--- বিজ্ঞাপন ---

মিয়ানমার কেন সামরিক শক্তি বাড়াচ্ছে

টার্গেট কি বাংলাদেশ ?

0

কাজী আবুল মনসুর

কাশ্মির নিয়ে ভারতের সাথে পাকিস্তানের দ্বন্দ্ব নতুন কিছু নয়। উভয় দেশের মধ্যে কাশ্মির নিয়ে যুদ্ধ ও সংর্ঘষ লেগেই আছে। কাশ্মিরকে কেন্দ্র করে দু’দেশ সামরিক সরঞ্জামের যোগান বাড়াচ্ছে। আবার ভারতের টার্গেট রয়েছে চীনের প্রতিও। এ অবস্থায় ভারত সামরিক শক্তি বাড়ালে তার একটা যুক্তি আছে। তেমন যুক্তি আছে পাকিস্তানেরও। কিন্ত বাংলাদেশের পাশের দেশ মিয়ানমার কেন শক্তি বাড়াচ্ছে এ নিয়ে রহস্যের অন্ত নেই। মিয়ানমারের টার্গেট কি বাংলাদেশ। ঘুরে ফিরে দেখা দিচ্ছে এ প্রশ্ন।রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ঠেলে দিয়ে মিয়ানমার জানান দিচ্ছে তাদের শক্তি বাড়ানোর বিষয়টি। এ ক্ষেত্রে মিয়ানমার আশপাশের দেশগুলোকে হাতে নিয়েছে। জাতিসংঘে রোহিঙ্গা প্রশ্নে বাংলাদেশের পাশের সবকটি দেশ যখন মিয়ানমারকে সমর্থন করে তখন বাংলাদেশের নতুন করে চিন্তা করা ছাড়া আর কোন উপায় আছে কি?

একটি রাষ্ট্রের সাথে অন্য একটি রাষ্ট্রের বন্ধুত্ব আছে এমন প্রশ্ন অহরহ শুনা যায়। যেমন চীনের সাথে পাকিস্তানের বন্ধুত্ব, আমেরিকার সাথে ইসরাইলের বন্ধুত্ব, তুরস্কের সাথে আজারবাইজানের বন্ধুত্ব্। এ বন্ধুত্বের খাতিরে এক দেশ অন্য দেশের পাশে দাড়ায়। যেমনটি দাড়িয়েছে তুরস্ক। আজারবাইজানের সাথে আর্মেনিয়ার যুদ্ধে তুরস্ক অনেকটা প্রকাশ্যে অবস্থান নেয় আজারবাইজানের পক্ষে। সে অর্থে বাংলাদেশের সাথে ভারতের কি বন্ধুত্ব আছে? বাংলাদেশকে তারা কতটুকু গুরুত্ব সহকারে নেয়। অনেকগুলো প্রশ্ন যখন দাড়িয়ে যায় তখন বাংলাদেশের নিজের শক্তিতে বলিয়ান হওয়া ছাড়া বিকল্প কোন পথ তো দেখি না। জাতিসংঘে রোহিঙ্গা প্রশ্নে ভারত ভোট দানে বিরত থাকে। যা পরোক্ষভাবে মিয়ানমারের পক্ষে যায়। আর চীন তো সরাসরি মিয়ানমারকে সমর্থন করলো। জাপানও মিয়ানমারের পক্ষ নিলো। এমনকি নেপাল, ভূটান ও শ্রীলঙ্কাও নীরব ছিল। কার্যত এ দেশগুলো মিয়ানমারের পক্ষ নিয়েছে।বাংলাদেশের বন্ধু রাষ্ট্র কোনটি। কেনই বা বাংলাদেশের পাশের দেশগুলোকে মিয়ানমার নিজেদের আওতায় নিলো। সবকিছু দেখেশুনে মনে হচ্ছে মিয়ানমার বাংলাদেশকে টার্গেট শক্তি বাড়াচ্ছে। অন্তত বিগত কয়েক বছর ধরে মিয়ানমারের অস্ত্র-সরঞ্জাম কেনার বহর দেখে তা অনুমেয়।

