-- বিজ্ঞাপন ---

বাংলাদেশে স্টারলিংক ইন্টারনেটের পরীক্ষামূলক ব্যবহার শুরু নয়ই এপ্রিল

কাজী আবুল মনসুর#
বাংলাদেশে স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা স্টারলিংকের পরীক্ষামূলক ব্যবহার শুরু হতে যাচ্ছে নয়ই এপ্রিল। রোববার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, বিনিয়োগের জন্য যোগাযোগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে নিরবিচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে স্টারলিংকের ইন্টারনেট সেবা পরীক্ষামূলকভাবে চালু হবে।  চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন জানান, সাতই এপ্রিল থেকে ঢাকায় চারদিনের বিনিয়োগ সম্মেলন শুরু হবে। তবে সেই সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে নয়ই এপ্রিল। সেদিনই স্টারলিংকের ব্যবহারও শুরু হবে। আশিক মাহমুদ বলেন, বিদেশিদের কাছে বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিবেশ সরেজমিনে তুলে ধরার মাধ্যমে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানো এই আয়োজনের প্রধানতম উদ্দেশ্য।

কি এই স্টারলিংক (Starlink) ইন্টারনেট কী?

স্টারলিংক হলো স্পেসএক্স (SpaceX)-এর একটি স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট পরিষেবা, যা পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে দ্রুতগতির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সরবরাহের লক্ষ্যে কাজ করে। এটি মূলত হাজার হাজার নিম্ন-কক্ষপথ (Low Earth Orbit – LEO) স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা প্রদান করে, যা প্রচলিত ফাইবার অপটিক বা মোবাইল নেটওয়ার্কের চেয়ে ভিন্ন। স্টারলিংকের মূল বৈশিষ্ট্যসমূহের মধ্যে দেখা যায়, এটি সরাসরি স্যাটেলাইট থেকে ইন্টারনেট – স্টারলিংক ব্যবহারকারীর বাড়িতে একটি বিশেষ ডিস অ্যারে (Starlink Dish) স্থাপন করতে হয়, যা সরাসরি স্টারলিংক স্যাটেলাইটের সাথে সংযুক্ত হয়। উচ্চ গতি ও কম ল্যাটেন্সি – স্টারলিংক প্রায় ৫০-২৫০ Mbps ডাউনলোড স্পিড এবং ২০-৪০ ms ল্যাটেন্সি প্রদান করতে পারে, যা প্রচলিত স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের তুলনায় অনেক ভালো। গ্রামীণ ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে সুবিধা – যেখানে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পৌঁছায় না, সেখানে স্টারলিংক কার্যকরভাবে ইন্টারনেট সরবরাহ করতে পারে। মোবাইল ও মেরিটাইম সংস্করণ – স্টারলিংকের “Starlink Roam” এবং “Starlink Maritime” পরিষেবা রয়েছে, যা চলন্ত যানবাহন, নৌকা ও জাহাজের জন্য ইন্টারনেট সরবরাহ করে।

স্টারলিংক কিভাবে কাজ করে?
স্টারলিংক স্যাটেলাইটগুলো ৫৫০ কিমি উচ্চতায় পৃথিবীর কক্ষপথে ঘুরছে, যা অন্যান্য স্যাটেলাইট ইন্টারনেট (যেমন, Viasat, HughesNet) থেকে অনেক নিচে। ব্যবহারকারীর স্টারলিংক ডিস অ্যান্টেনা সিগন্যাল গ্রহণ করে এবং তা রাউটারের মাধ্যমে ইন্টারনেট সংযোগ তৈরি করে। স্টারলিংকের গ্রাউন্ড স্টেশনগুলো তথ্য বিনিময় করে এবং ইন্টারনেট সংযোগ প্রদান করে। বর্তমানে উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া, জাপানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্টারলিংক পরিষেবা চালু রয়েছে।

বাংলাদেশের জন্য স্টারলিংকের সম্ভাব্য সুবিধা হচ্ছে,দুর্গম অঞ্চলে ইন্টারনেট বিস্তার, যেমন হাওর, পাহাড়ি এলাকা বা চরাঞ্চলের মতো জায়গাগুলোতে ফাইবার অপটিক বা মোবাইল নেটওয়ার্ক সহজে বসানো যায় না, সেখানে স্টারলিংক কার্যকর হবে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে উন্নয়ন, যেমন অনলাইন শিক্ষা ও টেলিমেডিসিন (দূরবর্তী চিকিৎসা) সহজলভ্য হবে। ব্যবসা ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনান মধ্যে রয়েছে,ফ্রিল্যান্সারদের জন্য এটি বিশেষভাবে উপকারী হবে। ই-কমার্স, ডিজিটাল মার্কেটিং, আন্তর্জাতিক ব্যবসায়িক যোগাযোগ বাড়বে। তাছাড়া দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সহায়তা, বন্যা, ঘূর্ণিঝড় বা ভূমিকম্পের পর জরুরি ইন্টারনেট সংযোগ বজায় রাখতে সাহায্য করবে।

