-- বিজ্ঞাপন ---

পশ্চিমা বিশ্বের বাঁধার মধ্যেও প্রযুক্তিগত উন্নয়নে এগিয়ে যাচ্ছে ইরান

0

সিরাজুর রহমান, বিশেষ প্রতিনিধি#
মুসলিম বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে বর্তমানে জ্ঞানবিজ্ঞান, শিক্ষা, উদ্ভাবন, প্রযুক্তিগত উন্নয়নসহ প্রায় সব ক্ষেত্রেই শীর্ষ স্থানে উঠে এসেছে ইরানের নাম। আমেরিকা ও পশ্চিমা বিশ্বের শতাধিক নিষেধাজ্ঞা ও বাধার মুখেও প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই অবিশ্বাস্য সাফল্য অর্জন করে যাচ্ছে দেশটি। আসলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের একাধিক সংস্থার তৈরিকৃত টেকসই ও উন্নয়নমূলক সূচকে ইরানের শক্তিশালী অবস্থান সারা বিশ্বকে চমকে দিয়েছে।
ওয়ার্ল্ড ইনটেলেকচুয়াল প্রপার্টি অর্গানাইজেশন (ডব্লিউআইপিও) এর বৈশ্বিক উদ্ভাবন সূচকে (জিআইআই) বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির একটি দেশ হচ্ছে ইরান। গত ২০১৩ সালের এই সূচকে ১১৩তম স্থান থাকলেও গত ২০২৩ সালে ৬২তম স্থানে উঠে এসেছে দেশটি। তাছাড়া নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন, উন্নয়ন ও গবেষণা সূচকে ইরান নিম্ন-মধ্যম আয়ের ৩৭টি দেশের মধ্যে ৬ষ্ঠ স্থানে এবং মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষ ১০টি অর্থনীতির দেশের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ইরানের নাম।
বিগত চার দশক থেকে আমেরিকা নিয়ন্ত্রিত পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞা ও বাণিজ্যিক অবরোধের মুখে ইরানের জাতীয় অর্থনীতি ও বৈদেশিক বাণিজ্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কিন্তু পিছিয়ে নেই ইরানের উচ্চস্তরের শিক্ষা ব্যবস্থা। মূলত টাইম হায়ার এডুকেশন র‍্যাংকিং ২০২৪ এ ইরানের মোট ৭৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ও টেকনোলজি ইনিস্টিটিউটের নাম স্থান পেয়েছে। এই তালিকায় ৩০১-৩৫০ র‍্যাংকিং এর মধ্যে ইরানের প্রথম স্থানীয় শরিফ ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি এবং ৩৫১-৪০০ তম স্থানে রয়েছে দেশটির দ্বিতীয় শীর্ষ স্থানীয় আমির কাবির ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি। আবার উচ্চ শিক্ষাস্তরে নারীদের অংশগ্রহণের হার ৫০.৫% এবং পুরুষের হার ৪৯.৫%।
চলতি ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত ইরানে নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন, গবেষণা বা জ্ঞান নির্ভর ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির সংখ্যা প্রায় ৯,৫৫৯টি। এর মধ্যে রয়েছে স্টার্ট-আপ কোম্পানি ৬,৭৭৯টি, প্রযুক্তি পণ্য ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি ৭৯৫টি এবং গবেষণা ও উদ্ভাবনীমূলক প্রতিষ্ঠান ১,৯৮৫টি। আবার ইরানে ২০১২ সালে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পার্কের সংখ্যা ছিল ৩৩টি। যা গত ২০২৩ সালে সেটি বেড়ে দাঁড়ায় ৫৪টিতে। ২০১২ সালে প্রযুক্তি নির্ভর ইনকিউবেটর সেন্টার ছিল মোট ১৩১টি। যা কিনা গত ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে এসে ২৯০টিতে পৌঁছে যায়।
ইরান ভিত্তিক নিউজ এজেন্সির দেয়া তথ্যমতে, চলতি ২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ইরানের ইনোভেটিভ কোম্পানি ১,৯১৪টি, উদ্ভাবন কেন্দ্রের সংখ্যা ৪১৯টি এবং এক্সিলারেটরের সংখ্যা ১৫৯টি রয়েছে। বর্তমানে আইসিটি খাতে বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলার চেষ্টা করছে ইরান। বর্তমানে দেশটির গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর ৯৮.৫% এবং শহরের প্রায় ১০০% জনগোষ্ঠী ইন্টারনেট সুবিধা পান। গত ২০২০ সালে ভয়াবহ করোনা মহামারি চলাকালে বিশ্বের মাত্র যে কয়টি দেশ সফলভাবে কভিড-১৯ টিকা তৈরি করেছিল, তার একটি দেশ হচ্ছে ইরান। দেশটি তার চাহিদার প্রায় ৯৯% ওষুধ নিজেরাই তৈরি করতে সক্ষম এবং দেশটি সারা বিশ্বের প্রায় ৪০টি দেশে ওষুধ রপ্তানি করে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পরমাণু প্রযুক্তির পাশাপাশি সামরিক ও প্রতিরক্ষা খাত বিশেষ করে কমব্যাট ড্রোন ও মিসাইল প্রযুক্তিতে ইরানের উত্থান পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলোর কপালে চিন্তার ভাজ ফেলে দিয়েছে। বর্তমানে ইউক্রেনে পশ্চিমা বিশ্বের উন্নত অস্ত্রের বিরুদ্ধে ইরানের তৈরি ক্ষুদ্র অস্ত্র, ড্রোন ও মিসাইল সাবলীলভাবে ব্যবহার করে যাচ্ছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী। তাছাড়া নিজস্ব প্রযুক্তির লঞ্চপ্যাড ও রকেট সিস্টেম ব্যবহার করে বিশ্বের মাত্র যে প্রায় ৮ থেকে ১০টি দেশ মহাকাশে স্যাটেলাইট পাঠায়, তার একটি হচ্ছে কিন্তু ইরান।
বৈশ্বিক পর্যায়ে ন্যানোটেকনোলজি নিয়ে গবেষণারত ওয়েবসাইট স্ট্যাটন্যানোর দেয়া তথ্যমতে, ন্যানো টেকনোলজি শিল্প উন্নয়নে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বের শীর্ষ চতুর্থ স্থানে উঠে এসেছে ইরান। বর্তমানে ন্যানো টেকনোলজিতে বিশ্বের শীর্ষ তিনটি দেশ হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ভারত। দেশটির বৈজ্ঞানিক প্রকাশনা এবং ন্যানো প্রযুক্তির পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানির ক্ষেত্রে বড় ধরনের সফলতা পেয়েছে। দেশটি এমনকি তাদের ব্যবহৃত পুরোনো যাত্রীবাহী বিমানের ৮০% স্পেয়ার পার্টস রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিং করে নিজ দেশেই ডিজাইন ও তৈরি করে।##

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.