সিরাজুর রহমান, বিশেষ প্রতিনিধি#
ইসরাইলের জেরুজালেম পোস্ট নিউজ এজেন্সির দেয়া তথ্য মতে, গত ২৫শে অক্টোবর শনিবার ভোরের দিকে ইরানের একাধিক সামরিক স্থাপনায় ইসরাইল তাদের বিমান বাহিনীর এফ-১৬, এফ-১৫ ও এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান দিয়ে সীমিত পরিসরে এয়ার স্টাইক চালিয়েছে। তবে এই মিশনকে সফল করতে হয়ত প্রায় শতাধিক কমব্যাট এন্ড নন-কমব্যাট বিমান ব্যবহার করে ইসরাইল। বিশেষ করে অনেকটা দূরত্ব বজায় রেখে যুদ্ধবিমানের পাশাপাশি গোয়েন্দা বিমান, আর্লি ওয়ার্নিং (এডাব্লিউএসিএস) এবং মিড এয়ার রিফুয়েলিং বিমান হামলায় অংশগ্রহণ করে। এই মিশনে সিরিয়া ও জর্ডানের আকাশ সীমা ব্যবহার করে খুব দ্রুত এবং নিরাপদে এয়ার কমব্যাট মিশন সমাপ্ত করে ইসরায়েল।
আসলে ইসরাইল থেকে প্রায় ১ হাজার ৬০০ কিলোমিটার দূরত্বে ইরানের আকাশ সীমানায় কাছাকাছি গিয়ে কিংবা প্রবেশ করে একাধিক সামরিক স্থাপনায় হামলা চালিয়ে নিজেদের কোন ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই আবার নিরাপদে নিজ দেশে ফিরে গেছে। তবে এই নজিরবিহীন বিমান হামলায় ইরানের একাধিক সামরিক স্থাপনা ও এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমকে টার্গেট করা হলেও তারা কিন্তু ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা এবং কোন তেল ক্ষেত্রে কিন্তু কোন ধরনের বিমান হামলা চালানো হয়নি। আসলে এই বিমান হামলাটি চালানো হয়েছে কিন্তু ইরানের মতো আগাম ঘোষণা ও সতর্কবার্তা দিয়ে।
খুব সম্ভবত মার্কিন বাইডেন প্রশাসনের প্রবল আপত্তির মুখে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা এবং তেলক্ষেত্রে বিমান হামলার মতো বড় ধরনের ঝুঁকি এড়িয়ে যায় ইসরাইল। কিছু অসমর্থিত সূত্র অনুযায়ী গত ২০২০ কিংবা ২০২১ সালের এক গোয়েন্দা রিপোর্টে জানা যায় যে, বর্তমানে ইরানের সামরিক বাহিনীর হাতে আনুমানিক ২০ থেকে ৩০ হাজার বা তার অধিক বিভিন্ন রেঞ্জের ব্যালেস্টিক এন্ড ক্রুজ মিসাইলের বিশাল মজুত রয়েছে। তার পাশাপাশি দেশটির হাতে আনুমানিক হয়ত ৫ হাজারের অধিক লং এন্ড মিডিয়াম রেঞ্জের কমব্যাট এন্ড সুইসাইডাল ড্রোনের বিশাল মজুত থাকতে পারে। যদিও বিষয়টি নিরপেক্ষ কোন সূত্র মাধ্যমে প্রমাণ করা সম্ভব নয় কিংবা ইরান নিজেও এ বিষয়ে কখনোই কোন তথ্য উপাত্ত কোন দিনই প্রকাশ করে না।
ইসরাইলের সরকারের তরফে দাবি করা হয়েছে যে, ইরানের পরিকল্পিত এই বিমান হামলা খুবই সফল হয়েছে এবং এতে তাদের কোন যুদ্ধবিমান ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি কিংবা কেউ হতাহত হয়নি। তবে ইরানের সামরিক শাখা (আইআরজিসি) দাবি করেছে যে, তাদের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম দ্বারা অধিকাংশ মিসাইল ও এক্সক্লুসিভ গ্লাইড বোম্বস/ মিউশন ইন্টারসেপ্ট করতে সক্ষম হয়েছে। তাছাড়া এই হামলায় ইরানের একাধিক সামরিক স্থাপনার কিছুটা ক্ষতি হলেও কোন সেনা বা সাধারণ নাগরিক হতাহত হয়েছে কিনা তা নিশ্চিতভাবে জানা যায় নি।
এই নজিরবিহীন বিমান হামলাকে কেন্দ্র করে ইরান কিংবা ইসরাইলের তরফে যাই বলা হোক না কেন, মাত্র ৯১ লক্ষ জনসংখ্যার ইসরাইলের মতো একটি ছোট্ট দেশের পক্ষে শতাধিক যুদ্ধবিমানের সমন্বয়ে কোন ক্ষয়ক্ষতি ব্যতীত কয়েক ঘণ্টার এই জটিল ও অতি স্পর্শকাতর এয়ার কমব্যাট মিশন পরিচালনা অপারেশন পরিচালনা করে তাদের সামরিক দক্ষতা ও যোগ্যতা বিশ্বের সামনে তুলে ধরেছে। তাছাড়া দেশটি প্রয়োজনে ইরান কিংবা মধ্যপ্রাচ্যের অন্য কোন দেশের উপর অদূর ভবিষ্যতে এর চেয়েও আরও ভয়াবহ বিমান হামলার হুমকি দিয়ে রেখেছে।
এদিকে ইরানের সরকারের তরফে এখনও পর্যন্ত সুস্পষ্ট প্রতিক্রিয়া না জানালেও অদূর ভবিষ্যতে ইসরাইলের উপর আবারো ব্যাপক মাত্রায় ব্যালেস্টিক মিসাইল ও কমব্যাট ড্রোন হামলা চালাতে পারে বলে আশাঙ্খা করা হচ্ছে। যদিও এই বিমান হামলায় ইসরাইলের একটি যুদ্ধবিমানও শুট ডাউন কিংবা ইন্টারসেপ্ট করতে না পারাটা কিন্তু ইরানের নিজস্ব এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের দুর্বলতা কিংবা প্রযুক্তিগত অপারগতা বিশ্বের সামনে উন্মোচন হয়ে গেল। তাছাড়া এর আগে ইসরাইলে ব্যাপক মাত্রায় ব্যালেস্টিক মিসাইল নিক্ষেপ করলেও তাতে কিন্তু ইসরাইলের সামরিক সক্ষমতা একেবারে ধ্বংস কিংবা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এমনটিও কিন্তু বলা যাবে না।
তবে সবচেয়ে আশঙ্কাজনক ব্যাপার হলো যে, মধ্যপ্রাচ্যের দুই আঞ্চলিক পরাশক্তি সাম্প্রতিক সময়ে যেভাবে একে অপরের বিরুদ্ধে আকাশ পথে হামলা ও পালটা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে, তাতে করে সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যে এখন এক ভয়াবহ ও প্রাণঘাতী যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে আমেরিকা ইসরাইলকে রক্ষা করতে এক রকম নীরবেই মধ্যপ্রাচ্যে আবারো তার সামরিক উপস্থিতি ও সক্ষমতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করছে। এতে করে ১৯৯০ সালের পার্সিয়ান গালফ ওয়ারের মতো আবারও অদূর ভবিষ্যতে এক দীর্ঘ মেয়াদি ও প্রাণঘাতী যুদ্ধের মুখোমুখি হতে পারে মধ্যপ্রাচ্য। তার সাথে মারাত্মকভাবে বিনষ্ট হতে পারে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং স্থিতিশীলতা।##