বিশেষ প্রতিনিধি#
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস আজ, ১৩ মার্চ ২০২৫, ঢাকায় পৌঁছেছেন। চার দিনের এই সফরে তিনি রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট এবং মানবাধিকার ইস্যুতে আলোচনা করবেন। শুক্রবার (১৪ মার্চ) তিনি কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করবেন এবং শরণার্থীদের সঙ্গে ইফতার করবেন। এছাড়া, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকসহ সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে একাধিক বৈঠক করার কথা রয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের আমন্ত্রনে তিনি সরেজমিন রোহিঙ্গাদের অবস্থা দেখতে আসছেন বলে জানা গেছে।
সফরকালে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সচিবালয় এবং প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনা ও আশপাশের এলাকায় যে কোনও ধরনের সভা-সমাবেশ, গণজমায়েত, মিছিল ও শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, প্রায় সাত বছরের ব্যবধানে এটি তার বাংলাদেশে দ্বিতীয় সফর। জাতিসংঘ মহাসচিবের এই সফর বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান কূটনৈতিক মর্যাদা এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে রোহিঙ্গা সমস্যার মতো চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরার একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
সফরসূচি অনুযায়ী, শনিবার (১৫ মার্চ) ঢাকায় জাতিসংঘের কার্যালয়ে জাতিসংঘ কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন মহাসচিব। এরপর হোটেলে ফিরে বাংলাদেশের যুবসমাজ ও নাগরিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নেবেন। ১৬ মার্চ সকালে তার ঢাকা ত্যাগ করার কথা রয়েছে। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস আজ, ১৩ মার্চ ২০২৫, ঢাকায় পৌঁছেছেন। চার দিনের এই সফরে তিনি রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট এবং মানবাধিকার ইস্যুতে আলোচনা করবেন।
জানা গেছে, শুক্রবার সকালে মহাসচিবের সঙ্গে প্রথমে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এবং প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সমস্যা ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলি-সংক্রান্ত বিশেষ প্রতিনিধি খলিলুর রহমান সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। এরপর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তার দপ্তরে বৈঠক করবেন জাতিসংঘ মহাসচিব।
বৈঠক শেষে তারা বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে একসঙ্গে কক্সবাজার যাবেন। সেখান থেকে তারা রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শনে যাবেন। রোহিঙ্গা শিবিরে জাতিসংঘের হয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংস্থা নিজ নিজ কার্যক্রম সম্পর্কে জাতিসংঘ মহাসচিবকে ব্রিফ করবেন। শরণার্থী শিবির পরিদর্শনের পর রোহিঙ্গা ও পবিত্র রমজানের প্রতি সংহতি জানিয়ে সবার সঙ্গে ইফতার করবেন জাতিসংঘ মহাসচিব। অন্তত এক লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর সঙ্গে ইফতার করবেন তিনি। রাতে কক্সবাজার থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেবেন জাতিসংঘ মহাসচিব ও প্রধান উপদেষ্টা।
জাতিসংঘ মহাসচিবের পরিচয়
আন্তোনিও গুতেরেস পর্তুগালের নাগরিক এবং তিনি ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি জাতিসংঘের নবম মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি ১৯৯৫ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত পর্তুগালের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া, ২০০৫ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত তিনি জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা (UNHCR)-এর উচ্চ কমিশনার হিসেবে কাজ করেছেন। গুতেরেস পর্তুগালের লিসবন টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি থেকে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন। শিক্ষাজীবনের শুরু থেকেই তিনি গণিত ও প্রকৌশল বিদ্যায় আগ্রহী ছিলেন এবং পরবর্তীতে রাজনীতিতে যুক্ত হন।
রোহিঙ্গা সংকটে জাতিসংঘের ভূমিকা ও মহাসচিবের আগ্রহ
২০১৭ সালে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার পর ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। জাতিসংঘ শুরু থেকেই এই সংকটকে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং মানবিক বিপর্যয় হিসেবে উল্লেখ করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। ২০১৮ সালে মহাসচিব গুতেরেস কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করে শরণার্থীদের দুর্দশা প্রত্যক্ষ করেছিলেন। এবারের সফরেও তিনি রোহিঙ্গা সংকটের সাম্প্রতিক অবস্থা মূল্যায়ন করবেন এবং বাংলাদেশ সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এই সংকটের টেকসই সমাধান খুঁজে বের করার চেষ্টা করবেন।
সফরসূচি ও গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক
শুক্রবার (১৪ মার্চ) কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করবেন জাতিসংঘ মহাসচিব। সেখানে তিনি শরণার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন এবং তাদের সঙ্গে ইফতার করবেন। এরপর, তিনি ঢাকায় ফিরে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এছাড়া, তিনি সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে একাধিক বৈঠকে অংশ নেবেন, যেখানে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন, মানবাধিকার এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হবে।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা
জাতিসংঘ মহাসচিবের সফরকে কেন্দ্র করে ঢাকার সচিবালয় এবং প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনা ও আশপাশের এলাকায় যে কোনও ধরনের সভা-সমাবেশ, গণজমায়েত, মিছিল ও শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সরকার এই সফরকে নির্বিঘ্ন করতে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
কূটনৈতিক গুরুত্ব ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
প্রায় সাত বছরের ব্যবধানে এটি তার বাংলাদেশে দ্বিতীয় সফর। জাতিসংঘ মহাসচিবের এই সফর বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান কূটনৈতিক মর্যাদাকে তুলে ধরছে এবং রোহিঙ্গা সংকটের মতো গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক ইস্যুতে বাংলাদেশের অবস্থানকে আরও জোরালো করতে সহায়ক হবে। সফরসূচি অনুযায়ী, শনিবার (১৫ মার্চ) ঢাকায় জাতিসংঘের কার্যালয়ে জাতিসংঘ কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন মহাসচিব। এরপর, তিনি বাংলাদেশের যুবসমাজ ও নাগরিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নেবেন। ১৬ মার্চ সকালে তার ঢাকা ত্যাগ করার কথা রয়েছে।
জাতিসংঘ মহাসচিবের এই সফর আন্তর্জাতিক মহলে রোহিঙ্গা সংকটের গুরুত্ব পুনরায় তুলে ধরবে এবং এর সমাধানের জন্য নতুন দৃষ্টিভঙ্গি ও সহযোগিতার সুযোগ সৃষ্টি করবে বলে সূত্র জানায়।##
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.