--- বিজ্ঞাপন ---

মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা ‘সিআইএ’ প্রভাবশালী যে কারনে

0

কাজী আবুল মনসুর::ইরানের গণ মাধ্যম সূত্র জানায়, সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি (সিআইএ)-এর হয়ে কাজ করায় আলি নাফারিয়েহ ও মোহাম্মাদালি বাদাপৌরকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আর ব্রিটিশ গোয়েন্দাদের সহায়তা করায় মোহাম্মদ আমিন নাসাবকে ১০ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও একজনকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছে। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির নাম প্রকাশ করতে অস্বীকৃতি জানান ইরানী মুখপাত্র। গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, এখনও আপিলের সুযোগ পাবেন ওই ব্যক্তি। এরা ইরানে সিআইএ’র হয়ে কাজ করছিল। চলতি বছরের শুরুতে সিআইএ-এর হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ১৭ জনকে আটকের কথা জানায় ইরানের গোয়েন্দা মন্ত্রণালয়। তারা ইরানের পরমাণু ও সামরিক স্থাপনা এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের তথ্য সংগ্রহ করছিলেন বলে অভিযোগ করে ইরান। এই অভিযোগকে সম্পূর্ণ ভুয়া বলে উড়িয়ে দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। দণ্ডঘোষিতদের মধ্যে তাদের কেউ রয়েছেন কিনা তা স্পষ্ট নয়। এটি সাম্প্রতিক ইরানের ঘটনা। তবে সিআইএ ছড়িয়ে আছে সারা বিশ্বে।

এমনও রিপোর্ট হয়েছে যে, সিআইএ কাক পাঠাতো জানালায় গোপন মাইক ফেলে আসার জন্য। তাকে প্রশিক্ষণ দেয়া হতো ৪০ গ্রাম পর্যন্ত ওজনের কোন বস্তু জানালার ধারে ফেলে আসা বা নিয়ে আসার জন্য। যেসব ভবনে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকতো সেখানে তাদের পাঠানো হতো। লেজার তাক করে তাকে কোথায় বস্তুটি ফেলতে হবে সেই টার্গেট বুঝিয়ে দেয়া হতো। আর ছোট বাতির মাধ্যমে সংকেত দিয়ে তাকে ফিরে আসতে সাহায্য করা হতো। ডলফিন প্রশিক্ষণ দেয়া হতো পানির নিচের মিশনে বিশেষ করে বন্দরের নিচে ঢোকার জন্য। ডলফিন দিয়ে হামলার চেষ্টাও হয়েছে।এমনকি পরিযায়ী পাখি দিয়ে এমন গুপ্তচরবৃত্তি করানো যায় কিনা সেই চিন্তাও ছিল। কুকুরের মস্তিষ্কে বৈদ্যুতিক তরঙ্গ দিয়ে দুর থেকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় কিনা সেই গবেষণাও হয়েছে। ষাটের দশকের শেষের দিকে সিআইএ এসব গোয়েন্দা মিশনে প্রাণী পাঠানোর জন্য ৬ লাখ ডলার পর্যন্ত খরচ করতো। সবচেয়ে সফল গুপ্তচর কবুতর । তবে কবুতর ছিল সবচাইতে কার্যকর কারণ তাদের খুব দারুণ একটা ক্ষমতা হল শত মাইল দুরের অপরিচিত কোন যায়গায় ফেলে আসার পরও তারা ঠিকই পথ খুঁজে বাড়ি ফিরে আসে। প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের সময় গোপন তথ্য সংগ্রহে কবুতর ব্যবহার করা হতো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থার গোপন কবুতর গোয়েন্দা বাহিনী ছিল। যাকে কিনা বলা হতো “সিক্রেট পিজন সার্ভিস” ।

কিউবার সাথে যুক্তরাষ্ট্রের দুষমনি নতুন কিছু নয়। বিশেষ করে আমেরিকান (সেন্ট্রাল ইনটালিজেন্স এজেন্সি) সিআইএ অনেকবার কিউবার নেতা ফিদেল কাস্ট্রোকে হত্যার চেষ্টা করেছিল। কোন এক অজানা কারনে কিউবাকে ভয় পেতো আমেরিকা। কারন পূজিবাদের মধ্যে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি মাথা তুলে দাড়ালে আমেরিকার ক্ষতি সবচেয়ে বেশি। তাই আমেরিকার সিআইএ’কে প্রস্তত করা হয়েছিল আমেরিকা বিরোধী সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোর নেতাদের কৌশলে হত্যা করা।

‘সাভেজ সতর্ক হও। ওরা প্রযুক্তির উন্নতি ঘটাচ্ছে। তুমি খুবই অসতর্ক। বিশেষ করে খাবারের ব্যাপারে সতর্ক থেকো। কী খাচ্ছো, কোন ধরনের খাবার তা জানবার চেষ্টা করো। একটা ছোট্ট নিডল দিয়ে কোন কিছু মিশিয়ে দেবে, তুমি বুঝতেই পারবে না’…এ কথাগুলো বিপ্লবী ফিদেল কাস্ট্রো প্রায়শ বলতেন ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট সমাজতন্ত্রী হুগো সেভেজকে। নিজের ছেলের মতো পছন্দ করতেন তিনি সাভেজকে। কাস্ট্রোর ইঙ্গিত ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র প্রতি। ফিদেলের এই আশঙ্কাকে সত্যে পরিণত করলো বৃটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানের একটি নিবন্ধ। সাভেজের মৃত্যুর পর প্রকাশিত নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে,‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি রাসায়নিক বিষ প্রয়োগ করে হত্যা করা হয়েছে ৫৮ বছর বয়স্ক ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্টকে’।

গার্ডিয়ানে প্রকাশিত নিবন্ধে সাংবাদিক রবি ক্যারেল বেশ কিছু যুক্তিও তুলে ধরেন। তিনি উল্লেখ করেন, আর্জেন্টিনার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট নেস্টর কিরচনার আক্রান্ত হন ‘কোলন ক্যান্সারে’, ব্রাজিলের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ইগনাশিও লুলা ডি সিলভা আক্রান্ত হন ‘থ্রোট ক্যান্সারে’। এরা সবাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিরোধী বামপন্থী নেতা। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা ‘সিআইএ’ তাদের হত্যার প্লট তৈরি করেছেন এমন যুক্তি সাংবাদিক ক্যারেলের। হুগো সাভেজকেও সিআইএ’র তৈরি করা প্লটে বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হয়েছে এমন দাবি ক্যারেল তুলে ধরেন।‘সিআইএ’। পুরো নাম সেন্ট্রাল ইনটালিজেন্স এজেন্সি। কোথাকার ইনটালিজেন্স বা কিসের ইনটালিজেন্স এখন আর বুঝিয়ে বলতে হয় না। কোন দেশের তাও না। কারন নামটি এতই বহুল পরিচিত যে বিশ্বের কোন একটি দেশের ক্ষুদ্র একটি রাজনৈতিক দুর্ঘটনা হলেও মানুষ অনুমান করে নেয়, এটা সিআইএ’র কাজ। হয়তো আদৌ সিআইএ সেখানে জড়িত ছিল কিনা, তবু দোষটা সিআইএ’র উপর বর্তায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ এখন এতই প্রভাবশালি যা বলাবাহুল্যে। কি নেই সিআইএ’র। যাকে যেভাবে যা দিয়ে কাজ করনো যায় সিআইএ সেভাবে পদক্ষেপ নেই।নারী, মদ, অর্থ, অস্ত্র, ক্ষমতা সবকিছু রয়েছে সিআইএ’র কাছে। আর এসব অস্ত্র দিয়ে সিআইএ সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অশান্তি জিইয়ে রাখে। মানুষে মানুষে ভুল বুঝাবুঝির ফলে গড়ে উঠেছে শত্রুতা। সেই শত্রুতাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য সিআইএর সৃষ্টি। সিআইএ শুধু বাচিঁয়েই রাখছে না নতুন নতুন শত্রুতাও সৃষ্টি করছে। সিআইএর প্রধান কাজ ছিল দেশের অভ্যন্তরীন এবং বৈদেশিক রাষ্ট্রসমুহের বিভিন্ন রাজনৈতিক ঘটনাবলী সরকারকে জানানো। কিন্ত কালক্রমে সিআইএ ইনটালিজেন্স, কাউন্টার ইনটালিজেন্স এমনকি সরকারী ইলেকশনের ব্যাপারেও নাক গলাতে শুরু করে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বহুল আলোচিত ওয়াটারগেট কেলেংকারীর জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সন শেষ পর্যন্ত ইমপিচমেন্টের হাত থেকে বাচাঁর জন্য পদত্যাগ করেন। নিক্সন প্রশাসন থেকে সারা বিশ্বে সিআইএর নাম ছড়িয়ে পড়ে। কারণ নিক্সন প্রশাসনই প্রথম সিআইএকে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করে। নিক্সনের পরে আসে হেনরি কিসিঞ্জারের নাম। ক্রমান্বয়ে সিআইএ স্পাইং কাউন্টার ছাড়াও নিজ দেশের স্বার্থে সরকারের জনমত গঠন, অপপ্রচার, গুজব সৃষ্টি করা, মানসিক যুদ্ধ তৈরি করা, ঠান্ডা লড়াই সৃষ্টি করা, গেরিলাদের অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করা, ব্যক্তি মালিকানাধীন ব্যবসায় মার্কিন ব্যবসায়ীদের প্রভুত্ব বজায় রাখার জন্য সিআইএ পরিচালিত ছদ্ম ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা ইত্যাদি কাজ করে থাকে।

