বিশেষ প্রতিনিধি#
শুক্রবার হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে ট্রাম্প এবং জ়েলেনস্কির প্রকাশ্য বিতণ্ডার ঘটনায় শোরগোল পড়েছে বিশ্ব জুড়ে। অনেক ইউরোপীয় নেতাই ইউক্রেনের পাশে দাঁড়িয়েছে। আমেরিকার সঙ্গে ইউরোপের যে সমস্ত দেশের বন্ধুত্ব রয়েছে, মূলত তাঁরাই জ়েলেনস্কিকে সমর্থন করেছেন। এমনকি, ব্রিটেন ইতিমধ্যেই ইউক্রেনকে ২৪ হাজার কোটি টাকার ঋণ দেওয়ার কথা জানিয়েছে। সেই আবহেই এ বার নরওয়ের হাল্টবাক বাঙ্কার্স নামে ওই জ্বালানি কোম্পানি ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ‘বিদ্রোহ’ ঘোষণা করল।
হোয়াইট হাউসে অনুষ্ঠিত বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়, যা বৈঠকটি অকালে সমাপ্তির দিকে নিয়ে যায়। এই ঘটনার পর ইউরোপের নেতারা জেলেনস্কির প্রতি তাদের সমর্থন প্রকাশ করেছেন।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাখোঁ এক্স-এ (পূর্বে টুইটার) পোস্ট করে উল্লেখ করেন, “একজন আগ্রাসী: রাশিয়া। একটি আক্রান্ত জাতি: ইউক্রেন। যারা শুরু থেকেই লড়াই করছেন, তাদের প্রতি সম্মান জানাই। তারা লড়াই করছেন তাদের মর্যাদা, স্বাধীনতা, সন্তানদের ভবিষ্যৎ এবং ইউরোপের নিরাপত্তার জন্য।”
জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস বলেন, “ইউক্রেনীয়দের চেয়ে শান্তি আর কেউ বেশি চায় না।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, “আমরা শুধুমাত্র স্থায়ী শান্তির ওপর কাজ করছি। ইউক্রেনকে আশ্বস্ত করে বলছি, তারা জার্মানি এবং ইউরোপের ওপর নির্ভর করতে পারে।”
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান কাইয়া কালাস মন্তব্য করেন, “আজ পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, মুক্ত বিশ্বের নতুন নেতা দরকার। এটি আমাদের, ইউরোপীয়দের জন্য এক নতুন চ্যালেঞ্জ।” তিনি আরও বলেন, “আমরা ইউক্রেনের প্রতি আমাদের সমর্থন আরো বাড়াব, যাতে তারা আগ্রাসন প্রতিরোধ চালিয়ে যেতে পারে।” পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক জেলেনস্কি ও ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন, “আপনারা একা নন।”
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেইন এবং ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট আন্তোনিও কস্তা যৌথভাবে জেলেনস্কির উদ্দেশে বলেন, “আপনার মর্যাদা ইউক্রেনের জনগণের সাহসিকতাকে সম্মানিত করেছে। শক্ত থাকুন, সাহসী হোন, নির্ভীক হোন। আপনি কখনোই একা নন। আমরা ন্যায়সঙ্গত ও স্থায়ী শান্তির জন্য আপনার সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাব।”
তবে, হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওরবান ট্রাম্পের পক্ষে অবস্থান নিয়ে এক্স-এ পোস্ট করেন, “শক্তিশালী নেতারা শান্তি আনেন, দুর্বল নেতারা যুদ্ধ বাধান। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আজ শান্তির পক্ষে সাহসিকতার সঙ্গে দাঁড়িয়েছেন। যদিও অনেকের জন্য এটি হজম করা কঠিন হয়ে পড়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ধন্যবাদ।”
এই প্রতিক্রিয়াগুলো ইউক্রেনের প্রতি ইউরোপীয় নেতাদের অব্যাহত সমর্থন এবং রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তাদের দৃঢ় অবস্থানকে প্রতিফলিত করে।
এদিকে নরওয়ে জানিয়েছে, এক ফোঁটাও জ্বালানি দেওয়া হবে না মার্কিন নৌবাহিনীর জাহাজগুলিতে! স্পষ্ট জানিয়ে দিল নরওয়ের অন্যতম বৃহৎ তেল এবং জাহাজ কোম্পানি। কেন তারা এমন সিদ্ধান্ত নিল তা-ও স্পষ্ট করেছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কির পাশে থেকেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ‘শিক্ষা’ দেওয়ার কথা বলেছে ওই কোম্পানি। নরওয়ের অন্য জ্বালানি প্রদানকারী কোম্পানিগুলিকেও একই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। অনেকের মতে, বাস্তবে যদি সত্যিই নরওয়ের কোম্পানিগুলি জ্বালানি সরবরাহ বন্ধের সিদ্ধান্তে এক মত হয়, তবে বিপদে পড়তে পারে আমেরিকা।
জেলেনস্কি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য নিয়ে গিয়েছিলেন বিশেষ উপহার। হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে বৈঠক শুরুর আগে সৌজন্য বিনিময়ের সময়েই ট্রাম্পের হাতে উপহার তুলে দেন জ়েলেনস্কি। কিন্তু তার পরের ঘটনাবলি তাঁর পক্ষে যায়নি। ট্রাম্প এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভান্সের সঙ্গে তিনি বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। মাঝপথে বৈঠক থামিয়ে বেরিয়ে যান ওভাল অফিস থেকে। মধ্যাহ্নভোজনও করেননি জ়েলেনস্কি। এ সবের মাঝে তাঁর দেওয়া সেই উপহার ম্লান হয়ে গিয়েছে। যে আশা নিয়ে ওই উপহার নিয়ে গিয়েছিলেন ইউক্রেন প্রধান, তা ব্যর্থ হয়েছে।##সূত্রঃ আনন্দবাজার/ছবি-এক্স
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.