--- বিজ্ঞাপন ---

ফিলিপাইনে আগ্নেয়গিরির লাভা উদগীরণ শুরু, বিপজ্জনক অগ্ন্যুৎপাতের আশঙ্কা

0

ফিলিপাইনের  তাল আগ্নেয়গিরিতে  লাভা উদগীরণ শুরুর পর  ‘বিপজ্জনক অগ্নুৎপাতের’ আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কর্তৃপক্ষ হুঁশিয়ারি দিয়েছে, ‘কয়েক ঘণ্টা বা কয়েক দিনের’ মধ্যেই ‘বিপজ্জনক অগ্ন্যুৎপাতের’ আশঙ্কা রয়েছে।

স্থানীয় সময় সোমবার সকালের দিকে তাল আগ্নেয়গিরি থেকে দুর্বল লাভা উদগীরণ শুরু হয়-আগ্নেয়গিরিটি রাজধানী ম্যানিলা থেকে ৭০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। বিশাল মাত্রায় ছাই উদগীরণের কারণে স্থানীয় ৮ হাজার বাসিন্দাকে সরিয়ে নেয়ার পর এই লাভা উদগীরণ শুরু হলো। রয়টার, বিবিসি এ খবর দিয়েছে।

লেক তালের পাশেই অবস্থিত তাল আগ্নেয়গিরি থেকে ছাই উদগীরণ হচ্ছে

তাল ফিলিপাইনের দ্বিতীয় সক্রিয় আগ্নেয়গিরি। একটি লেকের মাঝখানে দ্বীপের মতো জায়গায় অবস্থিত আগ্নেয়গিরিটি বিশ্বের সবচেয়ে ছোট আগ্নেয়গিরি এবং গত সাড়ে চারশ বছরে এটি ৩৪ বার অগ্ন্যুৎপাত করেছে। “তাল আগ্নেয়গিরির মধ্যে তীব্র উত্তেজনা তৈরি হয়েছে… যা চৌম্বকীয় উদগীরণ ঘটাতে পারে রাত ২:৪৯ থেকে ভোর ৪:২৮-এর মধ্যে…এটি মূলত দুর্বল লাভা যার সাথে বজ্রপাতও হতে পারে,” এক  বিবৃতিতে একথা  জানিয়েছে ফিলিপিন্স  ইন্সটিটিউট অব  ভলকানোলজি এন্ড সিসমোলজি (ফিভোলক্স)।

কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক রেনাটা সোলিডাম বলেন, ভয়ংকর বিস্ফোরণের চিহ্ন যেমন “ছাই, পাথর, গ্যাস মিশ্রিত লাভা যা আনুভূমিকভাবে ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার বেগে” ধাবিত হয় তা এখনো দেখা যায়নি, সিএনএন ফিলিপিন্সকে তিনি একথা বলেন।

ফিভোলক্স সতর্ক সংকেতের মাত্রা তিন থেকে বাড়িয়ে চার করা হয়েছে। এ ধরণের ঘটনায় সর্বোচ্চ সতর্ক সংকেত দেয়া হয় পাঁচ। কর্তৃপক্ষ আরো সতর্ক করে বলেছে যে, অগ্ন্যুৎপাতের কারণে সুনামির আশঙ্কা রয়েছে, যা উদগীরণের পর লাভা পানিতে পড়ার কারণে পানি স্থলভাগে চলে আসতে পারে এবং ঢেউ তৈরি করতে পারে।

তাল: ‘খুব বিপদজনক আগ্নেয়গিরি’। প্রাগৈতিহাসিক উদগীরণ থেকে সৃষ্ট ২৩০ বর্গকিলোমিটার বিস্তৃত লেক তালে অবস্থিত একটি সক্রিয় আগ্নেয়গিরি এটি।তাল একটি ‘জটিল আগ্নেয়গিরি’, এটির নির্দিষ্ট কোন জ্বালামুখ নেই, বরং উদগীরণের বেশ কয়েকটি পয়েন্ট রয়েছে যা সময়ের সাথে সাথে বদলায়। ফিভোলক্সের প্রধান তালকে ‘একটি আগ্নেয়গিরির মধ্যে আরেকটি আগ্নেয়গিরি’ বলে উল্লেখ করে বলেন, ‘এটি খুবই বিপদজনক’।গত ৫০০ বছরে বিভিন্নভাবে তাল অন্তত ৩০ বার অগ্ন্যুৎপাত করেছে – সর্বশেষ ছিল ১৯৭৭ সালে। ১৯১১ সালের অগ্ন্যুৎপাতে ১৫০০ মানুষ মারা গিয়েছিল। ১৯৭৪ সালের অগ্ন্যুৎপাত কয়েক মাস স্থায়ী হয়েছিল।

‘ছাইয়ে ঢাকা’