বিগত কয়েক বছর ধরে মিয়ানমার সামরিক সরঞ্জামের যোগান বাড়াচ্ছে। সামরিক দিকে দিয়ে এ দেশটি একসময় বাংলাদেশের চেয়ে পিছিয়ে থাকলেও পরবর্তিতে অনেকটা আকস্মিকভাবে বেশি পরিমানে সামরিক সরঞ্জাম কিনতে থাকে। সর্বশেষ ভারতের কাছ থেকে সাবমেরিন এবং চীনের কাছ থেকে ব্যালেষ্টিক মিসাইল নিচ্ছে মিয়ানমার। মিয়ানমার প্রকাশ না করলেও স্বল্প পাল্লার এ ব্যালিস্টিক মিসাইলের আওতায় বাংলাদেশ রয়েছে। মিসাইল ল্যান্সার ইউনিটগুলো ১৬ চাকার অত্যন্ত সচল ওয়ানশান মিলিটারি ট্রাক চেসিসের উপর বসানো। ট্রাকগুলো চলে ৫১৭ হর্স পাওয়ারের দিউজ ডিজেল ইঞ্জিনে। সড়ক পথে এর সর্বোচ্চ গতি ৭৫ কি.মি./ঘন্টা এবং সর্বোচ্চ ক্রুজিং রেঞ্জ ৬৫০ কি.মি.। চীনের এসওয়াই-৪০০ মিসাইল সিস্টেমটি কাতারেও সরবরাহ করেছে চীন। বলা হচ্ছে চীনের কাছ থেকে নেয়া মিয়ানমারের এ মিসাইল নিশ্চিতভাবে বাংলাদেশের জন্য বড় ধরনের হুমকির কারন হতে পারে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের ধারনা, ভারতের সাথে মিয়ানমারের সম্পর্ক  ভালো। তারা এগুলো ভারতের বিরুদ্ধে ব্যবহার করবে না, টার্গেট বাংলাদেশ।

সাউথ এশিয়া মনিটর সূত্র জানায়, মিয়ানমার চীনের পাশাপাশি খুশি রেখেছে রাশিয়াকেও। যে কারনে রাশিয়াও জাতিসংঘের রোহিঙ্গা প্রশ্নে মিয়ানমারের পাশে ছিল। রাশিয়ার কাছ থেকে শক্তিশালী ৬টি এসইউ-৩০ যুদ্ধ বিমান কিনেছে মিয়ানমার। ২০১৮ সালে রাশিয়ার সাথে এসব যুদ্ধ বিমান কেনার চুক্তি করে রাশিয়াকে কাছে টেনে নেয় মিয়ানমার। চীনের কাছ থেকে জে এফ-১৭বি যুদ্ধ বিমানও সংগ্রহ করেছে মিয়ানমার।

মিয়ানমারের সামরিক সরঞ্জাম কেনার বিষয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আল জাজিরা এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, মিয়ানমার সেনাবাহিনী সবচেয়ে বেশি যুদ্ধবিমান কিনেছে চীনের কাছ থেকে। আকাশপথকে সমৃদ্ধশালী করার লক্ষে মিয়ানমার গত ২৫ বছর ধরে যুদ্ধ বিমান কেনা অব্যাহত রেখেছে। ১৯৯০ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত মিয়ানমার চীনের কাছ থেকে ১২০টি, রাশিয়ার কাছ থেকে ৬৪টি, পোল্যান্ডের কাছ থেকে ৩৫টি, জার্মানির কাছ থেকে ২০টি, সাবেক যুগোস্লাভিয়া থেকে ১২টি, ভারত থেকে ৯টি, সুইজারল্যান্ড থেকে ৩টি ও ডেনমার্ক থেকে ১টি যুদ্ধবিমান কিনেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী।

