নাম গোপন করেও শেষরক্ষা হয়নি পিকে হালদারের। এতদিন শিবশঙ্কর নামে ভারতে বিলাসবহুল জীবনযাপন করছিলেন বাংলাদেশ থেকে টাকা লোপাটকারী এ আসামী। যাকে নিয়ে বাংলাদেশের গণমাধ্যমে ব্যাপক হৈচৈ হয়েছিল। কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে পি কে হালদার টাকা পাচার করে।শেষপর্যন্ত হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের মামলার আসামি প্রশান্ত কুমার হালদারকে (যিনি পি.কে. হালদার নামে পরিচিত) ভারতে আটক করা হয়েছে। বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন বা দুদক পি কে হালদার এবং তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে মোট ৩৪টি মামলা করেছিলো। এসব মামলায় তাদের বিরুদ্ধে কয়েক হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ আনা হয়।
ভারতের অর্থ সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বাহিনী এনফোর্সমেন্ট ডিরেকটরেটের কর্মকর্তারা গণমাধ্যমের কাছে নিশ্চিত করেছেন। তারা জানান, পি কে হালদারসহ মোট ৬ জনকে আটক করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ থেকে রেশন কার্ড, ভারতীয় ভোটার আইডি কার্ড, স্থায়ী অ্যাকাউন্ট নম্বর ও আধার কার্ডের মতো বিভিন্ন সরকারি পরিচয়পত্র সংগ্রহ করেছেন পিকে হালদার। তিনি জালিয়াতির মাধ্যমে এসব পরিচয়পত্র সংগ্রহ করে শিবশঙ্কর হালদার নামে নিজেকে ভারতীয় নাগরিক হিসেবে পরিচয় দিয়ে পশ্চিমবঙ্গে অবস্থান করছিলেন বলে এক বিবৃতিতে জানায় ইডি।
ঢাকার একটি ব্যাংক ও অপর একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক পি কে হালদারের বিরুদ্ধে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকা অস্বাভাবিক লেনদেনের অভিযোগ ওঠার পর দীর্ঘদিন ধরেই তিনি পলাতক ছিলেন।
সেখানকার গণমাধ্যমে শুক্রবার থেকেই তাকে গ্রেফতারের জন্য সেখানকার কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার অভিযানের খবর দিচ্ছিলো। কলকাতার গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী মিস্টার হালদারসহ মোট ছয় জনকে আটক করেছে ভারতের সরকারি সংস্থাটি।
গত বছর নভেম্বরে ৪২৬ কোটি টাকার জ্ঞাত আয়-বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে প্রায় ৬ হাজার ৮০ কোটি টাকা লেনদেনের অভিযোগে তিনিসহ মোট ১৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশীট অনুমোদন করেছিলো দুদক।
মিস্টার হালদার এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ ওঠার পর তিনি পালিয়ে যান। ওই চার্জশিটে পি কে হালদারের বিরুদ্ধে কানাডায় এক কোটি সতের লাখ কানাডিয়ান ডলার পাচারের অভিযোগও আনা হয়েছিলো।
২০১৯ সালে দেশে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের সময় পিকে হালদার স্পটলাইটে আসেন। তিনি এবং তার সহযোগীরা ২০০৯ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে চারটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান- পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস লিমিটেড, এফএএস ফাইন্যান্স এবং রিলায়েন্স ফাইন্যান্স থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। এই ৪টি প্রতিষ্ঠান তখন থেকে ভয়াবহ সংকটে আছে এবং এদের মধ্যে পিএলএফএস এখন লিকুইডেশনের প্রক্রিয়ায় আছে।
২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি প্রায় ২৭৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে প্রশান্ত কুমার হালদারের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। সেই বছর ডিসেম্বরে তাকে ধরার জন্য পুলিশের আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারপোলের কাছে রেড নোটিশ পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করে সরকার। কোলকাতার গণমাধ্যমগুলো বলছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট ও দুদকের অনুরোধে ভারতে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা শুক্রবার থেকে পিকে হালদারকে আটক করতে অভিযান শুরু করে।
শেষ পর্যন্ত আজ তিনিসহ মোট ছয়জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের অশোকনগরের একটি বাড়ি থেকে মিস্টার হালদারকে আটক করা হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, পিকে হালদার এবং তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত ৩৪টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত পিকে হালদারের সঙ্গে সম্পর্কিত ৮৩টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়েছে এবং প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এছাড়া, পিকে হালদারসহ ৬৪ জন অভিযুক্তকে বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় এবং ১১ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন##বিবিসি/স্টার