বর্তমানে মোবাইল অপারেটর (গ্রামীণফোন, রবি, বাংলালিংক, টেলিটক) ও ব্রডব্যান্ড আইএসপি-র মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করা হয়। স্টারলিংক এসব প্রতিষ্ঠানের বিকল্প হিসেবে কাজ করতে পারে, বিশেষ করে যেখানে অপটিক্যাল ফাইবার বা মোবাইল নেটওয়ার্কের ভালো কাভারেজ নেই। স্টারলিংক স্যাটেলাইট-ভিত্তিক সংযোগ হওয়ায় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল, চর, পাহাড়ি ও সীমান্তবর্তী এলাকায় সহজেই ইন্টারনেট সংযোগ দিতে পারবে। বর্তমানে যেখানে ফাইবার অপটিক সংযোগ পৌঁছানো কঠিন, সেখানে স্টারলিংক কার্যকরী হতে পারে। সাবমেরিন কেবলের ওপর নির্ভরতা কমবে। বাংলাদেশ বর্তমানে SEA-ME-WE 4 & 5 সাবমেরিন কেবল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ব্যান্ডউইথ পায়। স্টারলিংকের মাধ্যমে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট কানেকশনের একটি নতুন উৎস পাবে, যা সাবমেরিন কেবল বিভ্রাটের সময় ব্যাকআপ হিসেবে কাজ করতে পারে।

স্টারলিংক বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট বিপ্লব আনতে পারে, তবে এর উচ্চ খরচ ও সরকারি নীতিমালা নিয়ে এখনো অনিশ্চয়তা রয়েছে। যদি সরকার অনুমোদন দেয় এবং খরচ কিছুটা কমানো হয়, তবে এটি গ্রামীণ জনগোষ্ঠী, ফ্রিল্যান্সার ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বড় ভূমিকা রাখতে পারে বলে বিশেষজ্ঞ মহল মনে করছেন।

আগামী ৭-১০ এপ্রিল “বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট ২০২৫”

আগামী ৭-১০ এপ্রিল রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকায় বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)’র আয়োজনে “বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট ২০২৫” অনুষ্ঠিত হবে। সামিটের মূল লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশের বিনিয়োগ সম্ভাবনা তুলে ধরা, জুলাই বিপ্লব-পরবর্তী অর্থনৈতিক সংস্কার প্রদর্শন করা এবং দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ সংযোগ তৈরি করা।
আজ ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান জনাব আশিক চৌধুরী জানান, ইতোমধ্যেই ৫০টি দেশের ২,৩০০-এর বেশি বিনিয়োগকারী নিবন্ধন করেছেন, যার মধ্যে ৫৫০ জনের বেশি বিদেশি বিনিয়োগকারী রয়েছেন। শীর্ষ নিবন্ধিত দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে চীন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, সিঙ্গাপুর এবং জাপান।
সামিটে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় কর্পোরেট ব্যক্তিত্বরা অংশ নেবেন, যাদের মধ্যে রয়েছেন জারা গ্রুপের সিইও অস্কার গার্সিয়া মেসেইরাস, ডিপি ওয়ার্ল্ডের চেয়ারম্যান সুলতান আহমেদ বিন সুলাইয়েম, ব্রিটিশ ব্যারোনেস রোজি উইন্টারটন, স্যামসাং সি অ্যান্ড টি-র ভাইস প্রেসিডেন্ট কিয়ংসু লি, গিওর্দানো-র সিইও জুনসিওক হান, এক্সেলারেট এনার্জির প্রেসিডেন্ট স্টিভেন কোবোস, এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের উবারের পাবলিক পলিসি প্রধান মাইক অর্গিল এবং মেটার পাবলিক পলিসি ডিরেক্টর সারিম আজিজ।
এছাড়াও, বি ক্যাপিটাল, গবি, কনজাংশন, মারুবেনি এবং জি এফ আর এর মতো ভেঞ্চার ক্যাপিটাল প্রতিষ্ঠানগুলো স্টার্টআপ বিনিয়োগ ও ডিজিটাল অর্থনীতির প্রসারে কাজ করবে।##

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.