-- বিজ্ঞাপন ---

বাড়ছে সামরিক ব্যয়,বাড়ছে ভয়াবহ যুদ্ধের আশঙ্কা!

সিরাজুর রহমান, বিশেষ প্রতিনিধি#

চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মহামন্দার মুখেও মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের উত্তাপে বিশ্বের অধিকাংশ দেশই আজ তাদের নিজস্ব সামরিক ও প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় নির্বিচারে বৃদ্ধি করছে। বিশেষ করে ইউরোপ, এশিয়া প্যাসিফিক এবং মধ্যপ্রাচ্যে দেশগুলো সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাদের সামরিক ব্যয় ১৪০ শতাংশ থেকে ৩০০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছে কিংবা করতে যাচ্ছে। এদিকে চলতি ২০২৪ সালের ২২শে এপ্রিলে প্রকাশিত ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনিস্টিটিউটের তথ্যমতে, গত ২০২৩ সালে সারা বিশ্বে সামরিক ও প্রতিরক্ষা খাতে মোট প্রায় ২.৪৪৩ ট্রিলিয়ন ডলার অর্থ ব্যয় করা হয়। আর তা চলতি ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত তা হয়ত প্রায় ২.৮ ট্রিলিয়ন ডলারের সীমাকে অতিক্রম করতে পারে।

বিশেষ করে গত ৩রা ডিসেম্বর রাশিয়ার পার্লামেন্ট আসন্ন ২০২৫ সালের জন্য রেকর্ড পরিমাণ সামরিক বাজেট ঘোষণা করে৷ মূলত আগামী ২০২৫ সালের জন্য ১৩.৫ ট্রিলিয়ন রুবল বা ১২৬ বিলিয়ন ডলারের সামরিক ও প্রতিরক্ষা বাজেট অনুমোদন করেন প্রতিরক্ষা বিলে স্বাক্ষর করেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। যা আসলে ছিল কিনা চলতি ২০২৪ সাল অপেক্ষা প্রায় ২৮ বিলিয়ন ডলার বেশি সামরিক বাজেট। তাছাড়া আগামী বছর রাশিয়া তার মোট সরকারি বাজেটের প্রায় ৩২.৫% ইউক্রেন যুদ্ধ চলমান রাখতে সামরিক খাতে নির্বিচারে ব্যয় করে যাচ্ছে। তবে আল জাজিরা নিউজের দেয়া তথ্যমতে, রাশিয়া আগামী ২০২৫ সালের জন্য ১৪৫ বিলিয়ন ডলারের সামরিক বাজেট বরাদ্দ দিয়েছে।
আসলে দীর্ঘ মেয়াদি ইউক্রেন যুদ্ধ চলমান রাখতে এবং পশ্চিমা বিশ্বকে কৌশলগতভাবে মোকাবিলা করার লক্ষ্যে গত ২০২২ সাল থেকেই রাশিয়া তার জাতীয় সামরিক ও প্রতিরক্ষা বাজেট দুই থেকে তিন গুণ বৃদ্ধি করেছে। তাছাড়া নতুন নতুন মিসাইল এবং কমব্যাট ড্রোন তৈরি কিংবা সংগ্রহ করতে দেশটি ইতোমধ্যেই বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে। তাছাড়া নিজেদের অস্ত্র ঘাটতি মেটাতে সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়া ইরান, চীন এবং উত্তর কোরিয়ার মতো দেশের কাছ থেকে বিলিয়ন ডলারের অধিক অস্ত্র এবং গোলাবারুদ আমদানি করে।
রাশিয়া তার নিউক্লিয়ার অস্ত্র ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করতে এবং তার পাশাপাশি স্ট্র্যাটিজিক ইন্টারকন্টিনেন্টাল ব্যালেস্টিক মিসাইল এবং হাইপারসনিক মিসাইল তৈরি করতে বিপুল পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে। তবে রাশিয়ার সরকারের তরফে সামরিক ব্যয় ১২৬ বিলিয়ন ডলার দেখানো হলেও বাস্তবে ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে হয়ত তারা প্রতি বছর গড়ে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ডলার বা তার অধিক পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে যাচ্ছে। যা কিন্তু নিশ্চিতভাবেই দেশটিকে এক দীর্ঘ মেয়াদি অর্থনৈতিক সংকোচন এবং সংকটের মুখে ফেলে দিয়েছে। এই সংকট মোকাবিলায় দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইতোমধ্যেই তাদের সুদের হার ২১% পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদ চীন, ইরান এবং রাশিয়াকে কৌশলগতভাবে মোকাবিলা করার স্বার্থে এবং তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের মতো ভয়ংকর ঝুঁকি মোকাবিলায় আগামী ২০২৫ অর্থবছরের জন্য ৮৮৪ বিলিয়ন ডলারের প্রতিরক্ষা বাজেট অনুমোদন করেছে। যা কিনা আগের অর্থবছরের চেয়ে ১ শতাংশ বেশি সামরিক ব্যয় দেখানো হয়েছে। আর এদিকে সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়া ঘোষিত ১২৬ বিলিয়ন সামরিক বাজেট অপেক্ষা আমেরিকা প্রায় ৭ গুণের অধিক সামরিক ব্যয় করতে যাচ্ছে। অন্যদিকে দেশটি তাদের নিউক্লিয়ার অস্ত্রের মজুত বৃদ্ধি এবং স্ট্র্যাটিজিক নিউক্লিয়ার ফ্যাসিলিটি আধুনিকায়নের জন্য অতিরিক্ত ১৪০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করতে যাচ্ছে।
চলমান অর্থনৈতিক মন্দা সত্ত্বেও, চীন আগামী ২০২৫ সালের জন্য ২২২ বিলিয়ন ডলারের এক বিশাল আকারের সামরিক ও প্রতিরক্ষা বাজেট ঘোষণা করেছে। যা কিনা চলতি ২০২৪ সাল অপেক্ষা প্রায় ৭.২% বেশি সামরিক ব্যয় বরাদ্দ দিয়েছে চীনের শি জিং পিং সরকার। তবে একাধিক সামরিক গবেষণামূলক থিংক ট্যাংকের দেয়া প্রেডিকশন মতে, চীন চলতি ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত আনুমানিক ৩৫০ বিলিয়ন ডলার থেকে ৪৭১ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত হয়ত ব্যয় করতে পারে। যদিও চীনের সরকারের তরফে কখনোই তাদের প্রকৃত সামরিক ও প্রতিরক্ষা ব্যয় বিশ্বের সামনে প্রকাশ করা হয় না।

