ইউরোপ প্রতিনিধি#
আবিদা ইসলামকে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের পরবর্তী হাইকমিশনার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে সরকার। তিনি বর্তমানে মেক্সিকোতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে কর্মরত আছেন। রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়। আবিদা ইসলাম দক্ষিণ কোরিয়ায় রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেছেন। কূটনীতিক হিসেবে দুই দশকেরও বেশি অভিজ্ঞতা রয়েছে আবিদা ইসলামের। তিনি তাঁর নতুন দায়িত্বে বাংলাদেশ-ব্রিটেন সম্পর্ক উন্নত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন বলে আশা করছে প্রশাসন।
আবিদা ইসলাম ১৫তম বিসিএসে পররাষ্ট্র ক্যাডারে যোগ দেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে লন্ডন, কলম্বো, ব্রাসেলস ও কোলকাতার বাংলাদেশ মিশনে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন উইংয়ে দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজ-বিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতকোত্তর ও অস্ট্রেলিয়ার মোনাস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড ট্রেড বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি লাভ করেন।
জানা গেছে, যুক্তরাজ্য নিয়ে বর্তমান সরকারের বিশাল রোডম্যাপ রয়েছে। কারন বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচারের তালিকায় যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত কিছু আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ও ব্যবসায়ীর নাম রয়েছে। বিশেষ করে লন্ডনে আওয়ামী লীগ নেতা সাইফুজ্জামান চৌধুরীর প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি নিয়ে প্রশ্ন উঠার পর সরকার নড়েচড়ে বসে । বিদেশী গণমাধ্যম আল জাজিরার নিউজের কারনে আওয়ামী লীগের এ নেতা শিরোনাম হয়েছেন বার বার। এ অবস্থায় দক্ষ একজন কূটনীতিককে সরকার এখানে বসানোর চিন্তা করে। তারই ধারাবাহিকতায় আবিদা ইসলামের নামটি উঠে আসে। কারন আবিদা ইসলাম দক্ষিণ কোরিয়ায় রাষ্ট্রদূত হিসেবে অত্যন্ত সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করে দেশের সুনাম অর্জন করেন বলে জানা যায়।
এর আগে গত প্রায় ৬ বছর ধরে বাংলাদেশের হাইকমিশনারের দায়িত্ব পালনকারী সাইদা মুনা তাসনীমকে ঢাকায় ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রশাসনে রদবদলের অংশ হিসেবে ওই কূটনীতিককে ঢাকায় বদলি করা হয়েছে। কূটনৈতিক আবিদা ইসলাম বর্তমানে ইউনাইটেড মেক্সিকান স্টেটে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এই পদে তিনি ২০২১ সালের ২৯ আগস্ট থেকে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে তিনি ২০০১ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনে ফাস্ট সেক্রেটারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
কর্মজীবনে তিনি মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন বিভাগে কাজ করেছেন। এছাড়াও আন্তর্জাতিক সংস্থা, দূরপ্রাচ্য, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, আমেরিকা-প্রশান্ত মহাসাগরীয় ও সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ, এবং প্রশাসন সহ ঢাকার পররাষ্ট্র বিষয়ক তার বিদেশী অ্যাসাইনমেন্ট তাঁকে লন্ডনে (২০০১-২০০৪), কলম্বো (২০০৪-২০০৬), এবং ব্রাসেলস (২০০৯-২০১২) কূটনৈতিক মিশনে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।
উল্লেখ্য, তিনি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় ডেপুটি হাইকমিশনে বাংলাদেশের প্রথম মহিলা ডেপুটি হাইকমিশনার (প্রধান মিশন) হিসেবেও কাজ করেছেন (২০১২-২০১৪)। আবিদা ইসলাম বিভিন্ন বিষয়ে অসংখ্য আন্তর্জাতিক সম্মেলন, সেমিনার এবং শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। মহাপরিচালক হিসেবে, তিনি ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক সংস্থা (২০১৪-২০১৫) এবং আমেরিকাস উইং (২০১৫-২০১৭) তত্ত্বাবধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে (সমাজবিজ্ঞান) স্নাতকোত্তর ডিগ্রি এবং অস্ট্রেলিয়ার মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বৈদেশিক বিষয় ও বাণিজ্য বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন।
কর্মজীবনে তিনি কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি বিভিন্ন বিষয়ে একাধিক সম্মাননা অর্জন করেছেন, উল্লেখযোগ্য সম্মানার মধ্যে রয়েছে * ব্রাজিলের ফেডারেটিভ রিপাবলিক সরকারের কাছ থেকে রিও ব্রাঙ্কোর আদেশ (ফেব্রুয়ারি ২০১৮) * এনডিএন নিউজ এবং সিউল সিটি ম্যাগাজিন, রিপাবলিক অফ কোরিয়া (অক্টোবর ২০১৮) থেকে গর্বিত রাষ্ট্রদূত পুরস্কার ২০১৮ * কোরিয়া আমদানিকারক সমিতি (KOIMA) থেকে প্রশংসার ফলক (ডিসেম্বর ২০১৮) * কোরিয়া অ্যাম্বাসেডর কালচার ফ্রেন্ডশিপ অ্যাসোসিয়েশন, এনডিএন নিউজ এবং সিউল সিটি ম্যাগাজিন, রিপাবলিক অফ কোরিয়া (সেপ্টেম্বর ২০২০) থেকে ২০২০ ফ্রেন্ডশিপ অ্যাম্বাসেডর অ্যাওয়ার্ড ৷ বিবাহিত জীবনে তিনি দুই সন্তানের জননী। তাঁর পুত্রের নাম আরশাদ আহমেদ এবং কন্যা আয়শা আহমেদ।##