-- বিজ্ঞাপন ---

এক অতি উচ্চ প্রযুক্তির ষষ্ঠ প্রজন্মের কমব্যাট এয়ারক্রাফটের যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে বিশ্ব!

সিরাজুর রহমান#
বর্তমানে পঞ্চম প্রজন্মের ডিফেন্স এভিয়েশন টেকনোলজি নিয়ে বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলোর মধ্যে ব্যাপক প্রতিযোগিতা শুরু হলেও বাস্তবে বিশ্বের সকল দেশকে ছাপিয়ে এবার একবারে ষষ্ঠ প্রজন্মের ফিচারের হাইলি অ্যাডভান্স ফাইটার জেট আকাশে উড্ডয়ন করে তাক লাগিয়ে দিয়েছে রেড জায়ান্ট চীন। মূলত গত ২০২৪ সালের ২৬শে ডিসেম্বর চীনের ডিফেন্স এভিয়েশন ম্যানুফ্যাকচারিং চেংদু কর্পোরেশন আকাশে অদ্ভুত আকৃতির, লেজবিহীন এবং ডেল্টা উইংস (জে-৩৬) এয়ারক্রাফটের বেশকিছু ভিডিও এবং এবং ছবি প্রকাশ করে। যা নিয়ে সারা বিশ্বে ইতোমধ্যেই ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।
চীনের সরকারের তরফে এ নিয়ে সুস্পষ্টভাবে কিছু বলা না হলেও সোশ্যাল মিডিয়ায় চীনের তৈরি ৬ষ্ঠ প্রজন্মের স্টেলথ যুদ্ধবিমানের পরীক্ষামূলক উড্ডয়ন নিয়ে তুমুল আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এর প্রকৃত প্রযুক্তিগত সক্ষমতা এবং ফিচার নিয়ে এখনো পর্যন্ত কিছুই প্রকাশ করা না হলেও মনে করা হচ্ছে যে, এই জাতীয় কিছু সংখ্যক সিক্সথ জেনারেশন ফিচার সমৃদ্ধ প্রোটোটাইপ স্টেলথ যুদ্ধবিমান নিয়ে গোপনে গত ২০১৭ সাল থেকে কাজ শুরু করে চীনের চেংদু কর্পোরেশন। তবে তা বাস্তবে সার্ভিসে আসতে হয়ত আগামী ২০৩০-৩২ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে।
এদিকে চীনের পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অত্যন্ত গোপনে গত এক দশক আগে থেকেই অতি উচ্চ প্রযুক্তির সিক্সথ জেনারেশন ফিচার সমৃদ্ধ প্রোটোটাইপ স্টেলথ যুদ্ধবিমান নিয়ে গোপনে ব্যাপকভাবে পরীক্ষা বা গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে তারা এখনো পর্যন্ত বিশ্বের সামনে তেমন কিছুই প্রকাশ করেনি। গত ২০২৩ সালের শেষের দিকে আমেরিকার নরথ্রপ গ্রুম্যান এভিয়েশন ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বি-২১ রেইডার হেভি স্ট্র্যাটিজিক স্টেলথ বোম্বার এয়ারক্রাফট আকাশে পরীক্ষামূলক উড্ডয়ন করে এক নতুন যুগের সূচনা করে।
আমেরিকার তৈরি বি-২১ রেইডার বোম্বার এয়ারক্রাফটের ম্যাসিভ প্রডাকশন লাইন চলতি ২০২৫ সালের শেষের দিকে হয়ত শুরু করা হতে পারে। বর্তমানে ইউএস এয়ার ফোর্স পরিকল্পনা মাফিক তাদের বিমান বহরে থাকা লং রেঞ্জের হেভি বি-২ স্পিরিট বোমারু বিমানের রিপ্লেস হিসেবে আগামী এক দশকের মধ্যেই প্রায় এক শতাধিক বা তার কাছাকাছি বি-২১ রেইডার স্টেলথ সুপার বোম্বার এয়ারক্রাফট সার্ভিসে আনতে চায়। তবে চীন কিন্তু ঠিকই সবাইকে চমকে দিয়ে ৬ষ্ঠ প্রজন্মের ফিচার সমৃদ্ধ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জে-৩৬ সিরিজের অ্যাডভান্স স্টেলথ ফাইটার জেট আকাশে উড়িয়েছে।
