-- বিজ্ঞাপন ---

অনলাইনে অর্ডার দিলেন, অমনি এসে গেলো এক ফালি রোদ

সেবা গ্রহণের জন্য ৩০ হাজারেরও বেশি আবেদন জমা পড়েছে

কাজী আবুল মনসুর#

অনলাইনে অর্ডার দিলেন, অমনি এসে গেলো এক ফালি রোদ। ঠান্ডার হাত থেকে বাচতেঁ রোদ কিনতে পারবেন অচিরেই। এটি কোন গল্প না, বাস্তবতার নিরিখে রোদ কিনতে আগাম অর্ডার জমা হয়েছে ৩০ হাজারেরও বেশি। রোদ কেনা নিয়ে কখন যে বিশ্বের মানুষের মধ্যে হুলুস্থুল লেগে যায় এটাই এখন দেখার বিষয়।

অনুসন্ধান মতে, আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ার Reflect Orbital নামে একটি স্টার্টআপ “Sunlight on Demand” প্রকল্পের মাধ্যমে সৌরশক্তি ব্যবহারের নতুন সম্ভাবনা নিয়ে কাজ করছে। এর নেতৃত্বে রয়েছেন বেন নোয়াক। এই প্রকল্পে ৫৭টি স্যাটেলাইট ব্যবহার করে মাইলার মিরর (এক প্রকারের প্রতিফলক) দিয়ে সূর্যের আলোকে পৃথিবীতে নির্দিষ্ট স্থানে প্রতিফলিত করার পরিকল্পনা রয়েছে। এর মাধ্যমে সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো সূর্যাস্তের পরেও ৩০ মিনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন চালিয়ে যেতে পারবে।

এই প্রযুক্তির প্রাথমিক পরীক্ষায় একটি গ্যাস বেলুনের মাধ্যমে ৮০০ ফুট দূরে সৌর প্যানেলে সূর্যের আলো প্রতিফলিত করে সফল ফলাফল পাওয়া গেছে। প্রতিফলিত সূর্যের আলো প্রতি বর্গমিটারে প্রায় ৫০০ ওয়াট শক্তি উৎপন্ন করতে সক্ষম হয়েছে। ভবিষ্যতে বাণিজ্যিকভাবে সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি করার পাশাপাশি অন্ধকার এলাকায় আলোর চাহিদা পূরণেও এটি ব্যবহার করা হতে পারে।

যদিও প্রকল্পটি বেশ চ্যালেঞ্জিং, যেমন আবহাওয়া বা মৌসুম পরিবর্তনজনিত বাধা এবং আলো দূষণের সম্ভাবনা, তবুও এটি সৌরশক্তি ব্যবহারে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। প্রথম স্যাটেলাইট ২০২৫ সালে উৎক্ষেপণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। বর্তমানে সেবা গ্রহণের জন্য ৩০ হাজারেরও বেশি আবেদন জমা পড়েছে​।
বেন নোয়াকের Reflect Orbital প্রকল্পটি অত্যন্ত আকর্ষণীয় এবং সম্ভাবনাময়। এটি সৌরশক্তি ব্যবহারের সীমাবদ্ধতা দূর করতে পারে। প্রকল্পটির মূল লক্ষ্য হচ্ছে সূর্যের আলো প্রতিফলিত করে সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর কার্যকারিতা বাড়ানো এবং আলোর চাহিদা পূরণ করা, বিশেষত যখন সূর্যাস্তের পর বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়।

৫৭টি ক্ষুদ্র উপগ্রহ পৃথিবীর নিম্ন-কক্ষপথে (Low Earth Orbit) স্থাপন করা হবে। প্রতিটি উপগ্রহে থাকবে ৩৩ বর্গফুট আকারের প্রতিফলক, যা মাইলার নামে পরিচিত একটি উচ্চ-প্রতিফলন ক্ষমতাসম্পন্ন পলিয়েস্টার ফিল্ম। ব্যবহারকারীরা একটি অনলাইন ইন্টারফেস ব্যবহার করে নির্দিষ্ট স্থানের GPS কোঅর্ডিনেট দিয়ে রোদের “অর্ডার” করতে পারবেন।
উপগ্রহ সিস্টেম আলোকে নির্দিষ্ট করে প্রতিফলিত করবে। সূর্যাস্তের পরে অতিরিক্ত ৩০ মিনিট আলো দিয়ে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হবে। রাতের নির্দিষ্ট সময়ে আলোর চাহিদা মেটানো যাবে, যা বিদ্যুতের চাহিদার শিখর সময়ে কার্যকর হতে পারে। একটি গ্যাস বেলুনে আট ফুট বাই আট ফুট আকারের মাইলার মিরর দিয়ে আলো প্রতিফলিত করে পরীক্ষামূলক ফলাফল পাওয়া গেছে।
এই প্রতিফলিত আলোর মাধ্যমে সৌর প্যানেল প্রতি বর্গমিটারে ৫০০ ওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছে। এটি প্রায় সূর্যের স্বাভাবিক আলোর চেয়ে অর্ধেক শক্তিশালী​। অবশ্য মেঘলা আবহাওয়া বা ঝড়ের সময় আলো প্রতিফলিত করা কঠিন হতে পারে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, তবে মিররের নকশা এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে আলো দূষণের প্রভাব কমানো যায়। কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণের খরচ উচ্চ, তবে ভবিষ্যতে এটি কমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বেনের প্রকল্প সফল হলে, সৌরশক্তির ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণে এটি বিপ্লব ঘটাতে পারে। এটি শুধু সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য নয়, ব্যক্তিগত এবং শিল্প খাতেও আলো সরবরাহের নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করবে। প্রথম পরীক্ষামূলক উপগ্রহ ২০২৫ সালে উৎক্ষেপণের পরিকল্পনা রয়েছে​।

সংস্থাটি জানাচ্ছে, পরীক্ষামূলক ভাবে একটি গ্যাসবেলুনে আট ফুট বাই আট ফুটের একটি ‘মাইলার’ দর্পণ আটকে সেখান থেকে সূর্যরশ্মি প্রতিফলিত করে প্রায় ৮০০ ফুট দূরের সৌরপ্যানেলে ফেলা হয়েছে। ফলাফলও আশাব্যঞ্জক। দেখা গিয়েছে, প্রতি বর্গমিটার প্যানেল থেকে ৫০০ ওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়েছে।

সব পরিকল্পনা মতো চললে আগামী বছরেই প্রকল্প চালু করতে চান বেন। ইতিমধ্যে ৩০ হাজারের বেশি আবেদনপত্রও জমা পড়েছে। তবে কক্ষপথে উপগ্রহ স্থাপন তো বেশ ব্যয়সাপেক্ষ ব্যাপার। বেন আশাবাদী, অদূর ভবিষ্যতে সেই খরচ অনেকটা কমে আসবে। আর, রোদ বেচে আখেরে লাভের মুখই দেখবে সংস্থা।##

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.