এছাড়া বিভিন্ন দেশে নিজস্ব এজেন্ট ও ইনফরমার নিয়োগ করা, ভাড়াটে সৈন্যদের অর্থসাহায্য দেয়া, ঘুষ ও মোটা টাকার বিনিময়ে নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধি করা, বিদেশী কুটনীতিকদের বিভিন্ন দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তাদের ইচ্ছে মতোন ব্যবহার করাও সিআইএর কাজ। সিআইএকে এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে তাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে মার্কিন স্বার্থ রক্ষা। মার্কিন সরকার যখনই কোন রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে চায় বা কোন রাষ্ট্রের রাজনৈতিক ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করতে চায় তখন সিআইএকে ব্যবহার করে।

এই সিআইএ’র অন্যতম নীতি হলো ‘মিথ্যা বলা’। কোন কিছু অস্বীকার করা। সিআইএ’র যে ডিরেক্টর তা নামে থাকলেও প্রকৃত সর্বময় কর্তা হলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নিজেই। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো, সিআইএ’র কাজ নিয়ে প্রেসিডেন্ট নিজেও মিথ্যা বলেন। ১৯৫৮ সালে সিআইএ ইন্দোনেশিয়াতে ব্যর্থ অভ্যুত্থান করেছিল যা বেমালুম অস্বীকার করা হয়, ১৯৬১ সালে কেনেডি প্রশাসন কিউবা আক্রমণের প্রস্ততি নিয়েছিল তাও অস্বীকার করা হয়। এভাবে সিআইএ তার ছড়িয়ে থাকা নেটওয়ার্ক নিয়ে ব্যস্ত দিন পার করে। সবগুলোতে যে কৃতকার্য হয় তা নয়। রাশিয়া যখন একিভুত ছিল তখন সিআইএর সাথে রাশিয়ার কেজিবি বা চিনের চাইনিজ সিক্রেট সার্ভিসের তুলনা হতো। কিন্ত পরবর্তিতে সিআইএ যেভাবে দাপটের সাথে সারা বিশ্বে তাদের প্রভাব বিস্তার করে রাখে তা অন্য দুটি সংস্থার পক্ষে সম্ভব হয়নি। সিআইএ যে এ দুটি দেশের উপরও নজরদারি করে নি তা নয়। কিন্ত সিআইএ অতি ধুর্ত। ১৯৫২-৬৪ সাল পর্যন্ত কেজিবি রাশিয়ায় অবস্থানরত প্রতিটি আমেরিকানের কথাবার্তা টেপ করতো এবং তার থেকে খবরাখবর সংগ্রহ করতো। সিআইএ এসব জেনেও না জানার ভান করে।

