-- বিজ্ঞাপন ---

ব্যাংককে জরুরি অবস্থা ঘোষণা

থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে একটি ৩০-তলা নির্মাণাধীন ভবন ধসে পড়ে, যেখানে ৪৩ জন শ্রমিক আটকা পড়েন বলে পুলিশ ও চিকিৎসা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, সরকারি কার্যালয়ের জন্য নির্মিত বিশাল এই ভবনটি কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ধসে পড়ে ধ্বংসস্তূপ ও লোহার কাঠামোয় পরিণত হয়।ব্যাংককে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে।

“যখন আমি ঘটনাস্থলে পৌঁছাই, তখন শুনতে পেলাম কেউ কেউ সাহায্যের জন্য চিৎকার করছে, বলছে ‘আমাকে সাহায্য করুন’,” ব্যাংককের বাং সু জেলার উপ-পুলিশ প্রধান ওরাপাত সুকথাই এএফপিকে জানান। তিনি আরও বলেন, “আমরা অনুমান করছি শতাধিক মানুষ আহত হয়েছে, তবে হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা এখনো নির্ধারণ করা যায়নি।”
মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদোর জাতীয় জাদুঘরে ভূমিকম্পের সময় এএফপির সাংবাদিকদের একটি দল উপস্থিত ছিল। ভূমিকম্প শুরু হওয়ার সাথে সাথে ভবনের ছাদ থেকে বিভিন্ন অংশ খসে পড়ে। ইউনিফর্ম পরিহিত কর্মীরা আতঙ্কিত হয়ে বাইরে ছুটে যান, কেউ কাঁপছিলেন, কেউ আবার মোবাইল ফোনে প্রিয়জনদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করছিলেন। ভূমিকম্পে সড়কগুলো ফেটে গেছে এবং শহরের একটি বৃহৎ হাসপাতালে যাওয়ার রাস্তা যানজটে আটকে পড়েছে।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হাসপাতালটিকে “বড় ধরনের হতাহতদের জন্য প্রস্তুত এলাকা” ঘোষণা করা হয়েছে। একজন প্যারামেডিক অ্যাম্বুলেন্স থেকে চিৎকার করে বলছিলেন, “গাড়িগুলো সরুন, যেন অ্যাম্বুলেন্স যেতে পারে।” এক হাজার শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে আহতদের রাস্তায় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল, যেখানে স্যালাইন ব্যাগ ঝুলিয়ে চিকিৎসা চলছিল। কেউ ব্যথায় কাতরাচ্ছিলেন, কেউ নিস্তেজ হয়ে পড়েছিলেন, আর তাঁদের স্বজনরা সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন।

ভূমিকম্পের ফলে মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডের বিভিন্ন শহরের মানুষ রাস্তায় বেরিয়ে আসে। থাইল্যান্ডের জনপ্রিয় পর্যটন শহর চিয়াং মাই-এর বাসিন্দা দুয়াংজাই বলেন, “আমি তখন ঘুমিয়ে ছিলাম, ভূমিকম্পের শব্দ শুনেই যত দ্রুত সম্ভব ঘুমের পোশাকেই বাড়ির বাইরে ছুটে যাই।” ৭৬ বছর বয়সী সাই, যিনি চিয়াং মাই-এর একটি দোকানে কাজ করছিলেন, বলেন, “দোকান কাঁপতে শুরু করতেই আমি এবং ক্রেতারা দ্রুত বাইরে বেরিয়ে যাই।” “এটা আমার জীবনে দেখা সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প,” তিনি যোগ করেন।

ব্যাংককে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। ভূমিকম্পের কারণে ব্যাংককে কিছু মেট্রো ও লাইট রেল পরিষেবা স্থগিত করা হয়েছে। থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন শিনাওয়াত্রা জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন এবং জানান যে, তিনি দক্ষিণাঞ্চলীয় দ্বীপ ফুকেটে তাঁর সরকারি সফর সংক্ষিপ্ত করে জরুরি বৈঠকে যোগ দিয়েছেন।

মিয়ানমারে ভূমিকম্প সাধারণ ঘটনা। ইউএসজিএস-এর তথ্যানুযায়ী, ১৯৩০ থেকে ১৯৫৬ সালের মধ্যে সাগাইং ফল্ট লাইনের কাছে ৭.০ বা তার বেশি মাত্রার ছয়টি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। ২০১৬ সালে, মিয়ানমারের ঐতিহাসিক নগরী বাগানে ৬.৮ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্পে তিনজন মারা যান, এবং বহু প্রাচীন বৌদ্ধ মন্দির ও স্তূপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

মিয়ানমারের শহরগুলোতে অপরিকল্পিত উন্নয়ন, দুর্বল অবকাঠামো, এবং অপর্যাপ্ত দুর্যোগ প্রস্তুতির কারণে দেশটির জনবহুল এলাকাগুলো ভূমিকম্প ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়াও, দেশটির দুর্বল স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা, বিশেষ করে গ্রামীণ অঞ্চলে, ভূমিকম্প পরবর্তী পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।##ছবি/এএফপি

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.