-- বিজ্ঞাপন ---

পরমাণু অস্ত্রের সম্ভাব্য পরীক্ষার বিরুদ্ধে আমেরিকাকে চরম হুঁশিয়ারি দিল রাশিয়া!

সিরাজুর রহমান#

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম ক্ষমতা গ্রহণের আগেই এবার রাশিয়া এবং আমেরিকার মধ্যে সম্ভাব্য নিউক্লিয়ার অস্ত্র পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে চরম উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। রাশিয়ার পুতিন প্রশাসন ইতোমধ্যেই  সম্ভাব্য নিউক্লিয়ার অস্ত্র পরীক্ষার বিষয়ে সতর্ক বার্তা দিয়েছে আমেরিকাকে। মূলত গত ২৭শে ডিসেম্বর শুক্রবার রাশিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ আমেরিকার আসন্ন ট্রাম্প প্রশাসনকে সতর্ক করে বলেন যে, আমেরিকার পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষার উসকানির জবাবে মস্কো অদূর ভবিষ্যতে তার নিউক্লিয়ার অস্ত্র পরীক্ষার সম্ভাব্য বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করছে।

রাশিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ সম্প্রতি আমেরিকার আসন্ন ট্রাম্প প্রশাসনকে একটি সতর্কতা প্রদান করেছেন। তিনি বলেছেন, যদি আমেরিকা পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষা করতে শুরু করে, তবে মস্কো এই পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়া হিসেবে তার নিজস্ব নিউক্লিয়ার অস্ত্র পরীক্ষা করার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করতে পারে। এটি একটি ইঙ্গিত যে পরমাণু শক্তি নিয়ে বৈশ্বিক উত্তেজনা বৃদ্ধি পেতে পারে এবং রাশিয়া এর প্রতিক্রিয়া জানাতে প্রস্তুত।সের্গেই রিয়াবকভ এই মন্তব্যটি ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে মস্কোতে একটি সংবাদ সম্মেলনে করেছিলেন। তিনি বলেন, আমেরিকার পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষা শুরু হলে রাশিয়া তার পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষার সম্ভাবনা যাচাই করবে এবং এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যালোচনার বিষয় হবে।

সের্গেই রিয়াবকভের এই মন্তব্যটি মূলত একটি সতর্কবার্তা হিসেবে দেখা যাচ্ছে, যা রাশিয়ার পরমাণু নীতি এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা পরিস্থিতির প্রতি গুরুত্বারোপ করে। এটি একটি সংকেত যে, যদি আমেরিকা পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষা শুরু করে, তবে রাশিয়া এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে একই ধরনের পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিতে পারে, যা বিশ্বে নতুন ধরনের পরমাণু যুদ্ধের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

এটি মূলত আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও সামরিক প্রতিযোগিতায় উত্তেজনা বৃদ্ধি পেতে পারে এমন একটি ইঙ্গিত। পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষা নিয়ে এই ধরনের আলোচনা একদিকে যেমন বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করে, তেমনি এটি অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তির ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে।

আসলে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ২০১৭ সালে প্রথম বার ক্ষমতায় লাভের পর পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা নিষেধাজ্ঞার চুক্তির (সিটিবিটি) বিরুদ্ধে জোরালো অবস্থান নিয়েছিলেন। মূলত ১৯৯৬ সালে জাতিসংঘে রাশিয়ার নেতৃত্বে কম্প্রিহেনসিভ নিউক্লিয়ার-টেস্ট-ব্যান ট্রিটি (সিটিবিটি) চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। যে চুক্তির আওতায় সারা বিশ্বেই সামরিক ও শান্তিপূর্ণ উভয় উদ্দেশ্যেই স্কল ধরনের নিউক্লিয়ার পরীক্ষা কিংবা বিস্ফোরণ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়। যদিও আগের সময়ে ট্রাম্প প্রশাসন (সিটিবিটি) চুক্তিকে এড়িয়ে নিউক্লিয়ার অস্ত্র পরীক্ষা করা যায় কিনা তা নিয়ে আলোচনা করেছিল।

তবে এবার দ্বিতীয় মেয়াদে ট্রাম্প প্রশাসন একই ধরনের নিউক্লিয়ার অস্ত্র পরীক্ষার চেষ্টা করতে পারেন বলে আশাঙ্খা প্রকাশ করেছে রাশিয়ার পুতিন প্রশাসন। যদিও রাশিয়ার আশঙ্কা সত্ত্বেও ডোনাল্ড ট্রাম্প এখনো পর্যন্ত এই স্পর্শকাতর বিষয়ে কোনো ধরনের মন্তব্য কিংবা উসকানিমূলক বক্তব্য দেননি। এদিকে গত ২০২২ সালের ২৪শে ফেব্রুয়ারি থেকে চলমান ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের বিভিন্ন সময়ে পুতিন প্রশাসন এবং তার অধীন প্রতিরক্ষা দপ্তরের তরফে প্রায় অর্ধশতাধিক বার বিভিন্ন দেশ বিশেষ করে ন্যাটো জোটভুক্ত বেশকিছু দেশের উপর নিউক্লিয়ার অস্ত্র হামলার হুমকি দেয়।

