--- বিজ্ঞাপন ---

ট্রাম্প ও বাইডেনকে নিয়ে আরব নিউজের জরিপ

কেউই মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকার জন্য ভালো হবেন না

0

আন্তর্জাতিক ডেস্ক ##

আমেরিকার জন্য প্রেসিডেন্ট হিসেবে কে ভালো হবেন, ট্রাম্প নাকি জো বাইডেন। কেউ বলছেন ট্রাম্প, কেউ বলছেন বাইডেন। তবে এর বাইরে বিশ্বের আরব দেশগুলোতে চালানো জরিপে উঠে আসে এ দু’জনের কেউ মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার জন্য ভালো হবে না। ভালো হোক বা না হোক, এ দু’জনের একজনই হবেন প্রেসিডেন্ট। এরই মধ্যে জোবাইডেনের পক্ষে মাঠে নেমেছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ওবামা। অন্যদিকে ট্রাম্পকে সামলাচ্ছেন তার স্ত্রী মেলানিয়া। এত কিছুর পর বিবিসির প্রতিবেদনে এ দু’জনের জনপ্রিয়তা যা বেরিয়ে এলো তা হচ্ছে..

আরব দেশগুলোতে চালানো সাম্প্রতিক জরিপের ফলাফলে বেরিয়ে এসেছে, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসাবে ডোনাল্ড ট্রাম্প বা জো বাইডেন – কেউই মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকার জন্য ভালো হবেন না। জরিপ গবেষণা সংস্থা ইউগভ এবং সৌদি মালিকানাধীন সংবাদপত্র আরব নিউজের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত জরিপে অংশগ্রহণকারীদের প্রায় অর্ধেক এই মত ব্যক্ত করেছেন। বাকি অর্ধেকের মধ্যে ৪০% উত্তরদাতা বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার জন্য বাইডেন বেশি উপযুক্ত এবং ১২% প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ভালো মনে করছেন। অনলাইনে গত মাসে মধ্যপ্রাচ্যের ১৮টি দেশে এই জরিপ চালানো হয়। জরিপের শিরোনাম ছিল – আরবরা কী চাইছেন? জরিপে অংশগ্রহণকারীদের কাছে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বা তার প্রতিপক্ষ ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন কেউই দেশটির প্রেসিডেন্ট পদে জনপ্রিয় বলে বিবেচিত হননি। তবে তারা সামান্য এগিয়ে রেখেছেন বাইডেনকে।
মূলত, ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইসরাইলে মার্কিন দূতাবাস জেরুসালেমে সরিয়ে নেবার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, সেটি পছন্দ করেননি জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৮৯%। তবে ইরাক এবং ইয়েমেনের মানুষ পছন্দ করেছেন ট্রাম্পকে। তারা মনে করছেন, ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয়াসহ অন্যান্য কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছেন ট্রাম্প, যেটা তারা সমর্থন করেছেন। ইরাকে অংশ গ্রহণকারীদের প্রায় ৫৭% বলেছেন, এ বছরের গোড়ার দিকে ইরানের রেভলিউশনারি গার্ডের নেতা জেনারেল কাশেম সোলেইমানিকে হত্যা করার আমেরিকান সিদ্ধান্তকে তারা অনুমোদন করেন। অন্যদিকে, সিরিয়ার ঠিক একই সংখ্যক মানুষ অর্থাৎ ৫৭% বলেছেন, তারা এই সিদ্ধান্তের বিরোধী।
নতুন দৃষ্টিভঙ্গি বাইডেন ২০০৯ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট ওবামার শাসনামলে হোয়াইট হাউসে আট বছর কাজ করেছেন। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের জিজ্ঞেস করা হয়েছিল ওই প্রশাসন সম্পর্কে তাদের কী মতামত। উত্তরদাতারা বাইডেন সম্পর্কেও তেমন উৎসাহ দেখাননি। এদের অধিকাংশই বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ওবামা তার সময়ে মধ্যপ্রাচ্যের দিকে নজর দেননি এবং তাদের জন্য তিনি তেমন কিছুই করেননি। তারা বলেছেন, বাইডেন যদি নির্বাচিত হন, তারা আশা করবেন তিনি ওবামার নীতি থেকে দূরে থাকবেন। তিনি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করবেন। যদিও এই জরিপে হস্তক্ষেপের কোনো ঘটনাই ঘটেনি, তবু এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, যাদের সাথে সহযোগিতায় এই জরিপ চালানো হয়েছে তারা হলো সৌদি আরবের রিয়াদভিত্তিক সংবাদ প্রতিষ্ঠান আরব নিউজ এবং এই সংবাদমাধ্যম, অনুমোদিত সরকারি সম্পাদকীয় নীতিমালা মেনে কাজ করে থাকে। সৌদি আরব ওই অঞ্চলে ইরানের প্রতিদ্বন্দ্বী এবং ইরানের সাথে ২০১৫ সালে পারমাণবিক চুক্তি সম্পাদনের জন্য সৌদি নেতৃত্ব কখনো প্রেসিডেন্ট ওবামাকে ক্ষমা করেনি। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পরে এই চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসেন, এবং আরো কঠোর পারমাণবিক কর্মসূচি পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা জারি করেন। একই সাথে ইরানের উপর পারমাণবিক এবং অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণাও দেন ট্রাম্প। ওবামার সময় করা চুক্তির সমালোচকদের মধ্যে ছিলেন সৌদি নেতারা। তাদের যুক্তি ছিল ইরানের ক্ষমতাশালী নিরাপত্তা সংস্থাগুলো ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি গড়ে তোলার জন্য, উপসগরীয় এলাকায় গোপন ও বিশেষ অভিযান চালানোর জন্য এবং মধ্যপ্রাচ্যে একটা আগ্রাসী নীতি চালু রাখার পেছনে প্রচুর অর্থ ব্যয় করছে, যে অর্থ দেশটির ব্যয় করা উচিত মানুষের জীবন মান উন্নয়নের জন্য। ইসরাইলের ব্যাপারে আমেরিকান নীতির প্রতি ফিলিস্তিনের মানুষের যে ঐতিহাসিক অনাস্থা রয়েছে সেটা বিবেচনায় নিলে ফিলিস্তিনী যারা এই জরিপে অংশ নিয়েছেন তাদের উত্তর কিছুটা অবাক হবার মতোই। জরিপের ফিলিস্তিনী উত্তরদাতারা বলেছেন, একটা শান্তি চুক্তিতে পৌঁছানোর ব্যাপারে তারা আমেরিকার আরো বেশি ভূমিকা নেবার পক্ষে মতামত দিয়েছেন। এই জরিপ চালানো হয়েছে বহু মানুষকে বিস্মিত করে দিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের চুক্তি স্বাক্ষরের পরপরই। অগ্রাধিকার জরিপে প্রশ্ন ছিল আমেরিকার অভিবাসন নীতি নিয়ে। যারা জরিপে অংশ নিয়েছেন তাদের প্রায় ৭৫% আশা করছেন হোয়াইট হাউসে প্রশাসনের দায়িত্বে যিনি আসবেন তিনি আরবদের আমেরিকায় যাওয়া আরো সহজ করে দেবেন। সাম্প্রতিক রিপোর্টে দেখা গেছে, আরব তরুণদের তুলনামূলকভাবে বড় একটা অংশ মধ্যপ্রাচ্য থেকে বাইরে চলে যেতে আগ্রহী। বিশেষ করে লেবানন থেকে, যেখানে দুর্নীতির কারণে এবং অর্থনীতি ভেঙে পড়ায় বহু মানুষ তাদের ভবিষ্যত নিয়ে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। ইসলামী কট্টরপন্থা দমন আমেরিকার জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ এ প্রশ্নের উত্তরে মাত্র ২৪% বলেছেন, এটাকে অগ্রাধিকার দেয়া প্রয়োজন। ৪৪% মনে করেন আরব-ইসরাইলী দ্বন্দ্বের সমাধানকে আমেরিকার আরো বেশি অগ্রাধিকার দেয়া উচিত আর ৩৭%-এর মত হলো আমেরিকার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এখন করোনাভাইরাসের মোকাবেলা করা। জরিপে আরো যেসব বিষয় নিয়ে মানুষ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো ওই অঞ্চলে সুশাসনের অভাব এবং অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা। ২০১১ সালে এসব ক্ষেত্রে জনঅসন্তোষের জেরেই জন্ম নিয়েছিল আরব বসন্ত নামে পরিচিত প্রতিবাদ আন্দোলন। ####২৯.১০.২০
আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.