এখানে প্রকাশ থাকে যে, বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলো যখন পঞ্চম প্রজন্মের এরিয়াল সিস্টেম কার্যকরভাবে সার্ভিসে আনতে হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে কিনা আমেরিকা আজ থেকে ৪০ বছর আগেই ১৯৮৩ সালেই তাদের নিজস্ব প্রযুক্তিগত সক্ষমতা কাজে লাগিয়ে এফ-১১৭ নাইটহক স্টেলথ এয়ারক্রাফট সার্ভিসে এনেছে সারা বিশ্বকে চমকে দেয়। তাছাড়া স্টেলথ ক্যাপাবিলিটি সম্পন্ন যুদ্ধবিমান হিসেবে আমেরিকা এক দশক আগেই ১৮৭টি এফ-২২ র‍্যাপটর এবং প্রায় ৪ শতাধিকের উপর তিনটি ক্যাটাগরির এফ-৩৫এ/বি/সি স্টেলথ ফাইটার জেট সার্ভিসে এনেছে।
অবশ্য বর্তমানে আমেরিকার পাশাপাশি রেড জায়ান্ট চীন তাদের নিজস্ব প্রযুক্তির তৈরি জে-২০ এবং রাশিয়ার তৈরি এসইউ-৫৭ পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান সীমিতি পরিসরে সার্ভিসে এনেছে। বর্তমানে চীনের বিমান বাহিনীতে আনুমানিক ১ শতাধিকের কাছাকাছি পঞ্চম প্রজন্মের জে-২০ যুদ্ধবিমান অপারেশনাল রয়েছে এবং চীন কিন্তু আমেরিকা ও রাশিয়া কিংবা অন্য দেশের ডকুমেন্ট হাতিয়ে নিয়ে হলেও আরেকটি লাইট ওয়েট জে-৩১ এবং জে-৩৫ স্টেলথ ক্যাপাবিলিটি সম্পন্ন যুদ্ধবিমান নিয়ে ব্যাপকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। যদিও অবশ্য এই সিরিজের স্টেলথ যুদ্ধবিমান এখনো পর্যন্ত সার্ভিসে আসেনি।
আমেরিকা, রাশিয়া ও চীনের পাশাপাশি তুরস্ক, ভারত, যুক্তরাজ্য, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং ইরান পঞ্চম প্রজন্মের বা নেক্সট জেনারেশনের ফাইটার জেট ডিজাইন ও তৈরির সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে। তবে তারা কিন্তু এই জাতীয় হাইলি অ্যাডভান্স এয়ারক্রাফট ডিজাইন ও তৈরির ক্ষেত্রে এখনো পর্যন্ত গবেষণা ও উন্নয়নের প্রাথমিক পর্যায়ে রয়ে গেছে। অথচ বাস্তবে এখন কিনা পঞ্চম কিংবা ষষ্ঠ প্রজন্মের টেকনোলজির এয়ারক্রাফট ডিজাইন ও তৈরিতে আমেরিকা ও চীনের মধ্যে ব্যাপক প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। এই খেলায় কিন্তু পশ্চিমা বিশ্বের অন্যান্য প্রভাবশালী দেশগুলো এখন শুধু দর্শকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে।
তবে তুরস্ক গত ২০২৪ সালে তার নেক্সট জেনারেশনের “কান” এবং দক্ষিণ কোরিয়া কেএফ-২১ অ্যাডভান্স লাইট কমব্যাট এয়ারক্রাফটের প্রোটোটাইপ কপির প্রথম ফ্লাইট টেস্ট সফলভাবে সম্পন্ন করলেও বাস্তবে তা সার্ভিসে আসতে হয়ত আগামী ২০৩০ সাল পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে। তাছাড়া স্টেলথ ক্যাপাবিলিটি অ্যান্ড নেক্সট জেনারেশন যুদ্ধবিমানের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে হাইলি ডেডিকেটেড ইঞ্জিন ডিজাইন ও তৈরি করার মতো কোন প্রযুক্তিগত সক্ষমতা তুরস্ক, ভারত, ইরান এবং দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশগুলো কিন্তু এখনো পর্যন্ত অর্জন করতে পারেনি।
তথ্যসূত্র:- উইকিপিডিয়া, বুলগেরিয়ান মিলিটারি, এশিয়া টাইমস।

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.