এদিকে আমেরিকা, চীন এবং রাশিয়ার পাশাপাশি বিশ্বের চতুর্থ শীর্ষ সামরিক ও প্রতিরক্ষা ব্যয়কারী দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে ভারত। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের জন্য ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার মোট আনুমানিক ৭৫ বিলিয়ন ডলারের প্রতিরক্ষা বাজেট ঘোষণা করে। যা তার আগের ২০২২-২৩ অর্থবছরের দেশটির মোট সামরিক ও প্রতিরক্ষা বাজেট ছিল প্রায় ৭১ বিলিয়ন ডলার। তাছাড়া সামরিক ব্যয়ের দিক দিয়ে বিশ্বের শীর্ষ পঞ্চম দেশ হিসেবে যুক্তরাজ্য ৭১.৯২ বিলিয়ন ডলার। তাছাড়া বিশ্বের অন্যান্য সকল প্রভাবশালী দেশ তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ কিংবা নিউক্লিয়ার ওয়ারের আশঙ্কায় তাদের সামরিক ও প্রতিরক্ষা বাজেট অবিশ্বাস্যভাবে বৃদ্ধি করেছে। যা কিনা এখন সারা বিশ্বকে এক অজানা এবং ভয়াবহ যুদ্ধের মুখে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।##তথ্যসূত্র: ডিডাব্লিউ, এসআইপিআরআই, গার্ডিয়ান, সিএনএন, আল-জাজিরা, উইকিপিডিয়া।

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.