-- বিজ্ঞাপন ---

অভাবনীয় আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স প্রযুক্তির যুগে প্রবেশ করেছে বিশ্ব!

0

সিরাজুর রহমান,বিশেষ প্রতিনিধি#

বর্তমানে একবিংশ শতাব্দীর এক অভাবনীয় আবিষ্কার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) টেকনোলজি। বিশেষ করে শিল্প উৎপাদন থেকে শুরু করে, শিক্ষা, জলবায়ু গবেষণা, রোগ নির্ণয়, ডিফেন্স সিস্টেম, ড্রোন, অটোনোমাস কিলার রোবট, লেখালিখি এবং কৃষিসহ প্রায় সকল ক্ষেত্রেই বর্তমানে (এআই) প্রযুক্তির ব্যবহার কিন্তু অবিশ্বাস্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

তবে বাস্তবে শিক্ষাক্ষেত্রে এই প্রযুক্তি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবে বলে আশা করা হলেও আমরা আসলে এখনো পর্যন্ত এই প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারছি না। আমরা উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নে এই অভিনব প্রযুক্তির সাথে সম্পৃক্ত হতে না পারলেও স্বল্প পরিসরে কিছু ভালো কাজের পাশাপাশি অতি মাত্রায় বিনোদন এবং অপ্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছি।

যেখানে উন্নত বিশ্বের দেশগুলো কিন্তু ইতোমধ্যেই এই প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে তাদের শিক্ষা ও শিল্প উৎপাদনে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। সেখানে আমাদের দেশের নিজস্ব শিল্প উৎপাদন বলতে পাট চামড়া কিংবা স্বল্প পরিসরে কৃষি ব্যতীত তেমন কিছুই অর্জন করা সম্ভব হয়নি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের দেশের রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক ও ওষুধ শিল্পে নতুন নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার যথেষ্ট আকারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

এদিকে বর্তমানে ব্যক্তি পর্যায়ে সুনির্দিষ্ট বিষয়ে কোন ডেডিকেটেড জ্ঞান কিংবা প্রাথমিক ধারণা না থাকলেও (এআই) টুল ব্যবহার করে অনায়াসে কবিতা, উপন্যাস, গল্প কিংবা বিষয় ভিত্তিক বই খুব সহজেই লিখে ফেলা সম্ভব। তার মানে এখন কোন কিছু লিখতে বা আর্টিকেল তৈরি করতে সুনির্দিষ্ট বিষয়ে কিছু না জানলেও চলবে। শুধু অনলাইনে (এআই) টুল ব্যবহারে দক্ষতা অর্জন করলেই সব হয়ে যাবে।

এখানে উদাহরণ হিসেবে প্রকাশযোগ্য যে, গত কয়েক বছরে এআই টুল ব্যবহার করে হাজার হাজার উপন্যাস, গল্প এবং শিক্ষামূলক বিষয়ে বই আকারে লেখা অ্যামাজনের ওয়েবসাইটে প্রকাশের জন্য জমা হতে থাকে। শেষমেশ অ্যামাজন কর্তৃপক্ষ অত্যধিক লেখা জমার চাপে কিনা ব্যক্তির নিজের লেখা না হলে নতুন করে সকল ধরনের বই প্রকাশ, বিজ্ঞাপন কিংবা অর্ডার নেয়া বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়।

তবে যাই হোক না কেন, অতি সম্ভাবনাময় এই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স প্রযুক্তির জয়যাত্রাকে আমাদের অবশ্যই মেনে নিতে হবে। আমাদের দেশের তরুণ সমাজকে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স প্রযুক্তির ইতিবাচক ব্যবহারের খুব দ্রুত সম্পৃক্ত হতে হবে। আর এক্ষেত্রে আমরা না পারলেও আমাদের তরুণ প্রজন্মকে নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন, গবেষণা ও উন্নয়নে সম্পৃক্ত করে নিজে এবং নিজের দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে নিজেদের প্রস্তুত করবে।

বিশ্বের প্রথম সারির বৈশ্বিক প্রযুক্তিগত উন্নয়ন নিয়ে গবেষণারত থিংক ট্যাংকের দেয়া তথ্যমতে, আগামী ২০৩০ সালের পরবর্তী সময়ে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স টেকনোলজির প্রভাবে একাধিক সেবামূলক এবং উৎপাদন খাতে কর্মরত সারা বিশ্বে লক্ষ লক্ষ কর্মী হয়ত কাজ হারাতে পারেন। বিশেষ করে চীন, জাপান, ভারত কিংবা দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশের উৎপাদনশীল শিল্প খাতে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর কল্যাণে শিল্প উৎপাদন প্রায় তিন বৃদ্ধি পেলেও আগামীতে এই সেক্টরে আশঙ্কাজনক হারে কর্মী ছাঁটাই শুরু হয়ে যেতে পারে।