এতো গেলো যুদ্ধ বিমানের কথা। বাদ যায় নি ক্ষেপনাস্ত্রও। রাশিয়ার কাছ থেকে সর্বোচ্চ ৩০০০ ক্ষেপনাস্ত্র, চীনের কাছ থেকে ১ হাজারেরও বেশি ক্ষেপনাস্ত্র কিনেছে মিয়ানমার। ইউক্রেন, বেলারুশ, বুলগেরিয়া থেকে ভিন্নধর্মী ২;শরও বেশি ক্ষেপনাস্ত্রও সংগ্রহে আছে মিয়ানমারের। নৌ-পথকে শক্তিশালী করার জন্য সম্প্রতি রাশিয়ার তৈরি সাবমেরিন ভারত থেকে নিয়েছে মিয়ানমার। এর আগে আরও তিনটি নৌ যুদ্ধ জাহাজ ও ২০ টি সাঁজোয়া যান ভারত মিয়ানমারের কাছে সরবরাহ করেছে। প্রায় ৭০০ সাঁজোয়া যান চীনের কাছ থেকে, ইসরাইলের কাছ থেকে ১২০টি এবং ইউক্রেন এর কাছ ৫০ টি সাজোঁয়া যান মিয়ানমারের বহরে আছে। গত ২৫ বছরে নৌজাহাজ কিছুটা কম কিনেছে মিয়ানমার। ২১টি নৌজাহাজ কিনেছে চীন থেকে। সাবেক যুগোস্লাভিয়া থেকে তিনটি ও ভারত থেকে কিনেছে তিনটি নৌজাহাজ। সাঁজোয়া যানও চীন থেকে সবচেয়ে বেশি কিনেছে মিয়ানমার। ৬৯৬টি সাঁজোয়া যান কিনেছে চীন থেকে। ইসরায়েল থেকে ১২০টি, ইউক্রেন থেকে ৫০টি ও ভারত থেকে কিনেছে ২০টি সাঁজোয়া যান।

এই সময়ে মিয়ানমার সবচেয়ে বেশি কামান (আর্টিলারি) কিনেছে চীনের কাছ থেকে। চীন থেকে কিনেছে ১২৫টি কামান। এরপর সার্বিয়া থেকে ১২০টি, রাশিয়া থেকে ১০০টি, ইসরায়েল থেকে ২১টি, উত্তর কোরিয়া থেকে ১৬টি ও ভারত থেকে ১০টি কামান কিনেছে। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এসআইপিআরআই)। প্রতিষ্ঠানটির দেয়া তথ্যানুযায়ী, ২০১৩ থেকে ২০১৭ এই বছরগুলোতে মায়ানমারের কেনা মোট অস্ত্রের ৬৮ শতাংশ যোগান দিয়েছে চীন। এর মধ্যে সাঁজোয়া যান, ভূমি থেকে আকাশের ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের প্রযুক্তি, রাডার ও মানববিহীন ড্রোনের মতো অত্যাধুনিক প্রাণঘাতী ভারি ও ভয়ানক সামরিক সরঞ্জাম রয়েছে।

মিয়ানমার যে গতিতে সামরিক দিক দিয়ে শক্তিশালী হচ্ছে তাতে বাংলাদেশের ভাবার সময় হয়েছে। বাংলাদেশকে চাপে ফেলার জন্য মূলত প্রতিবেশি দেশগুলো হতে সামরিক সরঞ্জাম কিনে মিয়ানমার সম্পর্ক মজবুত করে। অনেকটা পরিকল্পিতভাবে মিয়ানমার এ কাজ করেছে। নিজেদের শক্তিশালী করার পর দেশটি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির উপর হামলে পড়ে। প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গাকে রাখাইন থেকে উচ্ছেদ করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়। পাকিস্তানের মতো মিয়ানমারও অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হওয়ার পরিবর্তে সামরিক দিক দিয়ে শক্তি বাড়ানোর দিকে নজর দিয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের করনীয় নিয়ে ভাববার সময় এসেছে। সময় এসেছে সামরিক সরঞ্জামের ক্ষেত্রে বাংলাদেশেরও শক্তি বাড়ানোর।

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.