠি দেওয়া হয় পরিবারের তরফে। সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের পর ওই বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়ার ভাই শামীম ইস্কান্দার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেন। এর জবাবে তখন আইনমন্ত্রী বলেছেন, “খালেদা জিয়াকে বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হলে আগে কারাগারে যেতে হবে এবং তারপর আদালতে আবেদন করতে হবে”। পরে ২৬শে অক্টোবর এভারকেয়ার হাসপাতালে যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস ইউনিভার্সিটির স্কুল অব মেডিসিনের তিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক খালেদা জিয়ার যকৃতের রক্তনালীতে অস্ত্রোপচার করেন।

মিসেস জিয়ার চিকিৎসকরা বলছেন, খালেদা জিয়ার যে সব রোগ আছে সেটা দেশে সম্ভব হলে মেডিকেল বোর্ড বিদেশ নিতে আবেদন করতো না। ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. হোসেন বলেছেন, “মেডিকেল বোর্ড বার বার সুপারিশ করেছে। কিন্তু এই সুপারিশ আমলে নেয়া হয়নি। দেশে চিকিৎসায় যে ঝুঁকি আছে সেটা নিয়ে আমাদের বিদেশি ডাক্তাররা সতর্ক করছে। কিন্তু আমাদের তো সেই সুযোগ পাচ্ছি না।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন, ”মেডিকেল বোর্ড বারবার বলেছে মাল্টি ভ্যারিয়াস ডিজিজেসের চিকিৎসা করাতে হলে উন্নত দেশের মাল্টি ডিসিপ্লিনারি হসপিটাল প্রয়োজন। দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে চিকিৎসার সুযোগ দিচ্ছেন না সরকার।” এর জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, “খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা প্রয়োজন, তিনি যে হাসপাতালে আছেন, সেখানে সেই চিকিৎসা পাচ্ছেন। তার কয়েকটা সেরে ওঠার মতো না। এগুলোর চিকিৎসা করে কমিয়ে রাখতে হবে। সেটা করা হচ্ছে”।

জিয়া অরফ্যানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া বর্তমানে শর্তসাপেক্ষে মুক্ত রয়েছেন। শর্তগুলো হলো – প্রথমত তিনি বাসায় থেকে চিকিৎসা নেবেন এবং দ্বিতীয়ত তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না। সরকারের তরফ থেকে বরাবর বলা হয়েছে, আইন অনুযায়ী খালেদা জিয়াকে বিদেশে যেতে দেওয়ার সুযোগ নেই।

খালেদা জিয়ার চিকিৎসক ডা. হোসেন বলেছেন, ”মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশে এখন পর্যন্ত ছয়বার পরিবারের পক্ষ থেকে বিদেশ চিকিৎসার জন্য নিতে আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু তাতে কোন সাড়া দেয় নি।”

খালেদা জিয়ার বর্তমান বিদেশ যাওয়া  নিয়ে বিবিসি বলছে, দলের নেতাকর্মীদের অনেকের মধ্যে যে প্রশ্নটি সবচেয়ে বেশি আলোচনায় তা হলো ‘খালেদা জিয়া চিকিৎসা শেষে স্বাভাবিকভাবে ফিরতে পারবেন কি না’ কিংবা ‘তার ফিরতে কোনো সমস্যা হতে পারে কি না’।

এর আগে, ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফেরার সময় বাধাপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। তখন রাজনীতিতে ‘মাইনাস টু ফর্মুলা’ আলোচনায় ছিল এবং দুই নেত্রীকে রাজনীতিকে থেকে সরে দাঁড়াবার জন্য চাপ তৈরি করা হয়েছিলো। তখন অবশ্য দল তৈরির চেষ্টা করেও শেষ পর্যন্ত সেখান থেকে সরে আসেন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

গত পাঁচই অগাস্ট আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর তার দল আওয়ামী লীগ বিপর্যস্ত। শেখ হাসিনা নিজেও ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য দেশ ছাড়ছেন যখন সরকার ঘনিষ্ঠ একটি অংশ নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। আরেকটি গোষ্ঠী ‘সংস্কার আগে নির্বাচন পরে’ এমন বক্তব্য দিচ্ছে।

সরকারে থেকে দল গড়ার প্রক্রিয়ার সমালোচনার বিপরীতে কেউ কেউ বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় দল গড়ার দিকে ইঙ্গিত করে বিএনপিকেও ‘কিংস পার্টি’ হিসেবে উল্লেখ করছেন, যা নিয়ে বিএনপি নেতারা প্রকাশ্যেই অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। অন্যদিকে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কবে নাগাদ দেশে ফিরতে পারবেন তা এখনো নিশ্চিত নয়। এ অবস্থায় খালেদা জিয়া দেশ ছাড়লে তার ‘প্রভাব কেমন হবে’ তা নিয়ে উদ্বেগ আছে দলটির অনেকেরই মধ্যেই।

এর মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের খালেদা জিয়ার বাসায় গিয়ে তার সাথে সাক্ষাতের বিষয়টিও নানা আলোচনায় উঠে আসছে। তবে ওই সাক্ষাতের মধ্যে নেতিবাচক কিছু খুঁজে পায়নি তার দল ও সহকর্মীরা।

খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার ছোট ছেলের স্ত্রী, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং ব্যক্তিগত কয়েকজন কর্মকর্তা উপস্থিত থাকবেন। এ জেড এম জাহিদ হোসেন দেশবাসীর কাছে খালেদা জিয়ার জন্য দোয়া প্রার্থনা করেছেন এবং বলেছেন, “ম্যাডাম সকলের দোয়ায় দ্রুত সুস্থ হবেন।” বিএনপির নেতৃবৃন্দ আশা করছেন, এই চিকিৎসার মাধ্যমে খালেদা জিয়া তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি করতে পারবেন।##

 

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.