সিআইএ খোদ মস্কোতে বসেই উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন যন্ত্রের সাহায্যে রাশিয়ান নেতৃবৃন্দের কথোপকথন সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়। তবে কম্যুনিষ্ট চীনের ব্যাপারে সিআইএ অদ্যাবধি তেমন সুবিধা করতে পারেনি। ১৯৫০ সালে চীনের বিপ্লবের গোড়ার দিকে সিআইএ দুজন এজেন্টকে চীনে পাঠায়। এদের নাম জন দাউনেভ এবং রিচার্ড কেকটু। এজেন্ট দুজনের কাজ ছিল মাও সরকারের বিরুদ্ধে গেরিলা বাহিনী গড়ে তোলা। কিন্ত তারা চীনের কাছে ধরা পড়ে যায়।

সিআইএর কান্ড কারখানার কথা ফিলিপাইনের কাছে আজো রেকর্ড হয়ে আছে। ফিলিপাইনের দক্ষিণ অঞ্চলে মুসলিম বিদ্রোহীরা দীর্ঘদিন ধরে সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করে আসছিল। সরকার তেমন সুবিধা করতে না পারার কারনে সিআইএ’র সাহায্য চাওয়া হয়। সিআইএ সোজাসুজি কিছু করতে না পেরে মানসিক বিভ্রা্ন্তির সৃষ্টির চেষ্টা চালায়। ফিলিপাইনের বিদ্রোহী অধ্যুষিত অঞ্চলটার আদি ভৌতিক ‘ভ্যাম্পায়ার’ সর্ম্পকে কুসংস্কার ছিল। সিআইএ এ কুসংস্কারকে কাজে লাগায়। এ্যামবুস করে কোন বিদ্রোহীকে ধরে ঘাড়ের কাছে দুটো ছিদ্র তৈরি করতো তারা। ছিদ্র করে রক্তপাতের ফলে বিদ্রোহী মারা যেতো। তখন তার লাশটা অন্যসব বিদ্রোহীদের দেখানোর বন্দোবস্ত করা হত।ঘাড়ের কাছে দুটো ছিদ্র থেকে সকলের মনে ধারণা হতো যে এটা ভ্যাম্পায়ারের দাঁতের সাহায্যে হয়েছে। এভাবে সিআইএ তাদের প্রভাব বিস্তার করে রাখে বিভিন্ন দেশে। এ প্রভাবে ধারাবাহিকতায় মুসলিম প্রধান দেশগুলোতে সিআইএ’র নজর পড়ে। গত এক যুগ ধরে চলছে মুসলিম দেশগুলোতে ভাঙ্গাগড়ার খেলা। একের পর এক মুসলিম সাম্রাজ্য ধসে পড়ছে। পেছনে সক্রিয় সিআইএ। আগেই বলেছি, ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট হুগো সাভেজকে সিআইএ বিষপ্রয়োগে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ উঠার পর মাদুরোর বিরুদ্ধেও সিআইএ থেমে নেই। সাভেজের মৃত্যুর পর তারই অনুসারী মাদুরো ভেনেজুয়েলার ক্ষমতায় আসেন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শত চেষ্টা করেও সমাজতন্ত্রের পতন ঠেকাতে পারে নি। ক্ষমতায় বসার আগে মাদুরো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দিকে আঙ্গুল তুলে অভিযোগ করেন, ‘তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এর জন্য এলসালভেদর থেকে গুন্ডা ভাড়া করা হয়েছে। নির্বাচন বানচাল করতে সিআইএ কে তার পেছনে সক্রিয় করা হয়েছে। দু’মার্কিন কর্মকর্তা রজার নরিয়েগো ও অট্টো রীচ এর নাম উল্লেখ করে মাদুরো উল্লেখ করেন এলসালভেদরের দক্ষিণ পন্থীদের নিয়ে ভেনেজুয়েলায় এ চক্রান্ত করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র’। মাদুরোর যখন এসব কথা বলছিল তখন আগুনে ঘি ঢালার মতো মার্কিন দৈনিক ‘এল নুয়েভো হেরাল্ড’ চাঞ্চল্যকর একটি তথ্য প্রকাশ করে।

