বাংলাদেশের মানুষের কাছে পাকিস্তানকে ক্ষমা চাইতে হবে, বাংলাদেশ বহুদিন ধরে এমন দাবি জানিয়ে আসছে। বাংলাদেশের অভিযোগ, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান, যা আজকের বাংলাদেশ, সেখানে যুদ্ধাপরাধ চালিয়েছে। পাকিস্তান ওই অভিযোগ নাকচ করে আসলেও, ১৯৭৪ সালে প্রথম দেশটি বাংলাদেশের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে।
১৯৭৪ সালে সিমলা চুক্তির পর যে আলোচনা শুরু হয়েছিল, তার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। পাকিস্তান তখন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়, আর বাংলাদেশ এবং ভারত পাকিস্তানি যুদ্ধবন্দীদের ফেরত পাঠানো শুরু করে। একই সময়ে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানে আটক যুদ্ধবন্দী এবং সেখানে আটকে পড়া সাধারণ বাঙালিদের ফেরত পাঠানো সমাপ্ত করে পাকিস্তান। তবে বাংলাদেশ ওই সময় যুদ্ধাপরাধীসহ পাকিস্তানের অন্য শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা করার ঘোষণা দিলে পাকিস্তান তাতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে।
এর প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান দাবি করে তাদের হাতে গ্রেপ্তার থাকা ২০০ জন ব্যক্তির বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তান আলাদা করার ষড়যন্ত্র এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাচারের অভিযোগে প্রমানিত হয়েছে। আর তাই শেষ পর্যন্ত দুই দেশের মধ্যে আলোচনা ও সমঝোতা কেবল নিজেদের বন্দী নাগরিকদের ফেরত দেয়া-নেয়ার মধ্যেই সীমিত থাকে। এই ঘটনার কারণেই পাকিস্তান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে এবং দেশটির কাছে দুঃখ প্রকাশ করতে বাধ্য হয়েছিল। অন্যদিকে, বাংলাদেশ তখন ঘোষণা দেয় যে তারা ১৯৫ জন যুদ্ধবন্দীর কোন বিচার করবে না এবং তাদেরকে পাকিস্তানে ফেরত পাঠানো হবে।
ভবিষ্যতে সহযোগিতার সম্পর্ক রাখবে এমন চুক্তি স্বাক্ষর করে দুই দেশ। এক ত্রিপক্ষীয় আলোচনায় সবার সম্মতিতে যে চুক্তি হয়, তাতে স্বাক্ষর করেন বাংলাদেশ, ভারত এবং পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা।
চুক্তির বিবরণ অনুযায়ী, পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন যে দেশটির তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো বাংলাদেশের জনগণের কাছে অনুরোধ করেছেন যেন তারা তাদের (পাকিস্তানকে) ক্ষমা করে দেন এবং অতীতের কথা ভুলে গিয়ে সামনে এগিয়ে যান। তখন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার দেশের প্রধানমন্ত্রীর এমন বার্তা জানিয়ে দেন যে তিনিও বাংলাদেশের জনগণকে ক্ষমা করে, অতীত ভুলে সামনে এগিয়ে যেতে বলেছেন। তিনি বলেন, “কিভাবে ক্ষমা করতে হয় বাংলাদেশের মানুষ তা ভালোই জানে।”
দ্বিতীয়বার, পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মুশাররফ বাংলাদেশে সফরকালে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিসৌধ পরিদর্শন করেন এবং ওই সময়ের পরিস্থিতির জন্য বাংলাদেশের জনগণের কাছে হতাশা ব্যক্ত করেন। তাহলে বাংলাদেশ আবার কেন দাবি করছে, পাকিস্তানকে ক্ষমা চাইতে হবে? এ প্রশ্নের জবাব খুঁজতে বিবিসি ঊর্দু পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের কয়েকজন ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেছে।