সিরাজুর রহমান#
কাতার ভিত্তিক আল জাজিরা নিউজ এজেন্সির দেওয়া তথ্যমতে, গত ১ এপ্রিল মঙ্গলবার ফিলিপাইনের কাছে (ফুল ওয়েপন্স প্যাকেজসহ) ৫.৫৮ বিলিয়ন ডলার মূল্যের ২০টি অত্যাধুনিক এফ-১৬সি/ডি (ভাইপার) ব্লক ৭০/৭২ সিরিজের ফাইটিং ফ্যালকন যুদ্ধবিমান বিক্রির অনুমোদনের তথ্য জানিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসন। আর এক্ষেত্রে ৫৫৮০ মিলিয়ন ডলার হিসেবে ফিলিপাইনের বিমান বাহিনীর জন্য প্রস্তাবিত প্রতিটি যুদ্ধবিমানের মূল্য হবে প্রায় ২৭৯ মিলিয়ন ডলার।
আল জাজিরা এক প্রতিবেদনে বলেছে, ফিলিপাইনের কাছে আমেরিকার নতুন করে ২০টি অত্যাধুনিক এফ-১৬সি (ভাইপার) যুদ্ধবিমান বিক্রির সিদ্ধান্তকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হিসেবে বর্ণনা করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর। আমেরিকা দক্ষিণ চীন সাগর এবং সমগ্র এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান সামরিক হুমকি মোকাবিলায় বন্ধুভাবাপন্ন দেশগুলোকে সামরিক সহায়তা অব্যাহত রাখার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে মার্কিন ট্রাম্প প্রশাসন।
ফিলিপাইনের বিমান বাহিনীর বর্তমান এয়ার ফ্লিটের আকার ও সক্ষমতা মোটেও উল্লেখ করার মতো নয়। বিশেষ করে দেশটির কমব্যাট এয়ারক্রাফটের তালিকা পর্যালোকনা করলে দেখা যায় যে, চীনের বিমান বাহিনীর যুদ্ধবিমান সরাসরি ইন্টারসেপ্ট বা প্রতিহত করার মতো কোনো যুদ্ধবিমান তাদের হাতে নেই। তবে নতুন করে ফুল ওয়েপন্স, লজিস্টিক সাপোর্ট অ্যান্ড ট্রেনিং প্যাকেজসহ ২০টি অত্যাধুনিক এফ-১৬সি/ডি ব্লক ৭০/৭২ সিরিজের ফাইটিং ফ্যালকন যুদ্ধবিমান সার্ভিসে আসলে তাদের কমব্যাট এয়ার ফ্লিটের সক্ষমতা অনেকটাই বৃদ্ধি পাবে।
নতুন এই ২০টি এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের ৫.৫৮ বিলিয়ন ডলার অনেকের কাছে খুবই ব্যয়বহুল এবং অতিরঞ্জিত খরচ বলে মনে হতে পারে। তবে ফিলিপাইন এক্ষেত্রে যুদ্ধবিমানের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় অস্ত্র, মিসাইল, ইঞ্জিন এবং এইএসএ রাডারসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি ক্রয় করতে যাচ্ছে। এর মধ্যে ২৪টি জিই এফ-১১০ জেট ইঞ্জিন এবং ২২টি অত্যাধুনিক এইএসএ (Active Electronically Scanned Array) রাডার ক্রয়ের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এই এই যুদ্ধবিমানের সম্পূর্ণ সরবরাহ পেতে হয়ত ফিলিপাইনকে আগামী ২০৩০ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
প্যাকেজটিতে ১৬টি এফ-১৬সি ব্লক ৭০/৭২ বিমান এবং ৪টি েফ-১৬ডি ব্লক ৭০/৭২ ফাইটিং ফ্যালকনযুদ্ধবিমান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যাতে ৮৮টি এলএইউ-১২৯ গাইডেড মিসাইল লঞ্চার, ২২টি এম৬১এ১ অ্যান্টি-ক্রাফট গান ইনস্টল করা হবে। তাছাড়া এর পাশাপাশি ১২টি এএন/এএকিউ-৩৩ স্নাইপার অ্যাডভান্স টার্গেটিং পড, উচ্চ প্রযুক্তির রেডিও সিস্টেম, ২৪টি এমআইডিএস-জেটিআরএস কমব্যাট সেন্সর এবং এএন/এএলকিউ-২৫৪ ভাইপার শিল্ড ইলেকট্রনিক্স ওয়ারফেয়ার সিস্টেম ও জ্যামিং স্যুট ক্রয় করবে দেশটি।
তাছাড়া ওয়েপন্স প্যাকেজের আওতায় এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের মূল অস্ত্র হিসেবে ১১২টি এআইএম-১২০সি-৮ (AMRAAMs) সিরিজের এয়ার টু এয়ার মিসাইল, ৪০টি শর্ট রেঞ্জের এআইএম-৯এক্স ব্লক-২ সাইডউইন্ডার মিসাইল, ৩৬টি গাইডেড জিইউবি-৩৯/বি স্মল ডায়ামিটার বম্ব/মিউনেশন, ৩২টি এআইএম-৯এক্স ক্যাপটিভ ট্রেনিং মিসাইল (CATM) এবং ৬০টি ২ হাজার পাউন্ড ওজনের এমকে-৮৪ জেনারেল পারপাস ওয়েপন্সসহ আরো বিভিন্ন ধরনের ডিফেন্স সিস্টেম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
বর্তমানে ফিলিপাইনের বিমান বাহিনীতে কমব্যাট এয়ারক্রাফট হিসেবে দক্ষিণ কোরিয়ার তৈরি টি-৫০ গোল্ডেন ঈগল লাইট যুদ্ধবিমান রয়েছে ১২টি। এর পাশাপাশি ব্রাজিলের তৈরি এমব্রেয়ার ইএমবি-৩১৪ লাইট অ্যাটাক এয়ারক্রাফট ৬টি এবং আমেরিকার তৈরি পুরনো অভি-১০ ব্রোনকো মাত্র ৭টি এয়ারক্রাফট রয়েছে। যদিও ফিলিপাইন গত ২০২৩ সালে আমেরিকার অনুমতি ক্রমে তুরস্কের তৈরি ৬টি অত্যাধুনিক টি-১২৯বি সিরিজের অ্যাটাক হেলিকপ্টার ক্রয় করেছে।##
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.