দৈনিকটি উল্লেখ করে ‘১৯৫৪ সালে গুয়েতেমালার রাষ্ট্রপ্রধান জ্যাকোবো আরবেনেজকে চক্রান্ত করে উচ্ছেদ করে সিআইএ। ৬০ বছর আগে গুয়েতেমালার উত্তর পূর্বাঞ্চলের ওপালকা বিমান বন্দরের কাছে ঘাটি গেড়ে সিআইএ এ চক্রান্ত করে। ১৯৫৩ সাল থেকে ধারাবাহিক চক্রান্তে ফলে উচ্ছেদ হয় আরবেনেজ’। মাদুরোর এ বক্তব্যের পর এলসালভেদরের প্রেসিডেন্ট মরিশিউ ফিউনেস তদন্তের নির্দেশ দেন। মাদুরো এলসালভেদরে ২০০০ সালে পানামা সামিটে উগ্রপন্থী গোষ্ঠী লুই পোসাদা ক্যারিলিসের নেতৃত্বে কিউবার অবিসংবাদিত নেতা ফিদেল কাস্ট্রোকে হত্যার ষড়যন্ত্রের কথাও স্মরণ করিয়ে দেন।

তিনি প্রেসিডেন্ট মরিশিউ’র কাছে প্রশ্ন রাখেন, কোথা থেকে এসেছে পোসাদা? ফিউনেস তাকে জানায়, এলসালভেদরে ‘এরিনা পার্টি’ ক্ষমতায় থাকার সময় পোসাদাকে পরিচয় পত্র ও পাসর্পোট দেয়া হয়েছিল। ভেনেজুয়েলায় নির্বাচনের পূর্বে সরকারের পক্ষ থেকে ফাঁস করে দেয়া এক রেকর্ড কথোপকথনে দেখা যায়, এলসালভেদরের এরিনা পার্টিও প্রতিষ্ঠাতা ডি আবুইসন কুখ্যাত লুই পোসাদার ডান হাত ডেভিড কোচের সঙ্গে ভেনেজুয়েলার অস্থিরতা তৈরির বিষয়ে কথা বলছেন। ডেভিড কোচ হচ্ছেন আলসালভেদরের সশস্ত্র বাহিনীর প্রাক্তন কর্নেল। আবুইসন ডেভিডের নেতৃত্বেই একটি সশস্ত্র বাহিনী ভেনেজুয়েলায় পাঠান অভ্যন্তরীন অস্থিরতা তৈরির জন্য।