রবিবার, আগ্নেয়গিরিটি থেকে প্রচণ্ড শব্দে প্রচুর ছাই নির্গত হয় এবং সাথে ভূমিকম্পের মতো কাঁপুনিও ছিল। ফিভোলক্স জানায়, তাল এলাকায় মোট ৭২টি ভূমিকম্প হয়েছে, এরমধ্যে ৩২টি ভূমিকম্প দ্বিতীয় ক্যাটাগরির এবং তীব্রতার স্কেলে বেশ উচুঁতেই ছিল।

জাতিসংঘের মানবিক সমন্বয় বিষয়ক বিভাগের-ওসিএইচএ কর্মকর্তারা জানান, তাল আগ্নেয়গিরির বিপজ্জনক ১৪ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে সাড়ে চার লাখ বাসিন্দা রয়েছে। স্থানীয় ঘর-বাড়ি, গাড়ি, ভবন এবং রাস্তা-ঘাট ছাইয়ের নিচে ঢাকা পড়েছে। আগ্নেয়গিরির ছাইয়ের ঢাকা পড়েছে পাখিও। কেন বসবাস জীবন্ত আগ্নেয়গিরির ঠিক নিচেই ?

দাবানলের ধ্বংসস্তুপের মধ্যে জন্ম নিচ্ছে নতুন প্রাণ

আশেপাশের অনেক এলাকার বাসিন্দাদের ছাই পড়ার কারণে মাস্ক ব্যবহারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মেট্রো ম্যানিলা এলাকার এক বাসিন্দা জানান, দোকানগুলোতে মাস্কের মজুদ শেষ হয়ে গেছে।

“আমি গাড়িতে গিয়ে দেখলাম, সেটি পুরোপুরি ছাইয়ে ঢেকে আছে। আমি দ্রুত একটি ওষুধের দোকানে গিয়ে মাস্ক কেনার চেষ্টা করলাম, কিন্তু তাদের কাছে মাস্ক শেষ হয়ে গিয়েছিল,” পারানাক এলাকার বাসিন্দা অ্যাঞ্জেল বাতিস্তা রয়টার্সকে একথা বলেন।

‘ধূসর এবং প্রাণহীন’

ফিলিপাইনের  তাগায়তায় এলাকায় থাকা বিবিসির সংবাদদাতা হাওয়ার্ড জনসন বলেন, “আজ সকালে তাল আগ্নেয়গিরির দিকে যাওয়ার সময় আমরা দেখলাম যে, স্থানীয় বাসিন্দারা বেলচা দিয়ে ভেজা ছাই রাস্তা থেকে সরিয়ে নিচ্ছে। আনারসের ক্ষেত যা সাধারণত সুন্দর এবং মনোরম হয়, সেগুলো ধূসর এবং প্রাণহীন হয়ে পড়েছে।”

তাল আগ্নেয়গিরির ছাইয়ে আক্রান্ত হয়েছে স্থানীয় হাজার হাজার বাসিন্দা

দূরে তাল আগ্নেয়গিরি থেকে ছাই এবং ধোঁয়া আকাশে কয়েক কিলোমিটার জুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে। এর কারণে মেঘও কালো হয়ে পড়েছে। আগ্নেয়গিরির আশেপাশে ১৪ কিলোমিটার এলাকায় যাতায়াত বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ। তবে ওই এলাকা থেকে বেরিয়ে আসা গাড়ি এবং ট্রাকের সারি ছিল রাস্তায়।

 

“একটি পিক-আপ ট্রাকের পেছনে একটি পরিবারকে দেখলাম যারা তাদের মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে আশ্রয় নিয়েছে।”তারা ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলার দিকে যাচ্ছে, যেখানে স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে অনেকে।

আগ্নেয়গিরির ছাইয়ের কারণে ম্যানিলার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রবিবার সব ধরণের ফ্লাইট বন্ধ ছিল। ফিভোলক্স হুশিয়ার করেছে যে, “বাতাসে থাকা ছাই এবং ব্যালিস্টিক উপাদান বিমানের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। পরে সোমবার অবশ্য বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দিয়েছে যে, স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় বিমান উড্ডয়ন এবং ১২টায় বিমান অবতরণ কার্যক্রম “আংশিকভাবে” শুরু করেছিল তারা।সোমবার সব ধরণের ট্রেডিং বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে ফিলিপাইন স্টক এক্সচেঞ্জ।

প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তের দপ্তর, ম্যানিলায় সব ধরণের সরকারি কার্যক্রম এবং সব ধরণের স্কুল বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে।ভূমিকম্প এবং আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত ফিলিপাইনে খুব অস্বাভাবিক নয়। কারণ দেশটি বিশ্বের সবচেয়ে সক্রিয় ফল্ট লাইন-রিং অব ফায়ার- বা কম্পন প্রবণ এলাকায় অবস্থিত।

## শহীদ, ১৩.০১.২০২০ইং।

 

 

 

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.