ভারতের মোদী সরকারের মন্ত্রিসভার রদবদল যে কোনও মুহূর্তেই। চলমান করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই ভারতের মন্ত্রী সভার ব্যাপক রদবদল করতে যাচ্ছেন নরেন্দ্র মোদী। মন্ত্রীসভার মধ্যে বেশ কয়েকজনকে পদোন্নতি দিলেও বেশিরভাগ প্রভাবশালী মন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন। আরও করছেন কিনা এ নিয়ে সংশয় বাড়ছে। তবে বিশাল আকারের রদবদল যে হচ্ছে এ নিয়ে ভারতের গণমাধ্যমে বেশ তোলপাড় চলছে।
এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেছেন আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ, তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন দফতরের প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়, স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন, রাসায়নিক ও সার মন্ত্রী সদানন্দ গৌড়া, তিনি শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সঞ্জয় ধোত্রে, মহিলা ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী দেবশ্রি চৌধুরী, শিক্ষামন্ত্রী রমেশ পোখরিয়াল নিশাঙ্ক, শ্রম মন্ত্রী সন্তোষ গঙ্গোয়ার। এছাড়াও অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী থাওয়ারচাঁদ গহলৌত, রতনলাল কাটারিয়া, প্রতাপচন্দ্র ষড়ঙ্গী ও অশ্বিনী চৌবে পদত্যাগ করেছেন।
ভারতীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, রাষ্ট্রপতি ভবনে নতুন মন্ত্রীসভার প্রস্তুতিও শুরু হয়েছে। আট রাজ্যের রাজ্যপাল বদলে দিলেন নরেন্দ্র মোদি। তবে পশ্চিমবঙ্গ সেই তালিকায় নেই। রাজ্যপাল বদলের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হল এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে। বিজেপির সিনিয়র নেতা কেন্দ্রীয় সামাজিক ন্যায়বিচারমন্ত্রী থাওয়ারচাঁদ গেহলটকে মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে দেওয়া হল। ৮৩ বছরের গেহলটকে কর্ণাটকের রাজ্যপাল করা হয়েছে। সুতরাং আসন্ন মন্ত্রিসভার রদবদলে এই মন্ত্রকে নতুন মন্ত্রী আসছেন। তিনি রাজ্যসভার এমপি। সুতরাং তাঁকে রাজ্যসভা থেকে ইস্তফা দিতে হচ্ছে। অর্থাৎ এই আসনে নতুন কেউ রাজ্যসভার সদস্য হবেন। দীনেশ ত্রিবেদী থেকে জিতিনপ্রসাদ, অনেকেই আশায় রয়েছেন। মিজোরাম, গোয়া, হরিয়ানা, ত্রিপুরা, ঝাড়খণ্ড, হিমাচল প্রদেশ, হরিয়ানা, মধ্যপ্রদেশ ও কর্ণাটকের রাজ্যপাল বদল হয়েছে।
বিজেপি সূত্রে দাবি করা হয়েছে, এই মুহূর্তে দেশে রেকর্ড সংখ্যক তফসিলি জাতি, উপজাতি, ওবিসি গোষ্ঠীভুক্ত রাজ্যপাল আছেন। এই ঘটনা মোদি সরকারের সামাজিক ন্যায়েরই প্রতিফলন। বিজেপির দাবি, এর আগে একসঙ্গে এত অনগ্রসর শ্রেণির ব্যক্তিত্ব রাজ্যপালের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে স্থান পাননি। এমনকী দুই রাজ্যে আছেন মুসলিম সম্প্রদায়ের রাজ্যপাল। পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল জগদীপ ধনকারকে নিয়ে এই মুহূর্তে দেশে তিনজন জাঠ রাজ্যপালও রয়েছেন।
সরকারি সূত্রের খবর, মন্ত্রিসভার রদবদলে সামাজিক ন্যায়, উচ্চশিক্ষা, সংস্কৃতি, অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রক পাবে নতুন মন্ত্রীরা। মোদি মন্ত্রিসভায় সর্বোচ্চ ৮১ জন মন্ত্রী থাকতে পারেন। কিন্তু এখন সম্ভবত সংখ্যাটা ৭৫ হতে চলেছে। ইতিমধ্যেই দিল্লিতে পৌঁছেছেন একের পর এক বিজেপি এমপি। গতকাল রাতেই তাঁদের বার্তা দেওয়া হয়েছে মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করার।
বাংলার দুই এমপি শান্তনু ঠাকুর ও নিশীথ প্রামাণিকও দিল্লিতে এসেছেন। মঙ্গলবার উজ্জয়িনীর মহাকালেশ্বর মন্দিরে পুজো দিয়েই দিল্লি পৌঁছেছেন জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া। গুয়াহাটি থেকে হাজির হয়ে গিয়েছেন সর্বানন্দ সোনেওয়াল।
মঙ্গলবার সকালেই দিল্লিতে হাজির হয়েছেন বিহারের নীতীশ কুমারের দলের এমপি আরসিপি সিং, লোকজনশক্তি পার্টির পশুপতি পরস। এমনকী প্রয়াত রামবিলাস পাসোয়ানের ভাই পশুপতি পরসকে দিল্লির কনট প্লেসে কটন কুর্তা কিনতে দেখা গিয়েছে বলেও জানা যাচ্ছে। অর্থাৎ নতুন কুর্তা পরে যাতে মন্ত্রিসভায় শপথ নিতে পারেন সেই প্রস্তুতিও তিনি করে রেখেছেন। সম্ভবত রামবিলাসপুত্র চিরাগ পাসোয়ানের রাজনৈতিক জীবনে নতুন চ্যালেঞ্জ আসতে চলেছে। তাঁকে বিজেপির হাত ছাড়তে হবে। যদিও সেক্ষেত্রে লোকজনশক্তি পার্টির দখল কার হাতে থাকবে সেটা নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে উঠেছে।
উত্তরপ্রদেশের রীতা বহুগুণা যোশি, অনুপ্রিয়া প্যাটেল এসে গিয়েছেন দিল্লিতে।
মহারাষ্ট্র থেকে দিল্লিতে সোমবার রাতেই পৌঁছে গিয়েছেন নারায়ণ রানে। রমাশংকর কাটেরিয়া, সিপি যোশি এবং লালন সিং প্রায় এক সপ্তাহ ধরেই রয়েছেন দিল্লিতে। লালন সিং, রাহুল কাসোয়ানদের পাশাপাশি সবথেকে বেশি জল্পনা সৃষ্টি হয়েছে বরুণ গান্ধীকে নিয়ে। বরুণ লাগাতার পিলিভিট, সুলতানপুর থেকে জয়ী হয়ে এসেছেন। কিন্তু তাঁকে গত ১০ বছরে কখনও মন্ত্রী করা হয়নি। এমনকী ২০১৯ সালে তাঁর মা মানেকা গান্ধীকে মন্ত্রী তালিকা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এবার কি ফের মোদি মন্ত্রিসভায় ঢুকছেন আর এক গান্ধী, জল্পনা তা নিয়েও। ## বর্তমান/আনন্দবাজার