সাম্প্রতিক সময়ে সিআইএর বিরুদ্ধে অভিযোগের চাঞ্চল্যকর যে তীরটি এসেছে তা হলো রাসায়নিক বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে ধীরে ধীরে মার্কিন বিরোধী রাষ্ট্রনায়কদের হত্যা। মার্কিন সাংবাদিক রবি ক্যারেল তার নিবন্ধে তুলে ধরেছেন আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের প্রেসিডেন্টের কথা। এখন কথা উঠেছে, প্যারাগুয়ার প্রেসিডেন্ট ফার্নাদো লুগোকে গত দু’বছর আগে ক্ষমতা থেকে উচ্ছেদ করে সিআইএ। তারপরই তার শরীরে বাসা বাধে মরণব্যাধি ক্যান্সার ‘লিমফোমিয়া’। আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিনা ফার্নাডেজ ‘থাইরয়েড ক্যান্সারে’ আক্রান্ত, ব্রাজি প্রেসিডেন্ট দিলমা রোসেফ আক্রান্ত ‘লিমফোমিয়ায়’।কলম্বিয়ার রক্ষনশীল প্রেসিডেন্ট জুয়ান ম্যানুয়েল সান্তোস আক্রান্ত ‘প্রস্টেট ক্যান্সারে’। বলা হচ্ছে কলম্বিয়ার বাম পন্থী বিপ্লবী সশস্ত্র বাহিনী ‘ফার্কের’ সাথে শান্তি আলোচনা শুরু করবার পরই সান্তোষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। এরা সবাই লাতিন আমেরিকার নেতৃবৃন্দ। এদের পেছনে সিআইএ’র রাসায়নিক বিষ প্রয়োগের বিষয়টিই এখন সারা বিশ্বে আলোচনায় ঘুরে ফিরে আসলেও আমেরিকা নির্বিকার। সাভেজের মৃত্যুর পর ভেনেজুয়েলার বর্তমান প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো তার প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ‘ভেনেজুয়েলার ঐতিহাসিক শক্ররা ‘বৈজ্ঞানিক আঘাতে’ হত্যা করেছে আমাদের প্রিয় প্রেসিডেন্টকে’। আর ইরানের রধানমন্ত্রী আহমদিনজাদ বলেছেন ‘শহীদ হলেন সাভেজ’।

ভারতীয় সাংবাদিক নিলাদ্রী সেন তার একটি নিবন্ধে প্রকাশ করেন, ‘রাসায়নিক অস্ত্র নিষিদ্ধ হয় ১৯৭২ সালে। বায়োলজিকাল এন্ড টক্সিক ওয়েপেনস কনভেনশনে। একমত হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত ইউনিয়ন ও গ্রেট বৃটেনের মতো শক্তিধর রাষ্ট্রগুলো। অথচ তারপর মার্কিন প্রশাসন রাসায়নিক অস্ত্র তৈরি থেকে সরে আসেনি। মেরিল্যান্ডের ফোর্ট ডেট্রিকেতে মার্কিনী আর্মি ইনটালিজেন্স ও সিআইএ’র স্পেশাল অপারেশন ডিভিশন ক্যান্সারের জীবানু দিয়ে ক্যান্সারের রাসায়নিক অস্ত্র তৈরি ও উন্নয়নের কাজ চালিয়ে যায়। ফোর্ট ডেট্রিকে গোপনে চলা এ মার্কিনী প্রকল্পের নাম ‘এম কে নাওমি’।

তত্ত্বাবধানে অবশ্যই সিআইএ। অনেক আগে থেকেই ক্যান্সারের রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগ করে চলেছে ওয়াশিংটন। যার প্রথম বলি হন লাতিন আমেরিকানই। ফোর্ট ডেট্রিকের প্রকল্প গোপন করবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় মার্কিন প্রশাসন। তথ্য ফাঁস হলে জানা যায়, ১৯৭৭ সালে সাফল্যেও সাথে এম কে নাওমি প্রকল্পে ৬০,০০০ লিটার ক্যান্সারের রাসায়নিক অস্ত্র তৈরি করে ওয়াশিংটন। এ মার্কিন ক্যান্সারের রাসায়নিক অস্ত্র কাজ করে মূলত দু’ভাবে। একটি খাদ্যের মধ্যে দিয়ে ভয়ঙ্কর বিষক্রিয়া ঘটিয়ে দেহে ক্যান্সারের বিষ প্রবেশ করায়। অপরটি পশুর দেহের মধ্যে দিয়ে মানব দেহে প্রবেশ করে।