পৃথিবীকে পরমাণু অস্ত্রের তেজস্ক্রিয়তা থেকে সুরক্ষা দিতে ১৯৯৬ সালের ১০ই সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে (সিটিবিটি) প্রস্তাব গৃহীত হয়েছিল। তবে আমেরিকাসহ আটটি দেশ এই চুক্তিটি অনুমোদন করেনি বলে এটি কখনোই কার্যকর হয়নি। আর তাই গত ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেন যে, যেহেতু আমেরিকা সিটিবিটি চুক্তি অনুমোদন করেনি, তাই এই চুক্তির রাশিয়ার অনুমোদন প্রত্যাহার করে নিয়ে রাশিয়ার পার্লামেন্টে (সিটিবিটি) প্রত্যাহার করে আইন পাশ করা হয়। যা কিনা গত ২রা নভেম্বর পুতিন আনুষ্ঠানিকভাবে সিটিবিটি চুক্তির অনুমোদন প্রত্যাহারের আইনে স্বাক্ষর প্রদান করেন।

আসলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে ১৯৪৫ সালের জুলাই মাসে গোপনে নিউ মেক্সিকোর আলামোগোর্দোতে প্রথম পারমাণবিক বোমা পরীক্ষা করে আমেরিকা। তাছাড়া একই বছর ১৯৪৫ সালে ৬ই আগস্ট হিরোশিমা এবং ৯ই আগস্ট নাগাসাকি নামক জাপানের দুটি শহরে মানব জাতির ইতিহাসে প্রথম বারের মতো নিউক্লিয়ার অস্ত্র হামলা চালিয়ে এবং লক্ষাধিক সাধারণ মানুষ হত্যার মাধ্যমে মানব জাতিকে এক অতি ভয়ংকর এবং প্রাণঘাতী নিউক্লিয়ার অস্ত্রের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। তার সাথে বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলোর মধ্যে শুরু হয় দীর্ঘ মেয়াদি পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার প্রতিযোগিতা।

উইকিপিডিয়ার দেয়া তথ্যমতে, চলতি ২০২৪ সালে সারা বিশ্বের মোট ৯টি দেশের অস্ত্র ভান্ডারে মোট প্রায় ১২,১১৯টি নিউক্লিয়ার এন্ড থার্মোনিউক্লিয়ার অস্ত্র/ওয়ারহেড মজুত থাকতে পারে। যার মধ্যে অবশ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর হাতে এ মুহূর্তে মোট প্রায় ৫,০৪৪টি এবং রাশিয়ার অস্ত্র ভান্ডারে মোট প্রায় ৫,৫৮০টি নিউক্লিয়ার অস্ত্র মজুত রয়েছে। তার পাশাপাশি বর্তমানে চীনের অস্ত্র ভাণ্ডারে ৫০০টি, ফ্রান্সের ২৯০টি, যুক্তরাজ্যের ২২৫টি, পাকিস্তানের ১৭০টি, ভারতের ১৭২টি, ইসরাইলের ৯০টি এবং সর্বশেষ উত্তর কোরিয়ার আনুমানিক ৫০টি স্বল্প সক্ষমতার নিউক্লিয়ার অস্ত্রের মজুত থাকতে পারে।

বিশ্বের ৯টি দেশের কাছে বিপুল পরিমাণ নিউক্লিয়ার অস্ত্রের মজুত থাকার পাশাপাশি এই দেশগুলো কিন্তু বিভিন্ন সময়ে ভূপৃষ্ঠের নিচে, সাগরের গভীরে এবং এমনকি উন্মুক্ত বায়ুমণ্ডলেও নিউক্লিয়ার অস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে। উইকিপিডিয়ার দেয়া তথ্যমতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একাই ১৯৪৫ সাল থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত প্রায় ১,০৩০টি নিউক্লিয়ার টেস্ট সম্পন্ন করেছে। তাছাড়া রাশিয়া ৭১৫টি, যুক্তরাজ্য ৪৫টি, ফ্রান্স ২১০টি, চীন ৪৫টি, ভারত ৬টি, পাকিস্তান ২টি এবং উত্তর কোরিয়া এ পর্যন্ত মোট ৬টি নিউক্লিয়ার টেস্ট সম্পন্ন করে। তবে ইসরাইলের হাতে ৯০টি নিউক্লিয়ার অস্ত্র থাকার সমূহ সম্ভবনা থাকলেও দেশটি বাস্তবে এখনো পর্যন্ত কোন ধরনের নিউক্লিয়ার টেস্ট করেছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।##তথ্যসূত্র:- উইকিপিডিয়া, রয়টার্স, ইন্ডিপেন্ডেন্ট।

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.