-- বিজ্ঞাপন ---

বিশ্বের প্রথম গ্রিন এনার্জির এয়ারক্রাফট সোলার ইমপালস ২!

সিরাজুর রহমান#

সৌরশক্তি বা গ্রিন এনার্জি চালিত বিশ্বের প্রথম সফল এয়ারক্রাফট হচ্ছে সোলার ইমপালস ২ এয়ারক্রাফট। এটি মূলত একটি যুগান্তকারী সৌরশক্তিচালিত বেসামরিক বিমান। যা কিনা প্রচলিত জ্বালানির পরিবর্তে সম্পূর্ণরূপে পরিবেশ বান্ধব এবং টেকসই সূর্যের শক্তিতে চলে। এটি গত ২০১৫ এবং ২০১৬ সালের দিকে কোনো জ্বালানি বা পরিবেশ দূষণ ছাড়াই বিশ্বজুড়ে উড্ডয়ন করে এক নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে।

এই এয়ারক্রাফট প্রকল্পের মূল লক্ষ্য ছিল বিশ্বকে দেখানো যে, সৌরশক্তির মতো নবায়নযোগ্য উৎসের মাধ্যমে অসম্ভবকে সম্ভব করা যায়। এটি প্রমাণ করেছে যে, কোন রকম জ্বালানি ব্যতীত শুধু সোলার এনার্জি ব্যবহার করে প্রায় ৪৩ হাজার কিলোমিটারেরও অধিক দীর্ঘ দূরত্ব অতিক্রম করা সম্ভব। যা কিনা গ্রিন এনার্জির এভিয়েশন ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্পে এক নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলে দিয়েছে।

মাত্র একজন পাইলট দ্বারা চালিত সোলার ইমপালস ২-এর ডানার বিস্তার হচ্ছে ৭২ মিটার। যা একটি বোয়িং ৭৪৭ এয়ারক্রাফটের চেয়েও কিছুটা বড়। এই বিমানটিকে অত্যন্ত হালকা এবং শক্তিশালী কাঠামো দ্বারা তৈরি করা হয়েছে। ২.৩ টন ওজনের এই বিমানের ডানায় মোট ১৭,২৪৮টি সোলার প্যানেল লাগানো রয়েছে এবং যা দিনের বেলায় সৌর শক্তির সাহায্যে আকাশে উড্ডয়ন করে এবং রাতে ব্যাটারিতে সংরক্ষিত শক্তি দ্বারা চালিত হয়।

এই বিমানের মোট ওজন ২,৩০০ কেজি হলেও এর শুরু ব্যাটারির ওজন হচ্ছে ৬৩৩ কেজি। এর গড় গতি প্রতি ঘণ্টায় ৪৫-৯০ কিলোমিটার (২৮-৫৬ মাইল)। এটি দিনের বেলায় আকাশে সর্বোচ্চ ৮,৫০০ মিটার (২৮,০০০ ফুট) উচ্চতায় ওঠে এবং রাতে ১,৫০০ মিটার (৫,০০০ ফুট)-এ নেমে এসে শক্তি সাশ্রয় করে। তবে বিমানের ককপিটটি মাত্র একক আসনবিশিষ্ট করে ডিজাইন ও তৈরি করা হয়েছে।

সোলার ইমপালস টু এয়ারক্রাফট অত্যন্ত সংকীর্ণ হলেও এতে চাপ ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত প্রযুক্তি ইনস্টল করা হয়েছে। উড্ডয়নকালে বিমানের পাইলট একটানা ২০-২৫ ঘণ্টা পর্যন্ত জেগে থাকেন। এর পাশাপাশি এই বিমানে একটি ছোট্ট আকারের টয়লেটের ব্যবস্থা ছিল একটি বিশেষ সিটে। যেন হলিউড সিনেমার এক কল্পকাহিনির মতো এক আকাশযান হচ্ছে এটি।

সোলার ইমপালস টু এয়ারক্রাফট গত ২০১৫ সালের ৯ মার্চ আবুধাবি থেকে আকাশ পথে যাত্রা শুরু করে ২০১৬ সালের ২৬ জুলাই একই স্থানে শেষ করে। এই যাত্রায় বিমানটি মোট প্রায় ৪৩ হাজার কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে। তাছাড়া গত ২০১৬ সালের জুনে নিউ ইয়র্ক থেকে উড্ডয়ন করে স্পেনে অবতরণ করে প্রথম সোলার এয়ারক্রাফট হিসেবে আটলান্টিক পাড়ি দেওয়ার রেকর্ড গড়ে এটি।

এই বিমানের পাইলট ছিলেন বার্ট্রান্ড পিকার্ড। তিনি হচ্ছেন একজন সুইস মনোবিজ্ঞানী ও অভিযাত্রী, যিনি ১৯৯৯ সালে প্রথম নন-স্টপ বেলুনে বিশ্বভ্রমণ করেছিলেন। তার পাশাপাশি এই বিমানের কো-পাইলট ছিলেন আন্দ্রে বোর্শবার্গ। তিনি হচ্ছেন সুইস প্রকৌশলী ও ফাইটার পাইলট, যিনি এই বিমান ডিজাইন ও তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। তবে এই বিমানে একাকী দীর্ঘ সময় উড্ডয়ন, ঘুমের অভাব, এবং শারীরিক চাপ মোকাবিলা করা পাইলটদের জন্য ছিল এক বিশাল চ্যালেঞ্জ ছিল।

তাছাড়া এই সোলার এয়ারক্রাফটের দীর্ঘতম একক উড্ডয়ন সম্পন্ন করেন কো-পাইলট আন্দ্রে বোর্শবার্গ। তিনি জাপান থেকে হাওয়াই পর্যন্ত ১১৮ ঘণ্টা (৪,০০০ মাইল) নিরবচ্ছিন্ন উড্ডয়ন করে বিমান ইতিহাসে নতুন অধ্যায় যোগ করেন। তবে প্রশান্ত মহাসাগরীয় যাত্রাকালে এই এয়ারক্রাফটের ব্যাটারি অতিরিক্ত গরম হয়ে যাওয়ায় হাওয়াইতে ১০ মাস বিলম্ব হয়।

এটি ব্যবহারের দিক দিয়ে জ্বালানিবিহীন হলেও বাস্তবে বিরূপ আবহাওয়া যেমন মেঘ, বৃষ্টি, এবং অস্থির বাতাসে এটিকে উড্ডয়ন করানো খুবই ঝুঁকিপূর্ণ এবং চ্যালেঞ্জিং একটি কাজ ছিল। তবে এর কিছু প্রতিবন্ধকতা থাকা স্বত্বেও সোলার ইমপালস ২ প্রমাণ করেছে যে, গ্রিন এনার্জির টেকসই প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ এবং পরিবেশ দূষণ মোকাবেলা করা সম্ভব। তাছাড়া এই রোমাঞ্চকর অভিযান এখন শুধু আকাশেই নয়, পৃথিবীর প্রতিটি ক্ষেত্রে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহারে মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছে।##তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া, সান পাওয়ার, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক।

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.