সিআইএ’র ক্যান্সারের রাসায়নিক অস্ত্রে সম্ভবত প্রথম হত্যা করা হয় এ্যাঙ্গোলার প্রথম প্রেসিডেন্ট অগুমতিনো নিটোকে। মার্কিন কংগ্রেসের কিছু নির্দেশ মানতে তিনি নারাজ হন। পড়েন সিআইএ’র নেক নজরে। পরিণতিতে ১৯৭৯ সালে তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হন এবং মস্কোর একটি হাসপাতালে ৫৭ বছর বয়সে তার মৃত্যু হয়। চিলির স্বৈরশাসক জেনারেল অগুস্ত পিনোচেত। সিআইএ’র হাতের পুতুল। চিলির স্বৈরশাসন বিরোধী নেতা ও সাবেক প্রেসিডেন্ট এদুয়ার্দো ফ্রেই ছিলেন চরম পিনোচেত বিরোধী। নজরে আসেন সিআইএ’র। রহস্যজনক সংক্রমনে ১৯৮২ সালে সানদিয়াগোতে মৃত্যু হয় ফ্রেই’র। শরীরের ‘পেলভিক’ অংশে ক্যান্সার বাসা বাঁধে ভেনেজুয়োল প্রেসিডেন্ট সাভেজের।

এক্ষেত্রে ত্বকে সেঁটে থাকা ‘আন্ডারওয়্যার’ থেকে এ সংক্রমন মোটে অসম্ভব নয়। এছাড়া খাদ্য, পানীয় এমনকি টুথপেস্টেও মাধ্যমেও সাভেজের দেহে ক্যান্সার প্রবেশ করানো হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। কাজ পাগল সাভেজ নিজের শরীর স্বাস্থ্য নিয়ে মোটেও সতর্ক ছিলেন না। শক্রর শরীরে সুনিপুণভাবে ক্যান্সারের বিষ প্রয়োগে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র দক্ষতা আজ এক প্রমাণিত সত্য। সিআইএ’র সর্বনাশি এ ভূমিকার প্রমাণসহ অসংখ্য নথি বার বার প্রকাশ্যে আসছে। তবু ভ্রুক্ষেপ নেই হোয়াইট হাউজের। ইতিমধ্যে তৎপরতার সাথে নষ্ট করা হয়েছে বহু নথিপত্র। তাই রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় ক্যান্সারের বিষ প্রয়োগের মার্কিন তথ্য, নথিপত্র-আজ আর তেমন ‘ইস্যু’ নয়। দেশে দেশে ঘৃণ্য কায়দায় ওয়াশিংটন ছড়িয়ে দিচ্ছে ক্যান্সারের এই রাসায়নিক বিষ!

সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো , ‘সিআইএ’র তিনটি শীর্ষ পদে আসীন হয়েছেন নারীরাই।  সিন্থিয়া ডিডি রাপকে ‘সিআইএ’র বিশ্লেষক শাখার পরিচালক প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আর সিন্থিয়ার নিয়োগের ফলে এই প্রথমবারের মতো সিআইএ’র তিনটি শীর্ষ পদই চলে গেছে নারীদের দখলে। এর আগে ‘সিআইএ’র ইতিহাসে প্রথম নারী পরিচালক হিসেবে গিনা হ্যাসপেল দায়িত্ব নিয়ে নতুন ইতিহাস গড়েন। সংস্থাটিতে গোপন অভিযান সংক্রান্ত বিভাগের ডিরেক্টর পদে ৫৬ বছর বয়সী এলিজাবেথ কিম্বার দায়িত্বে রয়েছেন। এই পদে থেকে তিনি মূলত গোয়েন্দা নিয়োগ, ওয়াইট হাউজের সাথে যোগাযোগ রক্ষাসহ অন্যান্য দায়িত্ব পালন করেন। ‘সিআইএ’ চালু হওয়ার ৭০ বছর পর্যন্ত এ পদটি পুরুষ কর্মীদের অধীনে ছিল। এছাড়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগে ডেপুটি ডিরেক্টর হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন ডন মেয়ারিকস। সব মিলিয়ে বর্তমানে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাটির ৫০ ভাগই এখন নারীদের দখলে। এই নারীদের হাতের মুঠোয় এখন সারা বিশ্ব।###(বিদেশী পত্রিকা অবলম্বনে)

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.