বিশেষ প্রতিনিধি#
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক বৈঠকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। প্রধান সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে রয়েছে, বাণিজ্য সম্পর্ক বৃদ্ধি। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক আরও মজবুত করতে সম্মত হয়েছে। লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে যে, ২০৩০ সালের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ৫০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা হবে। এছাড়া, একটি বৃহত্তর বাণিজ্য পথ গড়ে তোলার পরিকল্পনা করা হয়েছে, যা ভারত থেকে শুরু হয়ে ইসরায়েল ও ইতালি হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছাবে। প্রতিরক্ষা সহযোগিতা। যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে এফ-৩৫ স্টিলথ যুদ্ধবিমান সরবরাহ করবে এবং প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য একটি ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করবে। সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা। ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলার অন্যতম অভিযুক্ত তাহাউর রানাকে ভারতের কাছে প্রত্যর্পণ করবে যুক্তরাষ্ট্র। ট্রাম্প উল্লেখ করেছেন, “আমরা মুম্বাইয়ে ২৬/১১-র অন্যতম অভিযুক্ত এবং একজন ভয়ংকর মানুষকে ভারতের হাতে তুলে দিচ্ছি।” অবৈধ অভিবাসন। ভারতীয় অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত নেওয়ার বিষয়ে ভারত সম্মতি জানিয়েছে। মোদি বলেছেন, “কোনো ভারতীয় বেআইনিভাবে ঢুকলে আমরা তাকে নিতে প্রস্তুত।” বাংলাদেশ প্রসঙ্গ। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তনে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ডিপ স্টেট’ এর কোনো ভূমিকা নেই বলে ট্রাম্প উল্লেখ করেছেন এবং এই বিষয়ে মন্তব্যের জন্য মোদির প্রতি ইঙ্গিত করেছেন।
তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন যে সিদ্ধান্ত তা হলো,ভারতকে পঞ্চম প্রজন্মের এফ ৩৫ স্টেল্থ যুদ্ধবিমান দেবে আমেরিকা। এফ-৩৫ হল প্রচলিত উড্ডয়ন ও অবতরণ (সিটিওএল) বৈকল্পিক, যা যুক্তরাষ্ট্র বিমান বাহিনী ও অন্যান্য মিত্র রাষ্ট্রের বিমান বাহিনীর জন্য জন্য তৈরি করা হয়েছে। এটি সবচেয়ে ছোট, হালকা সংস্করণ এবং ৯ গুণ মাধ্যাকর্ষণ শক্তিতে কাজ করতে সক্ষম, যা সমস্ত বৈকল্পিকগুলির মধ্যে সর্বোচ্চ।
আনন্দবাজারের মতে, শুধু তা-ই নয়, ভারতকে আরও বেশি করে প্রতিরক্ষা সরঞ্জামও সরবরাহ করার প্রতিশ্রুতি দিলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দু’দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত আলোচনায় বেশ কয়েকটি বিষয় উঠে এসেছে। তার মধ্যে একটি হল এফ ৩৫ যুদ্ধবিমান, যা ভারতের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট গত জানুয়ারিতেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, ভারতের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে বড় কিছু পদক্ষেপ করতে চলেছেন তিনি। একই সঙ্গে এটাও জানিয়েছিলেন যে, ভারতকে তাঁর দেশ আরও বেশি প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম বিক্রি করতে প্রস্তুত। বৃহস্পতিবারের বৈঠকে সেই বিষয়টিতে সবুজ সঙ্কেত দিলেন ট্রাম্প। অন্য দিকে, প্রধানমন্ত্রী মোদী জানিয়েছেন, ভারতের প্রতিরক্ষাকে আরও মজবুত করতে আমেরিকা ‘গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা’ নিতে চলেছে।
দুই রাষ্ট্রপ্রধানের মধ্যে চার ঘণ্টা ধরে বৈঠক হয়। শুধু এফ ৩৫ যুদ্ধবিমান নয়, ভারতকে ট্যাঙ্করোধী ক্ষেপণাস্ত্র জ্যাভেলিন দেওয়ার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে দুই রাষ্ট্রপ্রধানের মধ্যে। এ ছাড়াও সি১৩০জে সুপার হারকিউলিস, সি-১৭ গ্লোবমাস্টার থ্রি, পি-৮১ পোসাইডন বিমান, সিএইচ-৪৭এফ চিনুক, এমএইচ-৬০আর সিহকস, এএইচ-৬৪ই অ্যাপাচে, হার্পুন ক্ষেপণাস্ত্র, এম ৭৭৭ হাউয়িৎজ়ার এবং এমকিউ-৯বি মতো সামরিক সরঞ্জাম নিয়েও দু’দেশের মধ্যে কথা হয়েছে।
দু’দিনের সফরে বৃহস্পতিবার সকালে আমেরিকায় পৌঁছন মোদী। প্রথমে দেখা করেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকার গোয়েন্দাপ্রধান তুলসী গাবার্ডের সঙ্গে। সন্ত্রাসদমন-সহ প্রতিরক্ষার বিভিন্ন বিষয়ে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা নিয়ে কথা হয়েছে দু’জনের। তার পর আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়ালৎজ় এবং রিপাবলিকান নেতা বিবেক রামস্বামীর সঙ্গে বৈঠক করেন মোদী। বৈঠকের পর মোদী জানান, প্রতিরক্ষা, প্রযুক্তি এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত আলোচনা ‘ফলপ্রসূ’ হয়েছে। তার পরই মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক হয় মোদীর।##সূত্রঃআনন্দবাজার
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.