তবে যাই হোক না কেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উপর উচ্চ মাত্রায় দক্ষতা অর্জনকারী কর্মীদের জন্য কিন্তু আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স নিশ্চিতভাবে এক নতুন দুয়ার খুলে দিতে যাচ্ছে। বিশেষ করে আগামী এক দশকে হয়ত এভিয়েশন, অটোমোবাইলস ম্যানুফ্যাকচারিং হাব, চিকিৎসা, ব্যাংকিং এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেতে পারে এ আই প্রযুক্তি সমৃদ্ধ নতুন নতুন রোবোটিক্স এর ব্যবহার। যার নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিতভাবেই চলে যাবে সরাসরি উচ্চ মাত্রায় প্রযুক্তিতে দক্ষ কর্মীদের হাতে।

এখানে উল্লেখযোগ্য যে, উচ্চস্তরের একাধিক গবেষণা এবং ভবিষ্যতে বৈশ্বিক ভার্চুয়াল প্রযুক্তির শিল্পে নিজের প্রাধান্য বজায় রাখতে আমেরিকার টেক জায়ান্ট গুগল এবার আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স প্রযুক্তির এক্সাস্কেল সুপারকম্পিউটিং সিস্টেম তৈরি করছে। যা কিনা প্রচলিত সুপার কম্পিউটার অপেক্ষা হাজার গুন অধিক দ্রুত গতিতে এবং নিখুঁতভাবে ডাটা বিশ্লেষণ, জটিল বৈজ্ঞানিক সমস্যার সমাধান এবং গণনা কার্য সম্পন্ন করতে পারে। এ যেন হচ্ছে এক সাইফাই মুভির প্রযুক্তি লড়াই।

উচ্চ প্রযুক্তি নির্ভর ম্যাসিভ ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে চীন তার নিজস্ব রোবোটিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড এআই টেকনোলজি ব্যাপকভাবে ব্যবহার শুরু করেছে। বিশেষ করে, চীনের হফেই প্রদেশে বিখ্যাত ‘বিওয়াইডি’ এর বৈদ্যুতিক গাড়ি (ইভি) কার ম্যানুফ্যাকচারিং প্লান্টে প্রায় আট শতাধিক এই রোবটিক্স বাহু ইন্সটল করেছে। সেখানে রোবটগুলো একটি গাড়ির চারটি দরজা ইনস্টল করতে সময় নেয় মাত্র ৯৮ সেকেন্ড।

আর এই এআই রোবটগুলোর কাজ এতটাই নিখুঁত যে তাদের ভুলের সীমা মাত্র ০.৫ মিলিমিটার। যা একজন সাধারণ কর্মীর পক্ষে হয়ত কয়েক ঘণ্টায়ও কাজ শেষ করা সম্ভব হবে না। তাছাড়া চীন কয়েক বছর আগে এক উচ্চ প্রযুক্তির (এআই) রোবটিক্স রেফ্রিজারেটর ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্ডাস্ট্রিয়াল হাব গড়ে তুলে সেখানে স্বল্প কিছু দক্ষ কর্মী ব্যবহার করে মাত্র ৬ মাসে প্রায় ১ কোটি ইউনিট বিভিন্ন সিরিজের রেফ্রিজারেটর উৎপাদন করে সারা বিশ্বে রপ্তানি করে শিল্প পণ্য উৎপাদনের এক নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করে।

তবে হতাশার খবর হলো যে, অদূর ভবিষ্যতে উচ্চ প্রযুক্তির রোবট এবং আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) ম্যানুফ্যাকচারিং এবং সেবামূলক সেক্টরে ব্যবহার করে উৎপাদনশীলতা দুই থেকে তিন গুণ বৃদ্ধি পেলেও অদূর ভবিষতে হয়ত আশঙ্কাজনক হারে কমে যেতে পারে কাঙ্ক্ষিত কর্মী নিয়োগ। আর এটাই হচ্ছে কিন্তু চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের এক নতুন বাস্তবতা বা এক কঠিন চ্যালেঞ্জ। যার সাথে আমরা কিন্তু এখন পর্যন্ত সেভাবে সম্পৃক্ত হতে পারিনি। যা ভবিষ্যতে উচ্চ প্রযুক্তি নির্ভর বৈশ্বিক শিল্পায়ন ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নে আমাদের সাবলীল অংশগ্রহণ হয়ত মারাত্বকভাবে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।##

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.